‘আ. লীগ স্বাধীন বাংলাদেশকে পরাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল’

‘আ. লীগ স্বাধীন বাংলাদেশকে পরাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল’
নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আ. লীগ স্বাধীন বাংলাদেশকে পরাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ডক্টর শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশকে পরাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করার সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে। ভারত বাংলাদেশে সেবা দাস সরকার প্রতিষ্ঠা করে এ দেশ থেকে সব কিছু নিয়ে গেছে। কখনো গোপন চুক্তির মাধ্যমে আবার কখনো লুট করে। আওয়ামী লীগ আর অল্প কিছুদিন দেশের ক্ষমতায় থাকতে পারলে, স্বাধীন বাংলাদেশকে দেউলিয়া ঘোষণা করিয়ে ছাড়ত।

আর এই সুযোগে ভারত বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত করত।

গতকাল শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর সূত্রাপুর দক্ষিণ থানার উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ ও আমাদের করণীয় শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কেবল মন্দির-গির্জা ভাঙে না, মুসলমানের মসজিদও ভাঙে, মসজিদের ভেতরেও আওয়ামী লীগের হাতে মানুষ নিরাপদ নয়। আওয়ামী লীগের পা-চাটা দালাল রুহুল আমীনকে শেখ হাসিনা বায়তুল মোকাররমের খতিব নিয়োগ দিয়েছিলেন।

কিন্তু শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুহুল আমীনও পালিয়ে গিয়ে গোপালগঞ্জে ঢুকে পড়ে। এবং মসজিদে আর ইমামতি করতে আসেনি। পরবর্তীতে তাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও সে জবাব দেয়নি। এতে ইসলামি ফাউন্ডেশন নতুন খতিব নিয়োগ করে।

তিনি আরো বলেন, ‘নতুন খতিব নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গেই পূর্বের খতিব অব্যাহতি পেয়ে যান। কিন্তু আওয়ামী লীগের ওই দালাল রুহুল আমিন শুক্রবার গোপালগঞ্জের একদল সন্ত্রাসী নিয়ে এসে বায়তুল মোকাররমে মিম্বার দখল নিয়ে নিজেকে এখনো বায়তুল মোকাররমের খতিব দাবি করেন। উপস্থিত মুসল্লিরা প্রতিবাদ করলে, তার নির্দেশে সহযোগী সন্ত্রাসীরা মসজিদের ভেতরেই মুসল্লিদের রক্তাক্ত করে।’ তিনি ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অনতিবিলম্বে কথিত ইমাম রুহুল আমিনকে ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীদেরকে আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

রুহুল আমীন সাহেবের পলাতক নেত্রী খুনি হাসিনা বলে চট করে দেশে ঢুকে যাবে।

তাই রুহুল আমীনও চট করে মিম্বার দখল দিতে চেয়েছে উল্লেখ করে ড. মাসুদ আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক বা ক্ষমতার বাইরে থাকুক সমান তালে মানুষ হত্যা করে। মানুষ হত্যা আওয়ামী লীগের পুরনো ইতিহাস। গত ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নির্দেশে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এখন চোর অপবাদে মানুষ হত্যা করে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগ উঠে পড়ে লেগেছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আটক ৫ জনের মধ্যে ৪ জনই ছাত্রলীগের। সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে স্বাধীনতার পায়ে শিকল বেঁধে দিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর মানুষকে স্বাধীনমত প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। যখনই কেউ মতপ্রকাশ করতে চেয়েছে তার কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। গুম করে কাউকে আয়না ঘরে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে, কাউকে গুম করে নাড়িভুঁড়ি কেটে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ করা ও স্বাধীন রাষ্ট্রকে পরাধীন করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ফলে ভারতের সেবা দাস সরকার ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচারের নামে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা নিজেও জানে সে ও তার পরিবার যেই অপকর্ম করেছে তাতে এ দেশের নাগরিক হিসেবেও তাদের থাকার অধিকার নাই। সেজন্য শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের লোকজন বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। এসব সম্পদ জনগণের সম্পদ। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পেলে সব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’

উপস্থিত বাংলা বাজার ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ড. মাসুদ বলেন, ‘এই বাংলা বাজার পুস্তক প্রকাশনা ও জ্ঞান বিতরণের ভাণ্ডার। কিন্তু এখানকার বহু ব্যবসায়ীকে ফ্যাসিবাদী হাসিনার সরকার জেল-জুলুম, নির্যাতন করেছে শুধুমাত্র দোকানে কোরআন, হাদিস ও তাফসীরের বই থাকার অপরাধে। আওয়ামী লীগ ইসলামকে বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করে হিন্দুত্ববাদী ভারত প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। তবে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ইসলাম প্রিয় শান্তিকামী মানুষ তাদের অপচেষ্টা নসাৎ করে দিয়েছে।’

সূত্রাপুর দক্ষিণ থানা আমীর দাইয়ান সালেহিনের সভাপতিত্বে ও অফিস সম্পাদক সালেহ আল ইমতিয়াজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য সূত্রাপুর-ওয়ারী-গেন্ডারিয়া জোনের সহকারী পরিচালক কামরুল আহসান হাসান, ৪৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী লুৎফুর রহমান, সূত্রাপুর দক্ষিণ থানার সাবেক আমীর ও শ্যামপুর-কদমতলী জোনের টিম সদস্য মাওলানা নেছার উদ্দিন, সূত্রাপুর উত্তর থানা আমীর রবিউল ইসলাম, জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাফওয়ান আহমেদ, সেক্রেটারি আব্দুর রহমান। সভা শেষে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় ও আহতদের আরোগ্য কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মোখলেছুল মোফাসসিরিন মাওলানা আবু হানিফ নেছারী