বাংলাদেশে কারফিউ জারি করা হলো
কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের নজিরবিহীন সংঘাত যেন থামছেই না। কোন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এতো কম সময়ের মধ্যে একশোর বেশি মানুষ নিহত হবার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো ঘটেনি।
বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিংবা সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জন্য কারফিউ জারি করা নতুন কোন বিষয় নয়। সহিংসতা যখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায় তখন তা নিয়ন্ত্রণের সর্বশেষ উপায় হিসেবে কারফিউ বিবেচনা করে সরকার।
সর্বশেষ কারফিউ জারি করার ঘটনা ঘটেছিল ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। সেটিও হয়েছিল ছাত্র বিক্ষোভ দমনের জন্য।
গত মঙ্গলবার থেকে শুরু করে শুক্রবার পর্যন্ত দেশজুড়ে নজিরবিহীন এই সংঘাত শুধু তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। প্রতিদিনই বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা।
ভবন দখল করলো দুষ্কৃতিকারীরা। পুলিশ, বিজিবি সেটা ঠেকাতে পারলো না। এটা তো বড় ধরনের ব্যত্যয় বলে আমি মনে করি,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন সাবেক পুলিশ প্রধান একেএম শহিদুল হক।
তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মনে করছেন, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যর্থ হয়নি। বিবিসি বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, চলমান সহিংসতা থামানো এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো রক্ষা করার জন্য সরকার কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছে।
“সেজন্যই বলা হয়েছে ইন এইড অব সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায়)। তারা মোটেও ব্যর্থ হয় নাই। আমাদের কথা হচ্ছে, যেভাবে তারা কেপিআইগুলো (গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) ধ্বংস করেছে এবং জনগণের ট্যাক্স-এর টাকায় যেসব স্থাপনা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য করা হয়েছে, সেগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেগুলোকে রক্ষা করার জন্য আমরা এটা (কারফিউ) দিতে বাধ্য হয়েছি,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী বলছেন, যারা কোটা বিরোধী আন্দোলন করছে তারা এই সহিংসতার সাথে সম্পৃক্ত নয়। তারা এটা পরিষ্কারভাবে এই কথা জানিয়ে দিয়েছে। আমাদের কাছে আরো পরিষ্কার হয়েছে যে এটা কিছু রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসীরা তাদের নেতাদের উস্কানিতে করছে।
“সহিংসতা বন্ধ করার জন্য এবং জনগণের জানমাল রক্ষা করার জন্য যেটা করার দরকার আমরা সেটা করেছি। আমরা আশা করছি কারফিউ দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবো,” বলেন আইনমন্ত্রী।
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, গত কয়েকদিনের সংঘাতের কারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়েছে।
“এতো পুলিশ, এতো র্যাব, এতো বিজিবি – সব নামানোর পরেও সরকার যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, সেজন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে বলে আমি মনে করি,”
র্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যদিও ঢাকার কয়েকটি জায়গায় পুলিশের সাথে সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু সেটির তীব্রতা বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারের মতো ছিল না।
কারফিউ জারি করা হলেও পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে কতটা শান্ত হবে সেদিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকের।
“এখন যে কারফিউ জারি করা হয়েছে, এর মাধ্যমে কি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে? হয়তো সাময়িক স্বস্তি আসতে পারে। কিন্তু বিষয়টা তো আর শুধু ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই,” বলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাখাওয়াত হোসেন।
এদিকে কারফিউ ভঙ্গ করা হলে সেটির শাস্তি সম্পর্কে মনে করিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ কারফিউ আইন ভঙ্গ করে বাইরে আসলে, তার এক বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।