এমপি আনার হত্যা : আখতারুজ্জামানকে দেশে ফেরাতে সহযোগিতা চেয়েছে ডিবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
এমপি আনার হত্যা : আখতারুজ্জামানকে দেশে ফেরাতে সহযোগিতা চেয়েছে ডিবি
এমপি আনার হত্যাকাণ্ড তদন্তে ভারত সরকার বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে। দুই দেশের তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই কথা বলেন।
এ সময় এই হত্যাসংক্রান্ত বাড়তি কিছু তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।
ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি ডরিনের
এমপি আনারের দেহাংশ শনাক্ত করতে তার পরিবারকে কলকাতায় ডাকা হলেও ভিসা জটিলতায় যেতে পারছেন না তারা।
ডরিন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের সেই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে আমার বাবার দেহের খণ্ডিতাংশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেটি আমার বাবার দেহাংশ কিনা তা নিশ্চিত করতে আমাকে ও আমার চাচা আবেদ আলীকে কলকাতায় ডেকেছিলেন ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ। তবে আমার চাচা আবেদ আলীর ভিসা প্রস্তুত থাকলেও আমার ভিসা হাতে না পাওয়ায় ভারতে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে কালীগঞ্জে মানববন্ধন
এমপি আনারের মরদেহ দ্রুত ফেরত ও হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আজ মানববন্ধন করেছে কালীগঞ্জ পৌর ব্যবসায়ী সমিতি। এ সময় বক্তব্য প্রদান করেন কালীগঞ্জ পৌরসভা মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ, পৌর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হকসহ অন্যরা। তারা আনারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহিনকে দ্রুত বিদেশ থেকে ফেরত এনে তাকে অন্যান্য হত্যাকারীদের সঙ্গে তারও দৃষ্টান্তুমুলক শাস্তি চান তারা।
আরো পড়ুন- মিথ্যা মামলা ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে : সদ্য বিদায়ী বিচারপতি
কলকাতা থেকে ফিরে যা জানাল ডিবি পুলিশ
কলকাতা থেকে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, ‘কলকাতায় সঞ্জিভা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের খণ্ডাংশ, চুল ও হাড় খুন হওয়া এমপি আনারের বলে মনে করছেন তারা।
ডিএএনএ প্রতিবেদন হাতে পেলে তদন্তের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মাংসের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। আর এর জন্য যেকোনো সময় কলকাতা পৌঁছাচ্ছেন এমপি-কন্যা ডরিন। তার সঙ্গে এরই মধ্যে তারা কথা হয়েছে।’
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, ‘কলকাতায় তাদের যাওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সংসদ সদস্যের দেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা। এ কারণে তারা সেখানকার সিআইডিরকে সেপটিক ট্যাংক ও পয়োনিষ্কাশন নালায় সেসব পাওয়া যায় কিনা তা ভালো করে দেখার অনুরোধ করেন। পরে সেখানে ভুক্তভোগীর শরীরের কিছু অংশ পাওয়া গেছে। সেগুলোর ডিএনএ টেস্ট করার পর এ বিষয়ে তারা (কলকাতার পুলিশ) চূড়ান্তভাবে জানাবে।’
এ সময় স্বাভাবিকভাবে সেখানে খণ্ডিত দেহাংশ থাকার কথা নয় উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এ কারণেই আমরা মনে করছি, এগুলো তারই (আনোয়ারুল আজীম) হবে। কলকাতা পুলিশ খুব দ্রুতই ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল জানাবে।’
আরো পড়ুন- কোরবানি ঈদে ছুটি মিলবে কয় দিন?
গোপালকে নিয়ে সন্দেহ
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে কলকাতার স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসকেও নিয়েও সন্দেহ রয়েছে পরিবারে। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ভারতে যাওয়ার পর তদন্তের এক পর্যায়ে তার (গোপাল) সঙ্গে দুই ঘণ্টা এ বিষয়ে কথা হয়েছে তাদের। তার কাছ থেকেও এই হত্যার বিষয়ে অনেক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। সেগুলো তদন্তের প্রয়োজনে কাজে লাগানো হবে। গোপালের তথ্য যাচাই করছেন তারা। তিনি কী ব্যবসা করেন, সেটাও জানতে পেরেছেন। তবে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছেন না তিনি।
দ্রুতই মিলবে ফরেনসিক প্রতিবেদন
মামলা তদন্তের প্রয়োজনে যেসব সরঞ্জাম পাওয়া গেছে তার ফরেনসিক প্রতিবেদন শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে কলকাতা সিআইডি তাদের নিশ্চিত করেছে।
মূল পরিকল্পকারী আমেরিকায়
এ বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে আছে। তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনতে ভারতের সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিজস্ব প্রক্রিয়ায়ও আক্তারুজ্জামানকে দেশে ফেরত আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।’
তিনি বলেন, ‘এমপি আনার হত্যাকাণ্ডটি ভারতের মাটিতে সংঘটিত হয়েছে। এ জন্য সেখানকার পুলিশও এই আসামিকে চাইবে। আমরাও তাদের কাছে শাহিনকে ফেরাতে অনুরোধ করেছি। তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’
শিগগিরই গ্রেপ্তার হবে সিয়াম
এমপি আনার হত্যার অন্যতম আসামি ফাইজুল ওরফে সিয়াম নেপালে আত্মগোপন করেছে জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘তাকে শিগগিরই গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। সিয়াম বর্তমানে নেপালের কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই বিষয়ে নেপাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরাও কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের সঙ্গে আনঅফিসিয়ালি যোগাযোগ রাখছি। এছাড়া আমরাও আন-অফিশিয়ালি বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কাছে সহযোগিতা চাইব