বিজয়ের ৫০ বছরে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রত্যয় রাষ্ট্রপতির

বিজয়ের ৫০ বছরে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রত্যয় রাষ্ট্রপতির
বিজয়ের ৫০ বছরে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রত্যয় রাষ্ট্রপতির

বিজয়ের ৫০ বছরে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রত্যয় রাষ্ট্রপতির

মহান বিজয় দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রেখে দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির আনন্দঘন এ মুহূর্তে তিনি দেশবাসী ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধশেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা বহু প্রতীক্ষিত বিজয় অর্জন করি। এ বছর দেশবাসী আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এটি বাঙালির বিজয়োৎসবে যোগ করেছে অনন্য এক মাত্রা।

বিজয়ের এ দিনে রাষ্ট্রপতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যসহ সব স্তরের জনগণকে, যারা বাঙালি জাতির বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ অর্জন জাতিকে এনে দিয়েছে একটি সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। তবে এ অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে বীজ উপ্ত হয়েছিল, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে তা পূর্ণতা পায়। তারই নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।

আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি। পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে সদ্যস্বাধীন দেশে ফিরে জাতির পিতা সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন কৃষি বিপ্লবের। আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন দুর্নীতি, কালোবাজারি, মুনাফাখোরী, লুটেরাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ তার পরিবারের আপনজনদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ফলে উন্নয়নের সেই গতি থমকে দাঁড়ায়। রুদ্ধ হয় গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। উত্থান ঘটে স্বৈরশাসন ও অগণতান্ত্রিক সরকারের।

তিনি বলেন, নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশে আজ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজকে পরিপূর্ণতা দানের লক্ষ্যে সরকার ‘ভিশন ২০২১’, ‘ভিশন ২০৪১’ এবং শতবর্ষ মেয়াদি ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য হলো জাতিসংঘ ‘টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট ২০৩০’ অর্জনসহ ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা।

তিনি বলেন, সরকারের গৃহীত জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির ফলে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু এখন সমাপ্তির পথে। বাস্তবায়িত হচ্ছে মেট্রোরেল, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী বহুমুখী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্প। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আজ অভিজাত স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য। উন্নয়নের এ ধারাকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন।

তিনি বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’— জাতির পিতা ঘোষিত এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে দেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাসী। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা মহামারি মানব সভ্যতাকে ইতিহাসের এক চরম বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি। সরকারের সময়োচিত ও দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণে এবং সংক্রমণজনিত মৃত্যু হারও শূন্যের কাছাকাছি। করোনা নিরাময়ে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১-দফা নির্দেশনা, সময়োচিত সিদ্ধান্ত ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। করোনাযুদ্ধে জয়ী হতে তিনি দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে রেমিট্যান্স অর্জনে অবদান রাখায় দেশের প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, লাখো শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। বাণীতে তিনি  মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখার আহ্বান জানান সবার প্রতি। মহান বিজয় দিবসে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার