ভয়ে মারা যাওয়ায় কোনো পৌরুষ নেই— কর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ভয়ে মারা যাওয়ায় কোনো পৌরুষ নেই— কর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল
ঢাকা: বিএনপির কর্মীদের উদ্দেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আপনাদের ত্যাগ এ দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়, আমাদেরকে রাজপথে আরও তীব্র তীব্র তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু বন্ধুগণ আমরা জানি…। বারবার করে আমাদের কবিরা বলেছেন, মানুষের মৃত্যু হয় একবার, দুইবার না। ভয়ে মারা যাওয়ায় কোনো পৌরুষ নেই। ভয়ে মারা যাওয়ার চেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই একমাত্র কাজ। আর এ কাজে সব সময় তরুণরা এগিয়ে এসেছে। আমার মতো বৃদ্ধরা এখন এ কাজ পারবে না।’
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৯ জুন) বিকালে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকের সমাবেশের মূল লক্ষ্য খালেদা জিয়ার মুক্তি। জিয়াউর রহমান যখন নিজের জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখন দুই শিশু সন্তানসহ গ্রেফতার হন বেগম খালেদা জিয়া। স্বামী যুদ্ধের ময়দানে, স্ত্রী বন্দি। তাই আমি বলি, বেগম জিয়া দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নয়, এ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারেও তার প্রধান ভূমিকা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে (বেগম খালেদা জিয়া) আটক করে নিয়ে যায়। তার কয়েকদিন আগে তিনি বলেছিলেন- আমাকে আটক করা হতে পারে। আপনারা রাজপথ ছেড়ে যাবেন না, যতদিন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হবে ততদিন সংগ্রাম চলবেই।’
বিজ্ঞাপন
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দেশের কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংকগুলো লুট করে টাকা বিদেশে পাচার করছে। স্তম্ভিত হই, যখন দেখি সাবেক সেনাপ্রধান গণতন্ত্র ধ্বংস করার সঙ্গে জড়িত। সাবেক পুলিশ প্রধান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। এরকম আজিজ, বেনজীর ও মতিউর হাজার হাজার আছে। আজকে বড়বড় রাঘব বোয়ালকে ধরা হচ্ছে না। অথচ গণতন্ত্রের মাকে ৬ বছর যাবত বন্দি করে রাখা হয়েছে। এখনও সময় আছে বেগম জিয়াকে মুক্তি দেন। নতুবা যেকেনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন।’
ভারতের সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘চুক্তি নিয়ে শুধু বিএনপি নয়, দেশের আইন, পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, এটি অসম চুক্তি। আমরা পানি চাই। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা চাই।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ’২৮ অক্টোবর আমরা আন্দোলনের ফসল ঘরে আনতে পারি নাই। কারণ, আমাদের মৃত্যু ভয় ছিল। মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, পাকিস্তানীদের থেকে মুক্ত হয়েছি দিল্লীর দাসত্ব করার জন্য নয়। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকতে পারে, প্রভু নয়। আজকে আওয়ামী লীগ ভারতের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
আব্বাস বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে। চোর-ডাকাতরা মুক্তি পেলেও তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না। চিকিৎসকরাও বলেছেন, এদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয়। অথচ সরকার বলছে তিনি ভালো আছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমরা তার চিকিৎসার দাবি করছি না। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। খালেদা বন্দি মানে গণতন্ত্র বন্দি। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে মুক্তি পাবে গণতন্ত্র।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম ও ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসসহ অনেকে।