পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এ বিবৃতির প্রতিবাদ আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। এরই মধ্যে রোববার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন সাংবাদিক নেতারা

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এ বিবৃতির প্রতিবাদ আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। এরই মধ্যে রোববার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন সাংবাদিক নেতারা
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এ বিবৃতির প্রতিবাদ আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। এরই মধ্যে রোববার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন সাংবাদিক নেতারা
প্রথম সময় ডেস্ক:
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এ বিবৃতির প্রতিবাদ আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। এরই মধ্যে রোববার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন সাংবাদিক নেতারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বিএফইউজে—বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ডিএমপি কার্যালয়ে গতকাল রোববার দুপুরে এই বৈঠক হয়।

বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, কারও ব্যক্তিগত অপরাধ বা দুর্নীতির দায় কোনো বাহিনী বা সংগঠনের ওপর বর্তায় না। সেটি পুলিশের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, তেমনি সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও। পুলিশ ও সাংবাদিক যাঁর যাঁর পেশাগত অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করে যাবেন। কোনো পক্ষ থেকে এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে গণমাধ্যম ও পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র থেকে এ বিষয়গুলো জানা গেছে।

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের উদ্যোগে এই বৈঠক হয় বলে জানা গেছে। তবে বৈঠকে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন না। অবশ্য বৈঠকে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা সাংবাদিক নেতাদের বলেছেন, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এ বৈঠকের বিষয়ে অবগত রয়েছে।

বৈঠকে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান ছাড়াও ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, খন্দকার আল মুহিত, মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন

গত শুক্রবার পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া) ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আংশিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঢালাও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের অনুরোধ করা হয়।

একই সঙ্গে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের প্রতিবেদনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো তথ্যসূত্রের উল্লেখ নেই। তথ্যসূত্রবিহীন বাস্তবতাবিবর্জিত অতি কথিত এ ধরনের প্রতিবেদন পেশাদার সদস্যদের মনোবল ক্ষুণ্নের পাশাপাশি পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। পলাতক সাইবার সন্ত্রাসীদের অনুপ্রেরণায় পুলিশের পেশাদার ভূমিকাকে জনসমক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ করে পুলিশকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য কতিপয় গণমাধ্যম অত্যন্ত সচেতনভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে একধরনের কুৎসিত প্রচারযজ্ঞে শামিল হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই বিজ্ঞপ্তির পর গত শনিবার বিএফইউজে ও ডিইউজে একটি যৌথ বিবৃতি দেয়। এই বিবৃতিতে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে যেকোনো নেতা বা সংগঠনের নেতা যে ভাষায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাংবাদিকদের বড় কাজ হচ্ছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যে তথ্য গোপন রাখতে চান, তা অনুসন্ধান করে বের করা এবং পেশাদারত্বের সঙ্গে জনগণকে বিস্তারিত জানানো। আশার কথা, ইতিমধ্যে প্রভাবশালী মহল সম্পর্কে কিছু তথ্যভিত্তিক খবর প্রকাশিত হয়েছে।

গতকাল ডিএমপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে বলছে, পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাহিনীর কারও অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ বা প্রচার বন্ধের পক্ষে নন তাঁরা। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে সাংবাদিকেরা যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন, এটি তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। তাই এই ভুল–বোঝাবুঝি যেন আর না বাড়ে, সে জন্যই সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে এই বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁদের মনে হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে দেশে ও দেশের বাইরের একটি চক্র সত্যতা নেই, প্রমাণ নেই, এমন অনেক সংবাদ প্রকাশ করছে এবং ভিডিও তৈরি করে প্রচার করছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, সাংবাদিক নেতারা বলেন, পেশাদার সাংবাদিকেরা কোনো দিন অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন করেননি, করবেনও না। পুলিশ বাহিনীতে যেমন কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রয়েছেন, তেমনি সৎ, নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাও অনেক আছেন। পেশাদার গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো সংবাদে যদি ভুল তথ্য প্রকাশ হয়ে যায়, তাহলে পুলিশ সেটি জানাতে পারে, প্রতিবাদ দিতে পারে।