রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার সুপারিশ ইউপি সদস্যের!
পাঁচ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার সুপারিশ ইউপি সদস্যের!
ফরিদপুরের সালথায় পাঁচ রোহিঙ্গার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) আবেদনে শনাক্তকারী হয়ে সিল ও স্বাক্ষর করে সুপারিশ করায় এক ইউপি সদস্যকে অপসারণ করা হয়েছে। ওই ইউপি সদস্যের নাম তাপস কুমার হোড় (৪৯)। তিনি সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় বিভাগের ইউপি-১ শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পূরবী গোলদার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড়ের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনে শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর ও সিল প্রদান করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় জেলা প্রশাসক ফরিদপুরের প্রস্তাব মোতাবেক স্থানীয় সরকার বিভাগের গত ২৫ নভেম্বর প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কেন তাকে চূড়ান্তভাবে অপসারণ করা হবে না পত্র পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক ফরিদপুরের মাধ্যমে এ বিভাগকে জানাতে বলা হয়। ওই সদস্যের দেওয়া কারণ দর্শানো নোটিশ সন্তোষজনক না হওয়ায় জেলা প্রশাসক ওই সদস্যের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(৪)(খ)(ঘ) ধারার অপরাধ করায় তার বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন। ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড় ইউনিয়ন পরিষদের উল্লিখিত ধারায় অপরাধ করায় একই আইনের ৩৪(৫) ধারা মোতাবেক তাকে স্বীয় পদ থেকে অপসারণ করা হলো।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সালথা নির্বাচন অফিসে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য পাঁচ রোহিঙ্গাদের আবেদনের একটি বিষয় জানাজানি হয়ে গেলে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে করে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের আবদেনপত্রে সনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন ওই ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড়। এ কারনে ওই ইউপি সদস্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত ২০২৩ সালেরর গত ১০ সেপ্টেম্বর অভিভাবকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বাংলাদেশীয় জন্ম সনদ ও নাগরিক সনদ দিয়ে ভোটার হওয়ার জন্য সালথা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের খোরশেদ আলীর মেয়ে দিলদারা বেগম, মনিরুল ইসলামের ছেলে নূর মোস্তফা, খোকন মিয়ার ছেলে হাফিজুর রহমান, কালা মিয়ার মেয়ে বুশরা বেগম ও আব্দুল মানিকের ছেলে নূর বশার। তবে উল্লেখিত নামে ফুলবাড়িয়া গ্রামের কাউকে পাওয়া যায়নি
আবেদনে তারা যে জন্ম সনদগুলি জমা দেন, সেগুলো সব কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা। তাদের নামে গত ১০ সেপ্টেম্বর বল্লভদী ইউনিয়ন থেকে নাগরিক সনদ দেওয়া হয়। এতে স্বাক্ষর করেন ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুজ্জামান। জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনপত্রে সনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন বল্লভদী ইউপির আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাপস কুমার হোড়।
অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ, ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান, ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড় ও করিম টেলিকমের সত্ত্বাধিকারী করিম বাওয়ালীর সহায়তায় পাঁচ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রস্তুতি নেন তারা। তবে জাল জালিয়াতির এ বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। পরে ইউএনওর নির্দেশে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওই পাঁচটি আবেদন বাতিল করে দেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিচুর রহমান বলেন, তদন্তে এ জালিয়াতির ঘটনায় ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড়ের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, তবে এ ঘটনায় অন্য কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ সংক্রান্ত প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে