কমলার বর্ণচ্ছটায় ম্লান ট্রাম্প

কমলার বর্ণচ্ছটায় ম্লান ট্রাম্প

কমলার বর্ণচ্ছটায় ম্লান ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী বছরে ‘লেবার ডে’ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। শ্রমিক আন্দোলনের স্মরণে সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার দিবসটি পালিত হয়। ভোটের বছরে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নিয়ে এ দিবসের প্রাক্কালে যেসব নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ প্রকাশিত হয়, তারই প্রতিফলন দেখা যায় দুই মাস পরে অনুষ্ঠিত নভেম্বরের নির্বাচনে। সাধারণত ওই সব জরিপ সত্যি হয়ে থাকে।

এবারের লেবার ডে’তে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বর্ণচ্ছটায় ম্লান হয়ে পড়েছেন তাঁর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজ দলে তো বটেই, আমেরিকাজুড়েই দারুণ প্রাণবন্যা সৃষ্টি করেছেন কমলা। জনমত জরিপে যেমন তিনি এগিয়ে, তেমনি নির্বাচনী  তহবিল সংগ্রহেও ট্রাম্পকে বহু পেছনে ফেলেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে প্রতিবছরই শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা দেখা যায়। তবে এবার দুই মাসে আগেই প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। জরিপের ভিত্তিতে পত্রিকাটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, কমলা হ্যারিস নির্বাচনে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন।

পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ওপর কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রাধান্য বজায় রাখার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা নভেম্বরে হোয়াইট হাউস দখলে নেওয়ার জন্য রণক্ষেত্র রাজ্যগুলোতে যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছেন। দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর ওপর টেলিগ্রাফের জরিপের ভিত্তিতে প্রথমবারের মতো এ ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।

টেলিগ্রাফের জন্য সাতটি দোদুল্যমান রাজ্যে রেডফিল্ড অ্যান্ড উইল্টন স্ট্র্যাটেজিস পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, কমলা পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন এবং মিশিগান রাজ্যে জয়ী হবেন। এতে তাঁর প্রয়োজনীয় ইলেক্টোরাল কলেজ প্রতিনিধিদের সমর্থন নিশ্চিত হবে। জয়ী হলে আমেরিকার ইতিহাসে কমলাই হবেন প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। 

যুক্তরাষ্ট্রে ভোটারদের মোট ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। প্রেসিডেন্টকে নির্বাচন করেন ইলেক্টোরাল কলেজ প্রতিনিধিরা। নির্বাচনে জয়ী হতে কোনো প্রার্থীকে অবশ্যই কমপক্ষে ২৭০ জন প্রতিনিধির সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। টেলিগ্রাফের জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্পের ওপর কমলা সংকীর্ণ বিজয় পেতে যাচ্ছেন। ট্রাম্প ২৬২টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন বলে জরিপে দেখা গেছে।

পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, কমলা হ্যারিস ২০২০ সালে জো বাইডেনের মতো একই পথে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করবেন। মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় ‘রাস্ট বেল্ট’ রাজ্যগুলোর সমর্থনের ওপর নির্ভর করে তিনি পৌঁছে যাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ভবনে। অন্যদিকে, ট্রাম্প ‘সান বেল্ট’খ্যাত দোদুল্যমান রাজ্য অ্যারিজোনা, জর্জিয়া এবং উত্তর ক্যারোলাইনায় জয়লাভ করবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
জরিপে দেখা যাচ্ছে, বাইডেন গত ২১ জুলাই প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের পর বেশির ভাগ দোদুল্যমান রাজ্যে ট্রাম্পের অবস্থান সংকুচিত হয়েছে। কমলা হ্যারিস এ ধরনের সাতটি রাজ্যেই ইতিবাচক রেটিং পেয়েছেন।

তবে ট্রাম্পের সম্ভাবনা একদমই নেই, তাও কিন্তু বলা যাচ্ছে না। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া এবং উত্তর ক্যারোলাইনা এবং জর্জিয়া রাজ্যে জিততে পারলে তিনিও ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেতে পারেন। 

