পর্যটকদের জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে ইতালির ভেনিস শহর

পর্যটকদের জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে ইতালির ভেনিস শহর
প্রথম সময় অনলাইন ডেস্ক:

পর্যটকদের জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে ইতালির ভেনিস শহর

ইটালির পর্যটন শহর ভেনিসে ভ্রমণ করতে হলে আগামী বছর থেকে নতুন নিয়ম মানতে হবে। সেক্ষেত্রে পর্যটন কর এবং এর আওতা বাড়ানো হয়েছে।

গত বছর থেকেই ভেনিস শহরে পর্যটকদের লাগাম টানতে প্রবেশ ফি চালু করেছিলো ইটালি। তাদের ওই সিদ্ধান্তে সফল হওয়ায় এ বছর তারা সেই প্রবেশ ফি আরও বাড়িয়েছে।

এমনটাই জানিয়েছেন সাগরে ভাসমান হাজাস বছরের পুরনো পর্যটন শহর ভেনিসের মেয়র।

মেয়র লুইগি ব্রুগনারো বলেন, তাদের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্য হচ্ছে, “ভেনিসকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়া।

ভেনিসে পর্যটকদের ভীড়
ক্যাপশান,ভেনিসে পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকে।

ডে ট্রিপার, অর্থাৎ যারা দিনের বেলা শহর ভ্রমণ করার জন্য আগে থেকেই বুকিং করেন, তারা যদি এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু দিনে শহর ভ্রমণ করতে চান, সেক্ষেত্রে তাদেরকে পাঁচ ইউরো করে গুণতে হবে।

তবে কেউ যদি অন্তত চারদিন আগে বুকিং না করেন, সেক্ষেত্রে তাদের ১০ ইউরো করে লাগবে।

চলতি বছরের এপ্রিল থেকেই ভেনিস নগর কর্তৃপক্ষ প্রবেশ ফি চালু করেছিলো। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও সরকারি ছুটির দিন মিলে চার মাসে মোট ২৯ দিন এই তালিকায় ছিল।

প্রতি শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত এবং ২০২৫ সালের ১৮ই এপ্রিল থেকে ২৭শে জুলাইয়ের মধ্যকার ছুটির দিন, মোট ৫৪ দিনের জন্য কর প্রযোজ্য হবে।

ভেনিসে পর্যটকদের ভীড়

মোবাইল ফোন ব্যবহারের জন্য ১৪ বছরের বেশি বয়সী সব দর্শকদের টাকা দিতে হবে এবং পরিদর্শকদের দেখানোর জন্য একটি কিউআর কোড ডাউনলোড করতে হবে।

ট্রেন স্টেশনের মতো বিভিন্ন জায়গায় পর্যটকদের পরিচয় বা টিকেট যাচাই করবেন ওই পরিদর্শকরা।

যাদের টিকেট থাকবে না, তাদের ক্ষেত্রে জরিমানা হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।

তবে পূর্বের মতো এবারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে হোটেল বা গেস্ট হাউজে যারা থাকবেন, তারা এই নিয়মের বাইরে থাকবেন। আবার, ভেনেটো অঞ্চলের বাসিন্দারা বা ভেনিস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও যাদের আত্মীয়রা ভেনিসে থাকেন, তাদের জন্যও এই প্রবেশ ফি প্রযোজ্য হবে না।

সিটি কাউন্সিলর সিমোন ভেনতুরিনি বলেন, “পর্যটকদের অতিরিক্ত ভীড়ের জন্য ভেনিস শহর অনেক সমালোচনার শিকার হয়েছে।”

ভেনিস শহর ভ্রমণে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ ভীর করে।

ইতালি’র সংবাদমাধ্যমের মতে, গত এপ্রিলের প্রথম আট দিনে ভেনিস কর্তৃপক্ষ যেমনটা আশা করেছিলো, তেমন্টাই আয় করেছিলো। বলা ভালো, ওই সময়ে তাদের তিন মাসের সম পরিমাণ আয় হয়েছিলো।

জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে যখন ভেনিস কর্তৃপক্ষের ট্রায়াল পিরিয়ড শেষ হয়, তখন তাদের মোট প্রবেশ ফি’র পরিমাণ ছিল দুই দশমিক চার মিলিয়ন ইউরো।

তবে মেয়র ব্রুগনারো বলেন যে এই প্রকল্পের বাজেট পুরোপুরি সামাল দেওয়া যাবে কি না, তা বোঝার জন্য তার আরও বিশ্লেষণ প্রয়োজন এবং সেজন্য তার আরও অপেক্ষা করতে হবে।

ইতালিয়ান সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, টিকেট বুকিং প্ল্যাটফর্ম ও এই প্রকল্প বা উদ্যোগ গ্রহণের পর সেটির প্রচার বাবদ সরকারের খরচ প্রায় তিন মিলিয়ন ইউরো।

রাতের ভেনিস নগরী।
ক্যাপশান,রাতের ভেনিস নগরী।

ভেনিসের বিরোধী কাউন্সিলর জিওভান্নি আন্দ্রেয়া মার্টিনি জুলাই মাসে বলেন, শহরে প্রবেশ ফি’র এই ব্যবস্থাটি একটি ব্যর্থ প্রকল্প। কারণ এটি পর্যটকদের প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করেনি।

তিনি আরও বলেন যে প্রবেশ ফি পাঁচ ইউরো থেকে বাড়িয়ে ১০ ইউরো করার সিদ্ধান্ত “অকার্যকর” এবং এটি "ভেনিসকে একটি যাদুঘরে পরিণত করবে"।

গত বছর ইউনেস্কো বলেছিলো, ভেনিসকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় যুক্ত করা উচিৎ, কারণ জলবায়ু পরিবর্তন এবং পর্যটকদের চাপে এখানে বড়সড় কোনও পরিবর্তন ঘটতে পারে।

বিশেষ করে ২০২১ সালে পোতাশ্রয়ে (জাহাজের আশ্রয়স্থল) একটি জাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর গিউডেকা খাল দিয়ে ভেনিসের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে বড় জাহাজ প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।

সমালোচকরা সেসময় আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যে জাহাজগুলো দূষণ ঘটাচ্ছে এবং শহরের ভিত্তি ক্ষয় করছে। যার ফলে ভেনিস নিয়মিত বন্যার শিকার হয়।