দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট সকলকে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে বরং দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বুধবার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্প গুলোর সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। দুর্ঘটনা একটি দুর্ঘটনাই। এর জন্য কে দায়ী তা পরে খুঁজে বের করা যাবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে এবং দুর্ঘটনার জন্য কারা দায়ী তা খুঁজে বের করবে ও প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে, কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেই আগে ড্রাইভারকে ধরে পেটানো হয়। অনেক সময় গণপিটুনি দিয়ে তাকে হত্যাই করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, সকলের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে দুর্ঘটনাটা কেন, কীভাবে, কার কারণে ঘটলো সেটা যেন বিবেচনা করেন। সেখানে আমি পথচারিদেরকে বলবো ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সকলের জ্ঞান থাকা দরকার। সেটা মেনে চলতে হবে। ট্রাফিক আইন সকলে মেনে চলবেন এবং মোবাইল ফোন কানে নিয়ে সড়কের পাশ দিয়ে, বা রেল লাইনের পাশ দিয়ে চলা বা পার হতে যাবেন না। এটা বন্ধ করতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, দ্বিতীয় কথা হলো যেখানে সেখানে দিয়ে হঠাৎ করে দৌড়ে রাস্তা পার হবেন না। এভাবে রাস্তা পার হতে গেলেই কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে। কাজেই এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। ফুটপাতে হাঁটলে যেদিক থেকে গাড়ি আসছে তার উল্টো দিকেই হাঁটতে হয়। যাতে সমানে দেখা যায় যে গাড়িটা আসছে। ফুটওভার ব্রিজ এবং আন্ডারপাস বা নির্দিষ্ট স্থান দিয়েই পারাপার হতে হবে। কারণ, একটি যানবাহনে চাইলে অনেক সময় হঠাৎ ব্রেক কষা সম্ভব হয় না, কারণ এটা যান্ত্রিক বিষয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের আমি বলবো রাস্তায় চলাচলের সময় অবশ্যই ট্রাফিক আইন মানতে হবে। আর শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমি বলবো আমাদের তরফ থেকে প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজে ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে থেকে শিক্ষা দেয়া উচিত। প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, স্কুল ছুটি এবং শুরুর সময় প্রত্যেকটি স্কুল নিজ উদ্যোগে বিশেষ ট্রাফিকের ব্যবস্থা করবে। ট্রাফিক পুলিশ থাকবে সহযোগিতার জন্য কিন্তু স্কুল কতৃর্পক্ষকে যথাযথভাবে সচেতন হতে হবে এবং তাদেরও লোক রাখতে হবে। যাতে ছেলে-মেয়েরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে। কারণ, অনেক সময় অন্যের কথা তারা শুনতে চায় না, কিন্তু যদি স্কুল কতৃর্পক্ষের কেউ থাকে তার কথা ছাত্র-ছাত্রীরা শুনবে। এ ব্যাপারে আমি মনে করি শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রত্যেকটা স্কুলকে নির্দেশ দিতে পারে। একেবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলবো এ ব্যাপারে আপনারা উদ্যোগ নিবেন এবং প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই নির্দেশনা দিবেন। তাহলেই আমাদের সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে। এ ছাড়া আমাদের ভারি যানবাহনগুলো বিশেষ করে বাস, ট্রাক, লরি সেগুলোরও যান্ত্রিক কোন ক্রুটি আছে কি-না সেটাও সবসময় পরীক্ষা করতে হবে। এ বিষয়টাও সকলে নজর রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা। কাজেই কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। দোষ কার সেটা পরে দেখা যাবে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারকে মারা উচিত নয়।
তিনি উদাহারণ দেন, দুর্ঘটনায় কোন গাড়ির ধাক্কায় পথচারি পড়ে গেলে অনেক সময়তেই সে বেঁচে যেতে পারে। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটানোর কারণে প্রাণ ভয়ে ভীত হয়ে ড্রাইভার নিজের প্রাণ বাঁচাতে গাড়ি যখন আবার পুনরায় টান দেয় তখন ঐ দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি চাকার নিচে চলে আসে। তার জীবন চলে যায়। কাজেই কিছু হলেই গাড়ির ড্রাইভারকে ধরে পেটাবেন, আগুন দেবেন, গাড়ি পোড়াবেন এটা কিন্তু ঠিক নয়। কারণ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী আছে তারাই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টা দেখবেন। কাজেই এ বিষয়ে আমি সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণভবন প্রান্তে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রকল্প প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং চিফ মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েখুজ্জামান স্বাগত বক্তৃতা করেন।
গণভবন প্রান্তে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠা সঞ্চালনা করেন। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের সার্বিক দিক তুলে ধরেন। খবর: বাসস