এশিয়ার বাইরের দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলার আকাঙ্ক্ষা জানিয়েছেন কৃষ্ণা রানী
বাংলাদেশের মেয়েদের এশিয়ার বাইরের দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলার আকাঙ্ক্ষা অনেক দিনের। সেই আকাঙ্ক্ষার কথা আজ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে ধরেছেন সাফজয়ী বাংলাদেশ দলের ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার।
প্রধান উপদেষ্টাকে তিনি অনুরোধ করেছেন এশিয়ার বাইরে তাঁদের জন্য একটি প্রীতি ম্যাচের ব্যবস্থা করতে। বিশেষ করে মেয়েদের সর্বশেষ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলার কথা বলেছেন কৃষ্ণা।
সাফজয়ী বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলের সদস্যরা আজ সকালে ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় মেয়েরা সরকারপ্রধানে সামনে তাঁদের নানা স্বপ্ন আর দৈনন্দিন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিজয়ী খেলোয়াড়দের দাবিগুলো মনোযোগের সঙ্গে শুনেছেন প্রধান উপদেষ্টা এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা স্বাগত বক্তব্যে খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে বলেন,‘এই সাফল্যের জন্য আমি গোটা জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের অভিনন্দন জানাই। জাতি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়। আপনারা আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছেন।’
এমন একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অধিনায়ক সাবিনা খাতুন প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে তাঁরা সম্মানিত বোধ করেছেন। সাবিনা বলেন, ‘অনেক বাধা অতিক্রম করে আমরা এই পর্যায়ে এসেছি। এটা শুধু নারী ফুটবল দলই নয়, বাংলাদেশের নারীরা অনেক সংগ্রামের মুখোমুখি হয়।’
একই সঙ্গে সাবিনা বাংলাদেশের নারী ফুটবলে তাঁর আগের প্রজন্মের অবদানের কথা স্মরণ করেন, যাঁরা ফুটবলকে তাঁদের আবেগ হিসেবে নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
সাবিনা বলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে এসেছেন এবং তাঁদের পরিবারকে সমর্থন করার দরকার। ‘আমরা যা বেতন পাই, তা দিয়ে পরিবারকে পর্যাপ্ত সহায়তা করতে পারি না। কারণ, আমরা বেশি কিছু পাই না,’ বলেছেন সাবিনা।
আপনারা যা মন চায়, লিখতে পারেন, দ্বিধা করবেন না। যদি এখন কিছু বলতে চান, সেটাও বলতে পারেন। আমরা আপনাদের দাবি পূরণ করার চেষ্টা করব। এখন যদি কিছু সুরাহা করা যায়, তবে আমরা এখনই তা করব।
সাবিনা তাঁর কয়েকজন সতীর্থের উঠে আসার সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। যেমন মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দা, যিনি উঠে এসেছেন ময়মনসিংহের কলসিন্দুর থেকে। মারিয়া তাঁর বাবাকে হারিয়েছেন ছোটবেলায়। মা তাঁকে লালন–পালন করেছেন। কলসিন্দুর থেকে সাফজয়ী দলে ৬ জন খেলোয়াড় আছেন।
কৃষ্ণা ঢাকায় তাঁদের আবাসনসমস্যার বিষয়টি তুলে ধরেন উপদেষ্টার সামনে। মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত উপজেলা লক্ষ্মীছড়ি থেকে কীভাবে সংগ্রাম করে উঠে এসেছেন, তা তুলে ধরেন। মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী তাঁর উঠে আসার স্থান দিনাজপুর জেলার রানীশংকৈল গ্রামের দুর্বল অবকাঠামোর বর্ণনা দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিটি খেলোয়াড়কে তাঁদের ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম এবং দাবিগুলো আলাদা কাগজে লিখে তাঁর অফিসে পাঠাতে বলেছেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনারা যা মন চায়, লিখতে পারেন, দ্বিধা করবেন না। যদি এখন কিছু বলতে চান, সেটাও বলতে পারেন। আমরা আপনাদের দাবি পূরণ করার চেষ্টা করব। এখন যদি কিছু সুরাহা করা যায়, তবে আমরা এখনই তা করব।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলার ও ম্যানেজার মাহমুদা আক্তার। উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও