চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচন
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির কেন্দ্রীয় মহাসচিব নারায়ণ রক্ষিতকে নির্বাচনী মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তিনি বিভিন্ন কৌশলে গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী নারায়ণ রক্ষিত গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হুমকি-ধমকির কারণে এক সপ্তাহ ঢাকায় ছিলাম। এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে এসে অন্তরালে প্রচারণা চালাচ্ছি। আমি জীবন শঙ্কায় আছি। তাই উত্তরে প্রচারণায় গেলে বলি দক্ষিণে আছি। আবার দক্ষিণে প্রচারণা চালালে বলি উত্তরে আছি। এভাবে বিভিন্ন কৌশলে শেষ মুহূর্তে প্রচারণা চালাচ্ছি। কোন জায়গায় আছি জানতে পারলে আমাকে অপহরণ করে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে ওরা। তাই গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছি। প্রচারে গেলে বিভিন্ন দিক থেকে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি।’নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং অফিসারের কাছে এসব অভিযোগ জানিয়েছেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে নারায়ণ বলেন, ‘চার দিন আগে রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে দেখা করে হুমকি-ধমকি পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। উনি বলেছেন লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য। প্রচারণার কারণে দিতে পারিনি। লিখিত অভিযোগ দেব।’
নারায়ণ রক্ষিত দাবি করেন, ‘প্রকাশ্যে গণসংযোগসহ প্রচারণা চালাতে না পারলেও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছি। তাঁরা আশ্বস্ত করেছে নীরব ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে আমাকে নির্বাচিত করবেন। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি ৯০ শতাংশ ভোট পাব। আমার কারণে একতরফাভাবে ভোট হচ্ছে না। এবারই প্রথম চেয়ারম্যান পদে ভোট হচ্ছে।’
এর আগে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আশা করেছিলাম আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মাঠ চষে বেড়াবেন। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি এলাকা ছাড়া উনাকে (নারায়ণ রক্ষিত) গণসংযোগ ও প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না। তবে তিনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানে কাল্পনিক ও অরুচিকর এবং অশালীন কথাবার্তা বলছেন। আশা করি বিপুল ভোটে আমি নির্বাচিত হব।’নারায়ণ রক্ষিতের অভিযোগ অস্বীকার করে পেয়ারুল বলেন, ‘প্রস্তাবক ও সমর্থককে অপহরণ করলে এবং হুমকি-ধমকি দিলে উনি (নারায়ণ) থানায় মামলা করেছেন কি না জিজ্ঞাসা করেন। নির্বাচন কমিশন এখন অনেক শক্ত। এসব ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন কি না তা প্রার্থীর কাছে জিজ্ঞাসা করেন। এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী নারায়ণ রক্ষিতের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। এ ছাড়া সহকারী রিটার্নিং অফিসার কামরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনিও ফোন ধরেননি।
নারায়ণ রক্ষিতের নির্বাচনী হলফনামায় দেওয়া স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নে। সেই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কলিমউদ্দিন বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমার দিন নারায়ণ রক্ষিতের সঙ্গে দেখা হয়েছিল শহরে। ওই সময় তিনি বলেছিলেন যোগাযোগ করবেন। কিন্তু এরপর থেকে তাঁর আর কোনো যোগাযোগ নেই।’নারায়ণ রক্ষিতের বাড়ির এলাকার ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নারায়ণকে এলাকায় দেখিনি। এখনো আমাদের কাছে ভোটও চাননি।’
ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছালামত উল্লাহ শাহীন বলেন, ‘উত্তর জেলার আওতাধীন সাতটি উপজেলার মধ্যে আজকে (গতকাল) পর্যন্ত ছয়টিতে এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম গণসংযোগ করেছেন। একজন ভোটার হিসেবে চেয়ারম্যান প্রার্থী নারায়ণ রক্ষিতকে দেখিনি।’
এদিকে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী সদস্য এবং সাধারণ সদস্যদের ১৬টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬৬ জন। এর মধ্যে চারটি সাধারণ ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চারজন। আগামী ১৭ অক্টোবর ভোট নেওয়া হবে