আবু ত্ব-হা আদনান: ইসলাম বিষয়ক এই বক্তার খোঁজ মেলার পর পুলিশ এবং তার পরিবার যা বলছে
আবু ত্ব-হা আদনান: ইসলাম বিষয়ক এই বক্তার খোঁজ মেলার পর পুলিশ এবং তার পরিবার যা বলছে
আদনান
বাংলাদেশে সাত দিন আগে নিখোঁজ হওয়া ইসলাম বিষয়ক বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের খোঁজ মেলার পর তাকে রংপুর পুলিশের হেফাজতে রেখে শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং রাতে আদালতে নেয়া হয়।
মি. আদনান ও তার সহকর্মীদের আদালতে জবানবন্দী নেবার পর রাতেই নিজেদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মি: আদনানের ফিরে আসার খবর পেয়ে রংপুর শহরে তার প্রথম পক্ষের শ্বশুরবাড়িতে পুলিশ গিয়ে তাকে দেখতে পায় এবং সেখান থেকে তাকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, মি: আদনান ব্যক্তিগত কারণে আত্নগোপনে গিয়েছিলেন।
এদিকে, তার ফিরে আসার পর তাকে বেশ অসুস্থ মনে হয়েছে বলে তার একজন আত্মীয় জানিয়েছেন।
মি: আদনানের সাথে নিখোঁজ আরও তিনজনেরও একইসাথে খোঁজ পাওয়া গেলে তাদেরকেও পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
গত ১১ই জুন ভোর রাতে রংপুর থেকে ঢাকা আসার পথে তারা নিখোঁজ হয়েছিলেন বলে পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল।
আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল
রংপুর মহানগর পুলিশের অপরাধ বিভাগের উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেছেন, মি: আদনান আত্নগোপনে থাকার পর শুক্রবার তিনি স্বেচ্ছ্বায় ফিরেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই তথ্য পান।
"তার (মি: আদনান) ব্যক্তিগত কারণে তারা নিজেরাই আত্নগোপনে ছিল। এটা আমরা এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছি," বলছেন পুলিশ কর্মকর্তা মি: হোসেন।
"সে (মি: আদনান) তার ব্যক্তিগত কারণটা আমাদের বলেছে। সেটা তার নিজের জীবনকে কেন্দ্র করে হতে পারে-তার পরিবারকে কেন্দ্র করেও হতে পারে। কিন্তু আইনগত কারণে তার ব্যক্তিগত কারণটা সবার সামনে বা সমাজে বা মিডিয়ায় আমরা প্রকাশ করতে পারি না।"
মি: আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা তুলে ধরে পুলিশ তার আত্নগোপনে যাওয়া এবং স্বেচ্ছ্বায় ফিরে আসার কথা বলেছে।
এ ব্যাপারে মি: আদনানের কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি। কারণ তার খোঁজ পাওয়ার পর পরই তাকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়।
তার মামা সিরাজুল ইসলাম রংপুর থেকে টেলিফোনে বিবিসিকে বলেন, তার ভাগ্নে উদ্ধার হওয়ার পর তাকে দেখে বেশ অসুস্থ মনে হয়েছে তার।
"আমরা জানতে পারলাম যে উনাকে (মি: আদনান) পাওয়া গেছে। এর পরেই শুনতে পেলাম তিনি তার শ্বশুরবাড়িতে আছেন। তখন আমরা ঐ বাড়িতে গিয়ে তাকে দেখি। তার শরীর একটু খারাপ ছিল," বলেন মি: ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, "সে (মি: আদনান) অসুস্থ ছিল। তখন তার সাথে কথা বলবো চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু অসুস্থাতার কারণে কথা বলা হয়নি। পাশে বসেছিলাম। এরই মাঝে পুলিশ গিয়ে তাকে নিয়ে যায়।"
শুক্রবার তার খোঁজ মেলার পর রংপুরের পুলিশ জানায়, মি: আদনান রংপুর শহরে তার প্রথম পক্ষের শ্বশুরবাড়িতে ফিরেছেন, দুপুর দু'টার দিকে- পুলিশ এমন খবর পেয়ে ঐ বাসায় গিয়ে তাকে সেখানে পায়।
তখন ঐ বাসা থেকে তাকে স্থানীয় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মি: আদনান নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর মা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী রংপুর থানায় আলাদা আলাদা দু'টি জিডি করেছিলেন। পরিবারের এই জিডিগুলোতে তার নিখোঁজ হওয়ার কারণ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবেকুন নাহার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এবং পুলিশ ও র্যাবের প্রধানদের বরাবরে চিঠি লিখেছিলেন মি: আদনানের সন্ধান চেয়ে।
মি: আদনানের খোঁজ পাওয়ার পর সাবেকুন নাহারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান তার দু'জন সহকর্মী এবং গাড়ির চালকসহ চারজন নিখোঁজ হয়েছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বাকিরাও একইসাথে আত্নগোপন থেকে ফিরে রংপুরেই বিভিন্ন এলাকায় তাদের নিজেদের বাড়িতে যান। চারজনকেই এরপর পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আবু মারুফ হোসেন বলেছেন, চারজন মিলে রংপুরের পাশে গাইবান্ধা জেলার ত্রিমোহণী এলাকায় তাদের একজন বন্ধুর বাসায় ছিলেন।
"তারা নিজেদের গোপন করার জন্য ডিজিটাল সব সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। সেইসাথে অন্য কারও সাথেও তারা স্বশরীরে বা অন্য কোনভাবে কোন যোগাযোগ রাখেনি। সেকারণে আমরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারি নি। তারা গাইবান্ধায় ত্রিমোহনীতে ছিল" বলে জানান মি: হোসেন।
কিন্তু মি: আদনান নিখোঁজ হওয়ার পর তার মোবাইলে ট্রেস করার কথা পুলিশ বলেছিল। তখন রংপুর পুলিশের পক্ষ থেকেই বলা হয়েছিল যে, ঢাকার কাছাকাছি জায়গা থেকে মোবাইল ডিসকানেক্টেড হয়ে গেছে। তারপর আর তার খোঁজ মিলছিল না। তাহলে গাইবান্ধায় কীভাবে চলে গেলো?
এই প্রশ্নে পুলিশ কর্মকর্তা আবু মারুফ হোসেন বলেন, "তারা ঢাকা গিয়েছিল। ঢাকা থেকে মোবাইল বন্ধ করে তারা রাতেই ঢাকা গেছে, আবার ওখানে ফিরে এসেছে।"
রংপুরের পুলিশ রাতে জানিয়েছে তাদের এখন পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হলেও গোটা বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন