ই উ এন ও। এবং ওসিদের বদলি শুরু
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ধাপের এই বদলির আদেশে আজ সোমবার সম্মতি দিয়েছে ইসি।
৩৩ ও ৩৪ বিসিএসে নিয়োগপ্রাপ্ত এই ৪৭ ইউএনও তাদের বর্তমান কর্মস্থলে দুই বছর মেয়াদ পূরণ করেছেন বলে জনপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
প্রথম ধাপে চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গামাটি সদর, রাজস্থলী, বান্দরবানের লামা, খাগড়াছড়ি সদর, পানছড়ি, কক্সবাজারের পেকুয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও চাঁদপুরের হাইমচরের ইউএনও বদলি হচ্ছেন।
ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ সদর, ভৈরব, পাকুন্দিয়া, নারায়ণগঞ্জের বন্দর, গাজীপুরের শ্রীপুর, কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া, ঢাকার সাভার, ধামরাই, নরসিংদীর রায়পুরা, টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ফরিদপুরের ভাঙ্গার ইউএনও বদলি হচ্ছেন।
খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা সদর, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, সাতক্ষীরা সদর ও যশোরের ঝিকরগাছার ইউএনও বদলি হচ্ছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগের বদলি হচ্ছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, তারাকান্দা, নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ, আটপাড়া ও জামালপুর সদর উপজেলার ইউএনও।
সিলেট বিভাগে বদলি হচ্ছেন হবিগঞ্জের বাহুবল, চুনারুঘাট, সিলেটের ওসমানীনগর, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের ইউএনও।
রাজশাহী বিভাগের নওগাঁর বদলগাছী, সাপাহার, জয়পুরহাট সদর, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, পাবনার ভাঙ্গুড়া ও সাঁথিয়ার ইউএনও।
রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম সদর ও পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ইউএনওর বদলি হচ্ছে প্রথম ধাপে।
ইউএনওদের একই বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে
দেশের সব ইউএনও এবং ওসিদের পর্যায়ক্রমে বদলির নির্দেশে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্তম্ভিত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তে ওসি-ইউএনওদের সঙ্গে বেকায়দায় পড়েছেন ডিসি এবং এসপিরাও। তবে ইউএনও-ওসিদের পাশের জেলায় অর্থাৎ বিদ্যমান কর্মস্থলের কাছাকাছি জেলায় বদলির চিন্তা চলছে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিভাগের ৮৯ উপজেলার ইউএনওর মধ্যে ৪৯ জন এক বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগের ৩৫ ইউএনওর মধ্যে এক বছরের বেশি সময় কর্মরত ১৫ জন। বরিশালে ৪২ ইউএনওর মধ্যে ১২ জন, সিলেটে ইউএনও ৪১ জনের মধ্যে ২১, রংপুরে ৫৮ জনের ১৭, রাজশাহীতে ৬৭ জনের মধ্যে ২৭, চট্টগ্রামে ১০৪ জনের মধ্যে ৪৮ এবং খুলনা বিভাগে ৫৯ জনের মধ্যে ১৮ এক বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন বলে মাঠ প্রশাসনের একাধিক ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারের অফিস সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব তথ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনে পাঠাবে। কিন্তু কোন কর্মকর্তাকে কোথায় বদলি করা হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ইউএনওদের বদলি সাধারণত বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় করে। কিন্তু এই সময়ে সেটা কমিশনারের অফিস করবে নাকি মন্ত্রণালয় করবে তা নিশ্চিতভাবে কেউ জানাতে পারেননি।
নির্বাচন কমিশন ও সরকারের দায়িত্বশীর সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওসিদের মতো ইউএনওদের বেলাতেও ছয় মাসের বেশি সময় দায়িত্ব পালনকারীদের বদলির কথা প্রস্তাব করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কমপক্ষে এক বছর করতে বলার পর ইউএনওদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়। তবে এই সিদ্ধান্তে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা খুশি হননি। তারা বলছেন, নির্বাচন উপলক্ষে বিশেষ কারণে কিছু বদলি হবে, এমন ধারণা তাদের ছিল। কিন্তু দেশের সব ইউএন-ওসিদের বদলির সিদ্ধান্তে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের অন্তত ছয় জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে ডেইলি স্টারের। যদিও এ বিষয়ে তাদের কারও নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করার সুযোগ নেই।
