বাংলাদেশে নতুন নির্বাচনের আহ্বান
৬ আন্তর্জাতিক সংগঠনের বিবৃতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিয়ে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ছয়টি নাগরিক সংগঠন। এ আহ্বান জানিয়ে আজ শুক্রবার একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনগুলো। বিবৃতিতে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এই নির্বাচন যথাযথ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক—কোনোটিই হয়নি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসমূহ ও আন্তর্জাতিক নির্বাচনী মানদণ্ড মেনে এই নির্বাচন হয়েছে কি না, সে বিষয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। যৌথ বিবৃতি দেওয়া সংগঠনগুলো হলো এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল), ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন (সিআইভিআইসিইউএস), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ), এশিয়ান ডেমোক্রেসি নেটওয়ার্ক (এডিএন), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট (অস্ট্রেলিয়া) ও অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএএন)। সংগঠনগুলো বলেছে, এমন বহু খবর ও তথ্য-প্রমাণ আছে, যেগুলো নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন ব্যাপক অনিয়মের চিত্র দেয়। এর মধ্যে ভোটারদের চাপ প্রয়োগ এবং ভোটের ফলাফলে কারচুপির মতো বিষয়ও রয়েছে। এগুলো গুরুতরভাবে গণতন্ত্রের মূল নীতিসমূহ ক্ষুণ্ন করে। নির্বাচন সামনে রেখে বেপরোয়াভাবে বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ এবং রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের ঘটনা ছিল উদ্বেগজনক। ভয় দেখানো, পরোয়ানা ছাড়া হয়রানি, মিথ্যা অভিযোগে বহু মানুষকে আটক এবং বিরোধী রাজনীতিক ও তাঁদের সমর্থকদের ওপর পরিচালিত সহিংসতা একটি বিশৃঙ্খল নির্বাচনী পরিবেশের চিত্র দেয়—যা কর্তৃপক্ষের নিপীড়নের কারণেই সম্ভব হয়ে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোদেশজুড়ে বিরোধী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ধারপাকড় করে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা শুধু সরকারপন্থী দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে রক্ষিত হয়েছে। পক্ষান্তরে বিরোধী নেতা-কর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ক্ষেত্রে এসব মৌলিক অধিকার প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকভাবে সীমিত রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্র মঞ্চসহ প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পক্ষপাতমূলক অবস্থান, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সুস্পষ্ট পক্ষপাত এবং বিরোধী নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়নের কারণে তারা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। একই ধরনের উদ্বেগ ও বিষয়াবলির কারণে প্রার্থী একটি বড় অংশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। অধিকন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়াতেই বহু অনিয়মের খবর রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। যেখানে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা জোরজবরদস্তি, বলপ্রয়োগ বা ভয়ভীতি দেখিয়ে বুথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভোটদান প্রক্রিয়া নিজেদের ইচ্ছেমতো পরিচালিত করে বিশেষ প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দিতে গেছে। এ ছাড়া ব্যালটে সিল মারা, ভুয়া ভোট নেওয়া এবং এমনকি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেওয়ানোর জন্য অপ্রাপ্তবয়স্কদের ভাড়া করা হয়। নির্বাচন কমিশন ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে যে তথ্য দিয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সারা দেশের ভোটকেন্দ্রগুলোতে থেকে যেসব খবর পাওয়া গেছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা যেসব তথ্য দিয়েছেন, তাতে ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের মানুষ এমন একটি নির্বাচন প্রক্রিয়া পাওয়ার অধিকারী, যেটা স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক হবে এবং যে নির্বাচনের মাধ্যমে সম্মিলিতের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে, যে নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি সব শ্রদ্ধা ও আস্থা রাখবে। একটি অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছি। আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পদক্ষেপ নিতে জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি। আর এই নির্বাচন হতে হবে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংস্থা ও একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে।’ শুধু রাজনৈতিক মতভিন্নতার কারণে যাঁদের সাজানো মামলায় কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে, সেই সব ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। এ ছাড়া নাগরিক সমাজ যাতে ঠিকমতো কাজ করতে পারে, এমন পরিবেশ সৃষ্টি, যেখানে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, একত্র হওয়ার ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার পায়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনগুলো। বিবৃতিতে বাংলাদেশে নতুন একটি নির্বাচনের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের মতে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের শর্তগুলো পূরণ করবে এবং তাতে বাংলাদেশের জনগণের সত্যিকার