বিএনপির এবারের বিভাগীয় সমাবেশে স্থানীয় প্রশাসনের ভিন্ন আচরণ? ফারহানা পারভীন
রাজনীতি: বিএনপির এবারের বিভাগীয় সমাবেশে স্থানীয় প্রশাসনের ভি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপি সম্প্রতি তিনটা সমাবেশ করেছে দেশের তিনটি বিভাগীয় শহরে।
এসব সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
যদিও এর আগে বিএনপি তাদের সমাবেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকারের নেতাকর্মী এবং পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে।
এবারে প্রশাসন থেকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হলেও যানবাহন বন্ধ করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে।
একদিকে, সরকার- বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন, অন্যদিকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে যাতে নেতাকর্মীরা সমাবেশে না যেতে পারে। কেন তাদের এই পরস্পর-বিরোধী আচরণ?
আরও পড়তে পারেন:
বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে গতকাল শনিবার খুলনাতে সড়ক এবং জলপথ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।
এর আগে হঠাৎ করে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে শুক্রবার থেকে সব ধরনের বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
মাঝিদের ধর্মঘটের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয় রূপসা ঘাট ও জেলখানা ঘাটে যাত্রী পারাপার।
এই দুটি ঘাট শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু এই ধর্মঘট সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় জনসভায়।
পুলিশের তরফ থেকেও খুব একটা বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেনি।
লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন এটা সরকার একটা কৌশল পরিবর্তন করেছে বলে তিনি মনে করছেন।
"এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। নানা রকম চাপের মধ্যে আছে সরকার। নানা দিক থেকে সিগনাল আসছে এভাবে চলবে না। তাই তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে," তিনি বলেন।
তবে এর আগে সমাবেশগুলোতে দেখা গেছে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে স্থানীয় প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক বাধার মুখে পড়েছে বিএনপি।
এমনকি কিছু কিছু স্থানে ১৪৪ ধারাও জারি করতে হয়েছে।
এখন একদিকে যেমন বিরোধী এই রাজনৈতিক দলটিকে সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে, আবার একই সঙ্গে যানবাহন বন্ধ করে সমাবেশে যোগদানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে।
লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, "এখানে একটা জিনিস বোঝা যায় যে এত মানুষ যে আসছে তারা সবাই বিএনপির না, সাধারণ মানুষ আছে। তারা কিন্তু বিএনপির প্রতি ভালোবাসা থেকে আসছে না। তারা এই রেজিম চেঞ্জ চায়। এবং এই রেজিম চেঞ্জের ব্যাপার যখন আসে তখনই সরকারি দল আতঙ্কিত হয়।"
আরো পড়ুন:
বিএনপি তাদের বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ শুরু করে চট্টগ্রাম দিয়ে।
সেখানে বিপুল মানুষের সমাগম হয়। এর পরের সমাবেশটি হয় ময়মনসিংহে।
সেখানে যানবাহন বন্ধ থাকার আশঙ্কায় বিএনপির নেতাকর্মীরা আগের দিনেই ময়মনসিংহ শহরে অবস্থান নেয়।
সমাবেশের দিনেও সেখানে পরিবহন বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু সমাবেশে কোন আপত্তি তোলা হয় নি প্রশাসন থেকে।
শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক রওনক জাহান বলেন সরকারের এই কর্মকাণ্ডকে তিনি পরস্পর বিরোধী মনে করছেন না।
তিনি বলেন "সরকার দেখতে চাচ্ছে বিরোধীরা কতটা শক্তিশালী অবস্থায় আছে। একটা কৌশল হবে বিরোধী দল একটা করবে, সরকারি দল আরেকটা করবে। কাজেই প্রথমেই সব কিছু বন্ধ করে দেয়ার যৌক্তিকতা তারা দেখছেন না। এখানে পরস্পর বিরোধী কোন কিছু দেখছি না।"
এর আগে সেপ্টেম্বরে বিরোধীদল বিএনপি অভিযোগ করে, তারা যতগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে, তার বেশির ভাগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার তারা হয়েছে।
বিএনপির নেতারা আরও অভিযোগ করছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েই বিরোধী দলের আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছে।
বিএনপির চলমান কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে তাদের সমর্থিত পরিবহন মালিক সমিতি দিয়ে কৃত্রিমভাবে শহরকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করছে।
সরকারি দল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন এই তিনটি সমাবেশে যে সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছে, সেটা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য হুমকি।
"তারা নিজেরাও চিন্তা করেনি যে বিএনপির মত নেতৃত্বহীন একটা দল এত লোক জোগাড় করতে পারবে। পলিটিকাল সরকার হিসেবে তাদের জন্য এটা যে একটা থ্রেট তাতে কোন সন্দেহ নেই," বলছেন মি. হোসেন।
"নির্বাচনের বাকি আছে এক -দেড় বছর। এর মধ্যে যে বিএনপিকে ধরা হয়েছিল যে পার্টি কোমর-ভাঙা হয়ে গেছে, যে পার্টির কোন উদ্দেশ্য নেই, সেই দল এমনভাবে ঘুরে দাঁড়াল- এটা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে দেখা হচ্ছে যে সরবকারের পলিসির বিরুদ্ধে প্রচুর গণসমাবেশ হচ্ছে," বলেন তিনি।
বিএনপির পরের সমাবেশ রয়েছে রংপুরে। বিএনপি খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ চারদফা দাবিতে সমাবেশ করছে।