রাজধানী ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হওয়ার আলোচনায় যারা প্রায় সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে ঢাকা রেঞ্জ
প্রায় সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন হাবিবুর রহমান। মঙ্গলবার তিনি রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে শেষ অফিস করেন। এরপর থেকেই পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এই পদটি শূন্য। ফলে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির দায়িত্ব কে পাচ্ছেন বাহিনীতে এ আলোচনা এখন সর্বত্র। নতুন ডিআইজি হওয়ার তালিকায় অনেকের নাম আলোচনায় রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৭তম, ১৮তম ও ২০তম ব্যাচের পাঁচজন কর্মকর্তার নাম বেশি আলোচনায় রয়েছে। তাদের মধ্যেই একজন পেতে যাচ্ছেন পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্বটি।
পুলিশের আটটি রেঞ্জের মধ্যে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা রেঞ্জ। এই রেঞ্জের আওতাভুক্ত ১৩টি জেলা, ৯৮টি থানা ও ৪৩টি সার্কেল অফিস রয়েছে।
জানা গেছে, এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনের প্রোফাইল প্রস্তত করা হয়েছে। তাদের নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সরকারপ্রধানের অনুমতি ও স্বাক্ষরের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তবে চলতি সপ্তাহে এবিষয়ে আদেশ জারির সম্ভবনা নেই। বর্তমানে ডিআইজি পদে পুলিশে ৮৪ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
সূত্র বলছে, আগামীবছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে এমন কাউকে রেঞ্জের দায়িত্ব দেওয়া হবে যিনি রাজনৈতিক যেকোনো পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারবেন। তাছাড়া সরকারের যেকোনো নির্দেশনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন, অধিনস্তদের নির্দেশনা দেয়া ও তা বাস্তবায়নে কতটা সফল হবেন— এসব বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ছাত্রজীবনে সরকার দলীয় রাজনৈতিক মতাদর্শ ও পদ-পদবিতে ছিলেন কি না সেটাও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কারও নাম নির্বাচন করা হয়নি। ইতিমধ্যে অনেকেই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে লিয়াজোঁ চালাচ্ছেন।
আলোচনায় যারা
ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে মো. আসাদুজ্জামান বেশি আলোচনায় রয়েছেন। বর্তমানে তিনি পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের এই পুলিশ কর্মকর্তা এবছরের ১১ মে ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পান।
সিটিটিসি প্রধানের দায়িত্ব পালনের আগে তিনি ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ছিলেন। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে ঢাকা বিভাগের অধীনে জেলাগুলোর সব থানায় সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানি কমাতে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হাবিবুর রহমানের (সদ্য ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) নেতৃত্বে ডিআইজি কার্যালয়ের মনিটরিং কার্যক্রম সরাসরি তদারক করতেন। এতে থানায় সেবার জন্য যাওয়া সাধারণ মানুষের হয়রানি অনেকটাই কমে আসে।
তাছাড়া জঙ্গিবাদ দমনেও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় নৃশংস জঙ্গি হামলার পর দেশজুড়ে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। কর্মজীবনে যেখানেই দায়িত্ব পালন করেছেন, রেখেছেন দক্ষতা ও বিচক্ষণতার ছাপ। কর্মক্ষেত্রে ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) পেয়েছেন।
আসাদুজ্জামান বগুড়া ও সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার (এসপি), পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি এবং ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ও সহকারী কমিশনার ছাড়াও গোয়েন্দা বিভাগেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। চৌকস এই কর্মকর্তা যখন বগুড়ার এসপি ছিলেন তখন ওই অঞ্চলকেন্দ্রিক বড় একটি জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।
সৈয়দ নুরুল ইসলাম
ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে শোনা যাচ্ছে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) সৈয়দ নুরুল ইসলামের নাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌর এলাকায় জন্মগ্রহণ করা নুরুল ইসলাম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ২০তম ব্যাচে এএসপি হিসেবে পুলিশে যোগ দেন।
কর্মক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) ছিলেন তিনি। এছাড়া পুলিশের বিশেষ শাখা-এসবির পুলিশ সুপার, ডিএমপির ওয়ারী ও মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারসহ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সর্বকনিষ্ঠ অফিসার হিসেবে পুলিশের ইতিহাসে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
গত বছরের ২ মে সৈয়দ নূরুল ইসলাম অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পান। পরবর্তীতে এবছরের ১১ মে তাকে ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দুইবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। পুলিশের এই কর্মকর্তার বড় ভাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই পৌরসভার মেয়র।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ
রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা প্রধানের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নাম শোনা যাচ্ছে। গত ১৩ জুলাই ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর তিনি ডিবিপ্রধান হন।
ছাত্রজীবনে হারুন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় সর্বসময় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে ২০তম ব্যাচে এএসপি হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। তিনি গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ছিলেন। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগেরে উপ-কমিশনার থাকা অবস্থায় গত বছরের ২ মে হারুন-অর রশীদ অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান। এরপর তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার ছিলেন। পরবর্তীতে এবছরের ১২ মে ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান হারুন। তিনি দুইবার বিপিএম পদক ও দুইবার পিপিএম পদক পেয়েছেন। কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আরও যারা আলোচনায়
ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি ও খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির নাম আলোচনাতে রয়েছে। তাদেরকে ঢাকায় এনে সেখানে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আনোয়ার হোসেন। ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি চট্টগ্রাম রেঞ্জের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৮ সালে ১৭তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
এছাড়াও ঢাকা রেঞ্জের নতুন ডিআইজি হিসেবে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির দায়িত্ব পালন করা ড. খ. মহিদ উদ্দিনের নিয়োগ পাওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। তিনি ১৯৯৮ সালে ১৭তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল থেকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির দায়িত্ব পালন করছেন।