উত্তরবঙ্গের একটি জেলার ডিসির কাছে মাঠ প্রশাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, 'নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সেভাবেই দায়িত্ব পালন করব। কিন্তু সব উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী মূল কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক বদলির সিদ্ধান্ত কতটা বিবেচনাপ্রসূত হয়েছে তা হয়তো মূল্যায়নের দাবি রাখে।'
এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, সব জেলার ডিসিরাই তাদের ইউএনওদের দিয়ে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করিয়েছেন। কোন উপজেলার ইউএনওর সক্ষমতা কেমন সে বিষয়ে তাদের ধারণা আছে। কিন্তু নতুন যারা আসবে তাদের নিয়ে আস্থার সঙ্গে পরিকল্পনা সাজাতে বেগ পেতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ সুপার (এসপি) ডেইলি স্টারকে বলেন, নির্বাচনের এত কাছাকাছি সময়ে এভাবে স্থানীয় প্রশাসনের মূল কর্মকর্তাদের বদলিকে গ্রহণযোগ্য বলা কঠিন। ওসিদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ আছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে নির্বাচন কমিশন যেভাবে চাইবে আমরা সেভাবেই দায়িত্ব পালন করব।
নির্বাচনের মাত্র একমাস আগে স্থানীয় প্রশাসনের এমন পরিবর্তন আদৌ কার্যকর করা যাবে কিনা এমন সংশয়ও প্রকাশ করেছেন দু-একজন কর্মকর্তা। প্রায় তিন বছর ইউএনওর দায়িত্ব পালন করছেন এমন এক কর্মকর্তা জানান, প্রথম ধাপের বদলি কার্যকর করতেই অন্তত চলতি মাসের প্রথমার্ধ চলে যাবে। এরপর আবারো বদলির প্রক্রিয়া চলতে থাকলে নির্বাচন পরিচালনার পরিকল্পনা, চলমান কার্যক্রম তদারকি কতটা সুন্দরভাবে করা যাবে তা নিয়ে সংশয় থাকবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার একজন ওসির মন্তব্য জানতে চাইলে ডেইলি স্টারকে বিরক্তির সুরে বলেন, 'এমন সিদ্ধান্তের কোনো মানেই হয় না। লোক দেখানো স্বচ্ছতার জন্য এতগুলো মানুষকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। বিএনপি নির্বাচনে না আসলে এত স্বচ্ছতা কাকে দেখানো হবে বুঝতে পারছি না।'
'আগে থেকে বদলির ধারণা থাকলে কিছুটা প্রস্তুতি নেওয়া যেত' উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, যেকোনো একটি এলাকায় গেলে স্থানীয় অবস্থা, পথ-ঘাট বুঝতে অন্তত একমাস সময় লাগে। এছাড়া বাসা পাল্টানো, সন্তানদের স্কুল-পরীক্ষার বিষয়গুলো চিন্তা করা উচিত।'
ঢাকার পাশের এক জেলায় কর্মরত ওসি বলেন, নির্বাচন কমিশন যা চাইবে আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে। আপাতত কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া পুলিশের চাকরির বৈশিষ্ট্যই এটা। দেখা যাক কী হয়।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মাজহারুল ইসলামের মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
হঠাৎ কেন সিদ্ধান্ত
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মাঠ প্রশাসনে বদলি হবে বলেই জানানো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ কী এমন হলো যে, স্থানীয় প্রশাসনের এক হাজারের বেশি কর্মকর্তাকে বদলির সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এ ব্যাপারে একাধিক ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে কথা বললে তারা বিশেষ কোনো কারণ আঁচ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। তবে, নির্বাচন কমিশন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মূলত দুই কারণে এমন সিদ্ধান্তের কথা ধারণা করা হচ্ছে। প্রথমত নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে মাঠ প্রশাসনে বড় পরিবর্তন দেখানো। এতে সরকারের সাজানো প্রশাসনে নির্বাচন হচ্ছে না, সেটা বোঝানো যাবে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা দৃশ্যমান করা। কমিশনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে সমালোচনা হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে কমিশনের ভূমিকা দৃশ্যমান হবে বলে মনে করছেন দায়িত্বশীলরা। অপর একটি সূত্র জানায়, মাঠ প্রশাসনে এত বড় পরিবর্তনের রেকর্ড নেই। শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা, সেই সংশয়ও রয়েছে অনেকের মধ্যে।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও অতিরিক্ত সচিব এস এম আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, তফশিল ঘোষণার পর এসব বিষয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যায়। নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইসি যেটা ভালো মনে করবে সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই