রোমানিয়ার স্টুডেন্ট ভিসা ভারতের বিকল্প থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম
রোমানিয়ার স্টুডেন্ট ভিসা
ভারতের বিকল্প থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম
বাংলাদেশে রোমানিয়াসহ ইউরোপের অনেক দেশেরই ভিসা সেন্টার না থাকায় এসব দেশের ভিসা প্রাপ্তি এবং অন্যান্য সেবা গ্রহণ করতে হয় ভারতে গিয়ে। কিন্তু ভারতের ভিসা সেন্টার বন্ধ থাকার কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ইউরোপগামী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং কর্মপ্রত্যাশীদের।
তবে এক্ষেত্রে সুখবর দিয়েছে রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস। এখন থেকে ভারতের পাশাপাশি থাইল্যান্ড এবং ব্যাংকক থেকে ভিসা নিয়ে রোমানিয়া যেতে পারবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।ল
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দিল্লিতে অবস্থিত রোমানিয়া দূতাবাস যেহেতু বাংলাদেশিদের ভিসা ইস্যু করে থাকে, তাই তাদের এখন রোমানিয়ার ভিসা নিতে গেলে দিল্লিতে যেতে হয়। কিন্তু ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান স্থগিত করায় রোমানিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৮০০-৯০০ বাংলাদেশি স্টুডেন্ট অফার লেটার পেলেও ভিসা প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ফলে ভিসা সংকট দ্রুত সমাধানের দাবিতে আবেদন করে রোমানিয়ার ভিসাপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা।
এমতাবস্থায় রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ন্যাশনাল ভিসা সেন্টার, রেক্টরস অ্যাসোসিয়েশনে যোগাযোগ করে ভিসা জটিলতা সমাধানের চেষ্ঠা করে। ফলে বাংলাদেশের কাছাকাছি থাকা থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে রোমানিয়া দূতাবাস থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা দিতে রাজি হয়েছে। ফলে এখন থেকে ভিয়েতনামের হ্যানয় এবং থাইল্যান্ডের ব্যাংকে রোমানিয়া দূতাবাস থেকে ভিসা নিতে পারবে।
এ বিষয়ে রোমানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বছর রোমানিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৮০০-৯০০ বাংলাদেশি স্টুডেন্ট অফার লেটার পেয়েছে।
দিল্লীতে অবস্থিত রোমানিয়া দূতাবাস যেহেতু বাংলাদেশিদের ভিসা ইস্যু করে থাকে, তাই তাদের এখন রোমানিয়ার ভিসা নিতে গেলে দিল্লিতে যেতে হত। কিন্তু ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান স্থগিত করায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২৭৪ জন শিক্ষার্থী সরাসরি আবেদন করেছিল যেন দ্রুত তাদের বিষয়টি সুরাহা করা হয়, কেননা ১লা অক্টোবর থেকে ক্লাস শুরু হবে। এছাড়া অনেকে দূতাবাস ও আমাকে ইমেইলের মাধ্যমে অনুরোধ করেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রপ্তির পরে আমরা রোমানিয়ার বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি। রোমানিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ন্যাশনাল ভিসা সেন্টার, রেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় তারা রোমানিয়ার ভিসা আবেদন করতে পারছে না। এমতাবস্থায়, তারা যেন বাংলাদেশ থেকে কাছাকাছি অবস্থিত তাদের ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) ও হ্যানয় (ভিয়েতনাম) দূতাবাস থেকে ভিসা প্রদান করে। তারা রাজি হয়ে আজ নোট ভার্বাল ইস্যু করেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ভারতের পাশাপাশি এখন থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে অবস্থিত রোমানিয়ার দূতাবাস থেকেও ভিসা নিতে পারবে।
দীর্ঘদিন যদি ভারতের ভিসা বন্ধ থাকে তাহলে শ্রমিকদের ভিসার দায়িত্ব উক্ত দুটো দেশে অবস্থিত রোমানিয়ার দূতাবাসের উপর যেন দেয়া হয় সে অনুরোধও করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কাজ চলমান বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, রোমানিয়ার মতো বুলগেরিয়ায় ভর্তিচ্ছু প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীদের ভিসা নিয়ে একই সমস্যা হয়েছে। এ ব্যাপারে বুলগেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে এ সপ্তাহেই বসছে দূতাবাস এবং একই রকম সমাধান বের করার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে দূতাবাস সূত্র।
এর আগে এর আগে গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর ৭ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম স্থগিত করে ভারত। এতে দেশটিতে যেতে বিপাকে পড়তে হয় বাংলাদেশিদের।
একারণে ভিসা জটিলতা দ্রুত সমাধানের দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও শ্রমিকরা। তারা বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসার আবেদনগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পূর্ণরূপে চালু করার আহ্বান জানায় এবং বৈধ কারণ ছাড়া কোনো বাংলাদেশি ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান না করার অনুরোধ জানায়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানান, যেহেতু ইউরোপের অনেক দেশে বাংলাদেশে দূতাবাস নেই, তাই তারা ভিসা ও অন্যান্য সেবার জন্য দিল্লির দূতাবাসের ওপর নির্ভরশীল। ভারত বর্তমানে ভিসা ইস্যু না করায়, তারা পড়াশোনা বা কাজের জন্য এই দেশগুলিতে ভ্রমণ করতে অক্ষম, এবং ভিসা ফি এবং টিউশন পেমেন্টের জন্য ফেরত পেতেও লড়াই করতে হচ্ছে তাদের।
তারা বলেন, আমরা ৮০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী রোমানিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার পাওয়ার পর ভিসার জন্য আবেদন করেছি। তাদের মধ্যে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী এক বছরের টিউশন ফি বাবদ ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা জমা দিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট।
এদিকে ভিসা আবেদন করার জন্য আমাদের দিল্লিতে রোমানিয়ান দূতাবাসে একটি ভাইভাতে যোগ দিতে হবে। যদি আমরা ভাইভাতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হই, আমরা ভিসা পাব না। এজন্য দ্রুত বিষয়টি সমাধান করার দাবি জানান তারা