বাংলাদেশে ফুলে ফুলে ভরেছে বেদি, শ্রদ্ধায় সিক্ত স্মৃতিসৌধ
ফুলে ফুলে ভরেছে বেদি, শ্রদ্ধায় সিক্ত স্মৃতিসৌধ
মহান স্বাধীনতা দিবস আজ মঙ্গলবার (২৬ মার্চ)। ৫৪ বছর আগে এমনই এক দিনে জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশ নামক এক রাষ্ট্রের। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে পুরো জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এক লড়াইয়ে। ছিনিয়ে এনেছিল বিজয়।
ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তকে স্মরণীয় রাখতে প্রতি বছর মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের মাধ্যমে জাতির শহীদ বীর সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে পুরো জাতি।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে এদিন শিশু-ছেলে-বুড়োসহ সব বয়সী মানুষের আগমণে মুখর হয়ে ওঠে সৌধ প্রাঙ্গণ। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আজ বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, আধা-সরকারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ। তাদের ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে শহীদ বেদি।
স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে যুদ্ধাহত অনেক মুক্তিযোদ্ধাও এসেছেন শ্রদ্ধা জানাতে। তাদের অনেকের হাতে শোভা পায় লাল-সবুজের বিজয় পতাকা।
বাবা সাইফুল ইসলামের হাত ধরে ঢাকার ধামরাই থেকে স্মৃতিসৌধে এসেছে শিশু মাইশা। আধো আধো বোলে জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছিল সে। সাইফুল ইসলাম জানান, সন্তানকে স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধ দেখাতে নিয়ে এসেছেন।
সাভার থেকে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আকরাম হেসেন। তিনি বলেন, ‘এবার রোজার কারণে স্মৃতিসৌধে লোকজন তুলনামূলক অনেক কম এসেছে। আমি পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে ভোর বেলায় এসেছি। আমার অফিসের অনেক কলিগ সাহরির পর পরেই ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছে। সকালে স্মৃতিসৌধে সবাইকে নিয়ে ফুল দিতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইভা বলেন, ‘আজ স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসব এটা অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। আমরা কয়েকজন একসঙ্গে স্মৃতিসৌধে এসেছি। স্বাধীনতা দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে পেরে ভালো লাগছে।’
এর আগে দিনের প্রথম প্রহরে সকাল ৫টা ৫৬ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশে সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামাগিয়েল ওয়াংচুক। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
শ্রদ্ধা জানানো ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৬টার কিছু সময় পর সৌধ এলাকা ত্যাগ করেন রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী ও ভিআইপিরা। এরপরেই স্মৃতিসৌধ এলাকা সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এসময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও শ্রদ্ধা জানান।
এরপর ফুলের ডালা নিয়ে জাতির বীর সেনানিদের শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ মানুষের ঢল নামে সৌধ প্রাঙ্গনে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্তের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘সকালে জনসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করার পর দলে দলে মানুষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। শ্রদ্ধার ফুলে ধীরে ধীরে বেদি ভরে যাচ্ছে। তবে শ্রদ্ধা নিবেদনে সুবিধার্থে বেদি থেকে ফুল অপসারণ করা হচ্ছে।’
এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে স্মৃতিসৌধসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে