বাংলাদেশে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: এক আগুনে শেষ পুরো পরিবার

বাংলাদেশে  বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: এক আগুনে শেষ পুরো পরিবার
বাংলাদেশে  বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: এক আগুনে শেষ পুরো পরিবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: এক আগুনে শেষ পুরো পরিবার

১০ মার্চ ইটালি ফিরে যাবার কথা ছিল। সে মতে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে শুক্রবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসারের। মায়ের অপেক্ষা ছিল তাদের বাড়িতে আসার। মোবারক বাড়ি ফিরছেন ঠিকই, তবে নিথর দেহে। স্ত্রী, তিন সন্তানও নিথর দেহে তার সঙ্গী হয়েছেন।

রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের মোবারক হোসেন কাউসারসহ একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

Nagad_Ad

নিহতরা হলেন ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার (৪৫), তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৩৫), দুই মেয়ে সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া (১৫) ও সৈয়দা আমেনা আক্তার নূর (১২) এবং ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ (৭)।

তাদের বাড়ি সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর গ্রামে। তারা ঢাকার মগবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

জানা গেছে, সৈয়দ মোবারক হোসেন ইতালির সাবুনা শহরে ব্যবসা করতেন। সেখানে ৪টি কসমেটিক দোকান পরিচালনা করতেন। তার বড় মেয়ে সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সৈয়দা আমেনা আক্তার নূর ইস্পাহানী স্কুলে এবং সৈয়দ আব্দুল্লাহ মগবাজারের একটি মাদরাসায় লেখাপড়া করতেন।

গতকাল শুক্রবার তাদের গ্রামের বাড়িতে আসার কথা ছিল। ফিরেছেন তবে লাশ হয়ে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে একে একে তাদের লাশ বাড়ির উঠানে নামানো হয়। এসময় বাড়িতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

নিহতদের স্বজনরা জানান, সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মগবাজারে থাকতেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়া ভবনটিতে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন। সেখানেই আগুনে পুড়ে তাদের মৃত্যু হয়।

এদিকে নিহতদের মরদেহ বাড়িতে আনার পর বাদ আসর খন্দকার মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে।

স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, ইতালিতে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার। পরিবারের সকলেরও ভিসা হয়েছিল। চলতি মাসে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু পুরো পরিবার আর ইতালিতে পাড়ি জমানো হলো না। সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয়।

নিহত মোবারকের খালাতো ভাই আলমগীর হোসেন জানান, মোবারক প্রথমে সিঙ্গাপুর প্রবাসী ছিলেন। ২০ বছর আগে তিনি ইতালি পাড়ি দেন। তার দেশে আসা যাওয়া ছিল। গত দেড় মাস আগে ইতালি থেকে দেশে ফিরেন মোবারক। স্ত্রী-সন্তানদের ইতালি নিয়ে যাওয়ার জন্য ভিসা ও টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন। আগামী ২০ মার্চ ইতালিতে যাওয়ার দিন নির্ধারিত করেছিলেন।

নিহত মোবারকের স্বজন মো. ফয়সাল বলেন, ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল পরিবারটি। ভিসাও হয়েছিল। পরিবারের সকলে খেতে যাওয়াটাই কাল হলো। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন অপূরণীয় রয়ে গেলো। ওই পরিবারে আর কেউ বেঁচে রইল না।

নিহত সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসারের শ্বশুর একই গ্রামের মুন্সী বাহার উদ্দিন জানান, তার মেয়ের জামাই মোবারক ঢাকার মগবাজার এলাকায় থাকতেন। তার মেয়ে স্বপ্না আক্তার, দুই নাতনি সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া ও সৈয়দা

আমেনা আক্তার নূর এবং একমাত্র নাতি সৈয়দ আব্দুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে রাতের খাবার খেতে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখান অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সবাই পুড়ে মারা গেছেন। পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।