ঢাকায় বন’ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছেন হিট অফিসার
ঢাকায় বন’ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছেন হিট অফিসার
ঢাকা: তাপে পুড়ছে দেশ। দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। প্রচণ্ড গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শিগগিরই এ পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ার আভাসও পাওয়া যাচ্ছে না আবহাওয়া অধিদফতরে কাছ থেকে।
এ অবস্থায় এক বছর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) নিয়োগ পাওয়া চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গত বছরের ৩ মে ডিএনসিসি ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে নিয়োগ পান এশিয়ার প্রথম হিট অফিসার বুশরা আফরিন। ১২ দিন পরই তার নিয়োগের এক বছর পূর্ণ হবে। ওই নিয়োগ চুক্তির আওতায় ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে যৌথভাবে কাজ করার কথা ডিএনসিসি ও রকফেলার ফাউন্ডেশনের।
ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে গত এক বছর ধরে কী কী উদ্যোগ নিলেন চিফ হিট অফিসার বুশরা, তাপপ্রবাহ থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতেই বা কী পদক্ষেপ নিলেন— জানতে চাইলে ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসার বুশরা সারাবাংলাকে বলেন, “রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুর ও বনানীতে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে আমরা ‘নগর বন’ তৈরি করতে যাচ্ছি, যা একই সঙ্গে শীতলকরণ, বায়ুদূষণ রোধ ও মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি করবে।’
নগর বনায়নের এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে ডিএনসিসি। তবে প্রকল্পটি এখনো পরিকল্পনা পর্যায়ে আছে জানিয়ে বুশরা বলেন, ‘আগস্ট নাগাদ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে।’ একই সঙ্গে তীব্র তাপপ্রবাহ কমাতে শহরের ফাঁকা জায়গাগুলোতে গাছ লাগনো হবে বলেও জানান তিনি।
নাগরিকদেরও গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে হিট অফিসার বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আরও বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে।’
গত এক বছরে তাপমাত্রা কমানোর উদ্যোগ সম্পর্কে বুশরা আফরিস বলেন, ‘আমরা বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছি। তার মধ্যে অন্যতম বস্তি এলাকায় জনসচেতনতা বাড়ানো। কারণ তারা অন্যতম প্রবল ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী। সেসব জায়গায় গাছ লাগিয়ে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের কাজে তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও আবহাওয়া অধিদফতরসহ সরকারি ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমরা শিগগিরই বেশকিছু কার্যক্রমও চালু করতে যাচ্ছি। এগুলো সম্পর্কে সবাইকে বিস্তারিত জানানো হবে।’
নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির সুব্যবস্থা বাড়াতে এবং পথচারীদের বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দিতে ‘কুলিং স্পেসে’র ব্যবস্থা করার জন্য ডিএনসিসি কাজ করছে বলে জানান চিফ হিট অফিসার। অতিরিক্ত তাপমাত্রাজনিত জন্যস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন হতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বুশরা বলেন, ‘নিজের, পরিবারের ও সমাজের সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব। খুব সাধারণ কিছু উপায় অবলম্বন করেই কিন্তু আমরা নিজেদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারি। যেমন— বেশি বেশি পানি পান করা, ঢিলেঢালা পোশাক পরা, যথাসম্ভব ছায়ার মধ্যে থাকার চেষ্টা করা, অসুস্থ বোধ করলে বিশ্রাম নেওয়া বা বেশি খারাপ বোধ করলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। এগুলো আমাদের সুরক্ষিত রাখতে পারে।’
আরও পড়ুন-
হিট অফিসার হিসেবে নেওয়া উদ্যোগের সুফল পেতে নগরবাসীকে কতদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে— জানতে চাইলে বুশরা আফরিন বলেন, আপাতত আমরা তীব্র গরমের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমের সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নগর বনের সুফল হয়তো শুরুর তিন বছরের মধ্যেই আসবে। অন্য কার্যক্রমগুলোর সুফলও পাওয়া যাবে।’
এ বছর এপ্রিলের শুরু থেকেই তাপমাত্রা বাড়তে থাকে সারা দেশে। বিশেষ করে বৈশাখের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়। চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহও দেখা গেছে। রাজধানী ঢাকাতেও চলতি মৌসুমে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস বলছেন, খুব শিগগিরই ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে চলমান এই তাপপ্রবাহ থেকেও শিগগিরই মুক্তি মিলছে না।