বাংলাদেশে ভোট দিতে গিয়ে ইউএনওকে ‘স্টুপিড’ বললেন মেয়র
ভোট দিতে গিয়ে ইউএনওকে ‘স্টুপিড’ বললেন মেয়র
বরিশাল: জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে কেন্দ্রে দায়িত্বরত বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামানের বাকবিতণ্ডা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে একসঙ্গে একাধিকজনকে নিয়ে প্রবেশ না করার জন্য ইউএনও সতর্ক করতে গেলে এ বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় ইউএনও’র ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন মেয়র। এক পর্যায়ে তাকে ‘স্টুপিড’ বলেন সেরনিয়াবাত।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে বরিশাল জিলা স্কুল কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ফেসবুক পেইজের লাইভ ভিডিও থেকে জানা গেছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সকাল ৯টার দিকে ভোট দিতে ওই কেন্দ্রে যান মেয়র সেরনিয়াবাত। এ সময় তার সঙ্গে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বরিশাল জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এ.কে.এম জাহাঙ্গীর হোসাইন, বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নইমুল হোসেন লিটু, রফিকুল ইসলাম খোকন, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্না ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনিসহ বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ছিলেন। ভোট কক্ষে প্রবেশের গেটে সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আলম অনুরোধ করেন যেন একাধিক ভোটার নিয়ে ভোট কক্ষে প্রবেশ না করেন।
এরপর ভোট কক্ষের সামনে পৌঁছলে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরুজ্জামান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে একাধিক ভোটার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।’ এ সময় মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ ইউএনও’র উদ্দেশ বলেন, ‘আমি কি ঢুকছি এখানে? আমি কি ঢুকছি? কেন সিনক্রিয়েট করতেছেন? আপনি কে? আমি কি ঢুকছি? তারপরও আপনি কথা বলতেছেন। আমি কি শিশু? স্টুপিডের মতো কথা বলেন।’
তিনি বলতে থাকেন, ‘যেভাবে ভাবটা করেন তাতে বুঝা যায় দল বাইধা ঢুকতেছি। ভোটার হইছে ১৭৪ জন। তাহলে সমস্যা কোথায় আপনাদের?’ তখন কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্না পাশ থেকে বলেন, ‘এখানে সবাই ভোটার, আপনি চেনেন না। আপনে বরিশালে মনে হয় নতুন।’
এ সময় এ.কে.এম জাহাঙ্গীর ইউএনওকে বলেন, ‘উনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র। আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।’ এ সময় ইউএনও বলেন, ‘চেয়ারম্যান মহোদয় আমি আপনাদের চিনি। আমি এমন কিছু বলিনি।’
এক পর্যায়ে ক্ষোভ ঝেড়ে মেয়র সাদিক ইউএনওকে বলেন, ‘আমি তো ভেতরে ঢুকিনি। আসার পর থেকে আপনারা বলতেছেন। ফাইজলামি করেন আপনারা। আপনে কানে কথা শোনেননি।’ তখন ইউএনও মনিরুজ্জমান মেয়রকে বলেন, ‘আপনাকে কিছু বলিনি স্যার।’
পরে ইউএনও মনিরুজ্জমানকে নিবৃত্ত করেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এ.কে.এম জাহাঙ্গীর হোসাইন। আর এই পুরো ঘটনা সিটি মেয়রের ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভ করা হয়। লাইভে ভোট কক্ষের ভেতরের চিত্রও দেখা গেছে।
যদিও বরিশাল সদর উপজেলা ইউএনও মনিরুজ্জামান বাকবিতণ্ডার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়র সেরনিয়াবাতের সঙ্গে আমার বাকবিতণ্ডার খবর সঠিক নয়।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে মেয়র সেরনিয়াবাতকে সাদিক আব্দুল্লাহকে ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে বরিশাল সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, ‘ভোট কক্ষে ফেসবুক লাইভ করার কোনো বিধান নেই।’
প্রসঙ্গত, উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট রাতে সাবেক উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের সঙ্গে বিরোধে জড়ান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ। এ সময় গুলি বর্ষণের ঘটনাও ঘটে। এতে পাল্টাপাল্টি তিনটি মামলা হয়