তবে জনমত জরিপ বলছে, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। গত সপ্তাহে প্রকাশিত রয়টার্স/ইপসোস জরিপে দেখা যায়, কমলার জনসমর্থন ৪৫ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪১ শতাংশ। জুলাইয়ের শেষ দিকে রয়টার্স বা ইপসোস জরিপে নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে কমলা মাত্র ১ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। 

নারী এবং হিস্পানিক ভোটাদের মধ্যে কমলা বেশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর সমর্থন ৪৯ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৩৬ শতাংশ। কমলা ১৩ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। জুলাই মাসে পরিচালিত রয়টার্স বা ইপসোসের চারটি জরিপে কমলা নারীদের মধ্যে ৯ পয়েন্ট এবং হিস্পানিকদের মধ্যে ৬ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।

তবে শ্বেতাঙ্গ এবং পুরুষদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। জুলাইয়ে তিনি ১৪ পয়েন্টে এগিয়ে থাকলেও সর্বশেষ সমীক্ষায় তাঁর প্রতি সমর্থন ৭ পয়েন্টে কমেছে। 
নারী ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ক্রমশ কমছে। এ নিয়ে দলটির নেতারা উদ্বিগ্ন। হিলের প্রতিবেদনে বলা হয়, রিপাবলিকানরা নারী-পুরুষ ভোটারদের নিয়ে এক জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। দলটির জরিপকারী হুইট আইরেস বলেন, বড় নেতৃত্বের জন্য নারীদের মধ্য থেকে কমলার উঠে আসা ট্রাম্পের জন্য ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ হতে চলেছে। তিনি সতর্ক করেন, রিপাবলিকানদের জন্য এ মুহূর্তে আসল চ্যালেঞ্জ হলো নারীদের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ানো।

গত রোববার প্রকাশিত এবিসি নিউজ/ইপসোস জরিপে দেখা গেছে, কমলা হ্যারিস নারীদের মধ্যে ট্রাম্পের চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। তিনি ৫৪ শতাংশ মার্কিন নারীর সমর্থন পেয়েছেন; ট্রাম্প পেয়েছেন ৪১ শতাংশের। তবে পুরুষদের মধ্যে কমলার চেয়ে ট্রাম্প ৫ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। ট্রাম্পকে ৫১ শতাংশ ‍পুরুষ ভোটার সমর্থন করেন; ৪৬ শতাংশ কমলাকে সমর্থন করেছেন। এ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক জাতীয় সম্মেলনের পর নারীদের মধ্যে কমলার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। 

ট্রাম্পের জন্য আরও দুঃসংবাদ
কমলা হ্যারিসের প্রচারণা টিম জুলাই মাসে ২০.৪ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে বলে ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের তথ্যে দেখা যায়। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে চার গুণ বেশি অর্থ পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে কমলার হাতে নগদ আছে ২২ কোটি ডলার। ট্রাম্পের কাছে আছে ১৫.১ কোটি ডলার।

সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান লিজ চেনি প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ওয়াইমিংয়ের এই সাবেক আইনপ্রণেতা উত্তর ক্যারোলাইনার মতো রাজ্যে কমলার পক্ষে ভোট দেওয়ার গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। চেনির ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, তিনি উত্তর ক্যারোলাইনার কথা বিশেষভাবে ঘোষণা করেছেন এ কারণে, এটি একটি রণক্ষেত্র রাজ্য।

এভাবে কমলার বিপরীতে দিন দিনই ধরাশায়ী হওয়ার পর এবার ট্রাম্প তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে বেপরোয়া আক্রমণ শুরু করেছেন। তিনি কমলাকে কমিউনিস্ট বলে আখ্যা দিয়েছেন। ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে নিজের একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, ‘কমরেড কমলা হ্যারিস আমাদের দেশের জন্য ভয়ানক, একেবারে ভয়ানক। তিনি একজন কমিউনিস্ট, সর্বদাই কমিউনিস্ট ছিলেন এবং সর্বদাই কমিউনিস্ট