৪ হাজার টনের জাহাজের ধাক্কাও সামলাতে পারবে।
৪ হাজার টনের জাহাজের ধাক্কাও সামলাতে পারবে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, সেতুর নকশা প্রণয়নের সময় ধরে নেওয়া হয়েছে যে এই নদী দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টন সক্ষমতার নৌযান চলাচল করবে। ফলে চার হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন নৌযানও সেতুর পিলারে ধাক্কা লাগতে পারে—এমনটা বিবেচনায় নিয়েই নকশা করা হয়। অর্থাৎ চার হাজার টনের জাহাজ আঘাত করলেও সেতুর মূল ভিত্তি বা পুরো অবকাঠামোর মৌলিক কোনো ক্ষতি হবে না। পদ্মা নদীতে চলাচলকারী ফেরিগুলো এক হাজার টনের আশপাশের। এ জন্য ফেরির আঘাত সেতুর জন্য বড় কোনো বিষয় নয়। জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, লঞ্চের শুক্রবারের ধাক্কায় পদ্মা সেতুর ক্ষতি হয়নি। নৌযানের ধাক্কা সামলানোর মতো করেই এর নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌযানটি উল্টে যায়নি। এমনটা হলে বড় দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হতো। কারণ, নদীতে এখন স্রোত ব্যাপক। এ অবস্থায় দুর্ঘটনা মানেই প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা।
পদ্মা সেতুর মূল সেতু (নদীর অংশ) ৪১টি স্টিলের স্প্যান দিয়ে জোড়া দেওয়া হয়েছে। এসব স্প্যান বসেছে ৪২টি পিলারের মধ্যে। এক পিলার থেকে অন্য পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। নদীর পানি থেকে প্রায় ১৮ মিটার উঁচু পদ্মা সেতুর তলা। পানির উচ্চতা যতই বাড়ুক না কেন, এর নিচ দিয়ে পাঁচতলার সমান উচ্চতার যেকোনো নৌযান সহজেই চলাচল করতে পারবে।
ভূমিকম্পের বিয়ারিং-সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্বে রেকর্ড করেছে পদ্মা সেতু। এই সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের’ সক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্র জানায়, পুরো সেতুটি পদ্মা সেতুটির মূল কাঠামোর উচ্চতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সমান। এর মূল কারণ, সেতুর ভেতর দিয়ে রেললাইন আছে।
সড়ক ও রেললাইন একসঙ্গে থাকলে সেতু সাধারণত সমান হয়। না হলে ট্রেন চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পদ্মা নদীর পানির প্রবাহ পরিবর্তন হয়। কখনো মাওয়া প্রান্তে, কখনো জাজিরা প্রান্তে সরে যায়। আবার মাঝখান দিয়েও স্রোত প্রবাহিত হয়। এ জন্য নৌযান চলাচলের পথ সব স্থানেই সমান উচ্চতায় রাখার জন্য এভাবে নকশা প্রণয়ন করা হয়। ফলে সেতুর নিচ দিয়ে যেকোনো স্থানে সহজেই নৌযান চলাচল করতে পারবে। তবে নাব্যতা থাকা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সেতুর নিজের নাব্যতা নিরূপণ করে নৌপথ ব্যবহারের দায়িত্ব অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে মাস্টারের অসতর্কতা ছিল। তিনি জানান, সেতুর কোন স্থান দিয়ে ফেরি যাবে—এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পথ নেই। মাস্টাররা দেখে-শুনে চালাবেন—এটাই নির্দেশনা। এখন বলে দেওয়া হয়েছে, স্রোত বেশি যে স্থানগুলোতে, সে স্থান এড়িয়ে কম স্রোতের এলাকায় চলাচল