বেনজীর ও র্যাবের ডিজিসহ ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ততার জন্য এ দুজনের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সরকারের এক নির্বাহী আদেশের (নম্বর ১৩৮১৮) আওতায় এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ আদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তির সম্পদ বাজেয়াপ্তের কথা বলা হয়েছে।
রাজস্ব বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে র্যাবকে একটি বিদেশি সংস্থা হিসেবে মার্কিন সরকারের নির্বাহী আদেশের (নম্বর ১৩৮১৮) অধীনে রাখা হয়েছে। এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে র্যাবও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে।
২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেনজীর আহমেদ। আর চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে র্যাবের বক্তব্য জানতে গতকাল রাতে কয়েক দফা এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এবং মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে প্রথম আলো। পরে মুঠোফোনে খুদে বার্তা এবং হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
একইভাবে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) কামরুজ্জামানের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করে প্রথম আলো। তাঁর বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে গতকাল প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। সেখানকার একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। সেটাই তাঁদের বক্তব্য।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি এবং ১০ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চীনের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে জিনজিয়াংয়ে উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কারণে।
বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি ওয়ালি আডেয়েমোর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, এ পদক্ষেপ একটি বার্তা দিচ্ছে যে যারা নিপীড়ন চালাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র কথা বলবে।
‘বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে র্যাবের যে কার্যক্রম, তার বিরুদ্ধে ব্যাপক ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ ও বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতিকে হুমকির মুখে ফেলছে।
মার্কিন দপ্তরটি উল্লেখ করেছে, র্যাব ২০০৪ সালে গঠিত হয়। এর সদস্য হন পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) থেকে আসা সদস্যরা।
বিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) বরাত দিয়ে বলা হয়, র্যাবের বিরুদ্ধে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০০টির বেশি গুম, ২০১৮ সাল থেকে ৬০০ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। কিছু প্রতিবেদন বলছে, এসব ঘটনা বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীদের ওপরও ঘটানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের কারও নামে কিংবা কোনো মার্কিন নাগরিকের জিম্মায় কোনো সম্পদ থেকে থাকলে তা জব্দ হবে। বিষয়টি অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোলকে (ওএফএসি) অবহিত করতে হবে। ওএফএসির বিশেষ অনুমতি বা অন্য কোনো ছাড় না থাকলে মার্কিন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য চিহ্নিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে