বিএনপির তিন সংগঠনের লংমার্চ সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জনগণ আপসহীন
সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জনগণ আপসহীন
বিএনপির তিন সংগঠনের আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি থেকে দেশের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর মাঠে লংমার্চ শেষে আয়োজিত সমাবেশে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য এ দেশের জনগণ যেকোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত আছে। বাংলাদেশের অখণ্ড স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি আমরা আপসহীন। আমরা কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না।’
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননাসহ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের লংমার্চ গতকাল সকালে ঢাকা থেকে শুরু হয়। লংমার্চের শুরুতে ঢাকায় সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দিল্লির কথায় চলতে হবে কেন? বাংলাদেশের মানুষের রক্তের তেজ, আত্মশক্তি, বীরত্ব দিল্লির শাসকেরা বুঝতে পারেননি।
লংমার্চ গতকাল বিকেল চারটার দিকে লংমার্চের বহরটি আখাউড়া স্থলবন্দরের মাঠে পৌঁছায়। সেখানে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী। এতে যুবদল সভাপতির পাশাপাশি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম বক্তব্য দেন। এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। লংমার্চে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলার বিএনপির তিন সংগঠনের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।
আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রসঙ্গ টেনে আখাউড়ায় সমাবেশে যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রে হাইকমিশনারের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ওই দেশের। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, রাষ্ট্র, সরকার সেখানে ব্যর্থ হয়েছে। আমি এ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে হবে। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের বাইরে আমাদের কোনো প্রভু নেই। আমরা বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিবেশীকে চিন্তা করি।
শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসরদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ভারত সরকারকে বলতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান যুবদল সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘এখনো ভারতে অবস্থানকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যারা অবস্থান করছে, তাদের প্রত্যেককে ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি যে দৃষ্টি দিয়েছে, সেটাকে প্রতিহত করতে হবে।’
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারবার ভারত নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। তিনি সমাবেশে বলেন, ‘সীমান্তে হাজার হাজার নিরীহ জনগণকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারত। আমরা ভারতের কাছে এই সীমান্ত হত্যা বন্ধ চাই। আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা আপনাদের কাছে দাবি করছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ সব সময় বন্ধুসুলভ আচরণ করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতকে বলে দিতে চাই, এই প্রতিবাদ, এই লংমার্চ থেকে আপনাদের যদি শুভবুদ্ধির উদয় না হয়, তাহলে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটির জন্য পাহারায় থাকব। সুতরাং বাড়াবাড়ি করে লাভ নেই, দেশের প্রতি রক্তচক্ষু দেখিয়ে লাভ নেই।’
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে, তা–ও তারা (ভারত) শিখিয়ে দিচ্ছে। সমুদ্রসীমার ওপরে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তারা নজরদারি করছে। আমাদের আকাশের ওপর দিয়ে বিমান চলে এর টাকাও ভারত নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর আমরা জামদানি ও ইলিশ পাঠাই; কিন্তু তারা আমাদের ফেলানীর লাশ উপহার দেয়। ফেনসিডিল উপহার দেয়।’
সমাবেশ উপলক্ষে নিরাপত্তার জন্য স্থলবন্দর এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
‘ঐক্যবদ্ধ থেকে রুখে দেব’
এর আগে ঢাকা থেকে আখাউড়া যাওযার পথে বেলা দেড়টার দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ডে পথসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন আপসহীন থেকে কাজ করে যাবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে আমরা ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দেব।’
এর আগে ভৈরবের পথসভায় দলীয় নেতারা সকাল ১০টা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সভাস্থলে যোগ দেন। বেশির ভাগ মানুষের মাথায় জাতীয় পতাকা ও হাতে ফেস্টুন ছিল। আর তাঁদের মুখে ছিল ভারতবিরোধী স্লোগান।
যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম বলেন, ‘আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আমরা ভারতের হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।’
‘আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি’
গতকাল সকাল ১০টার দিকে বিএনপির তিন সংগঠনের এই লংমার্চ শুরু হয় ঢাকার নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে। শুরুতেই লংমার্চের বহরে প্রায় দুই হাজার গাড়িতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন।
লংমার্চ শুরুর আগে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত রক্তপিপাসু লেডি ফেরাউনকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমর্থন দিচ্ছে। ভারতের শাসকগোষ্ঠী গোটা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে সমালোচিত। অথচ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ!
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি, এই স্বাধীনতা বিক্রি করে দেব? আমরা পিন্ডির কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য নয়।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার লোকেরা নিজের কথায় চলুক, এটা ভারত চায় না। দিল্লির কথায় চলতে হবে কেন? বাংলাদেশের মানুষের রক্তের তেজ, আত্মশক্তি, বীরত্ব দিল্লির শাসকেরা বুঝতে পারেননি।
এদিকে লংমার্চের কারণে ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেল চারটার পর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ের তিন দিকে যানজট শুরু হয়। সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্বর এলাকা থেকে চান্দুরা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে জেলা শহরের দিকে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। বিকেল পাঁচটার পর সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের কুট্টাপাড়া মোড় থেকে নাসিরনগর অভিমুখে সরাইল উপজেলা সদরের হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট লেগে যায়