চাঁদ তারা সূর্য’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘জ্বালা জ্বালা’ গান খ্যাত শাফিন আহমেদ মারা গেছেন
সাবরিনা আক্তার
চাঁদ তারা সূর্য’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘জ্বালা জ্বালা’ গান খ্যাত শাফিন আহমেদ মারা গেছেন
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের দীর্ঘ সময়ের ভোকাল, সুরকার ও গীতিকার শাফিন আহমেদ মারা গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ছয়টার পরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
মাইলস ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য মানাম আহমেদ তার মৃত্যুর বিষয়টি বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
মৃত্যুর কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে মি. আহমেদ জানিয়েছেন, শাফিন আহমেদের বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়। সেইসাথে তিনি কিডনি জটিলতায়ও ভুগছিলেন।
মি. আহমেদ বলেছেন, শাফিন আহমেদের এর আগেও দুটো হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তার পেসমেকার বসানো হয়েছিল।
এবারে তৃতীয় অ্যাটাকটি হলে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে তার হৃদপিণ্ডে স্টেন্ট বসানো হয়। সাথে তার কিডনি জটিলতা থাকায় ডায়ালাইসিসও চলছিল।
তবে অক্সিজেন স্যাচুরেশনও কমে আসতে থাকায় তার শরীরের প্রত্যঙ্গগুলো একে একে অকার্যকর হতে শুরু করে।
এভাবে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
পরে বাংলাদেশ সময় আজ সকাল সাড়ে ছয়টার পর তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হয়।
গত ২০শে জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে কনসার্টে অংশ নিতে গিয়েছিলেন শাফিন আহমেদ
মি. আহমেদ বলেছেন, শাফিন আহমেদের এর আগেও দুটো হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তার পেসমেকার বসানো হয়েছিল।
এবারে তৃতীয় অ্যাটাকটি হলে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে তার হৃদপিণ্ডে স্টেন্ট বসানো হয়। সাথে তার কিডনি জটিলতা থাকায় ডায়ালাইসিসও চলছিল।
তবে অক্সিজেন স্যাচুরেশনও কমে আসতে থাকায় তার শরীরের প্রত্যঙ্গগুলো একে একে অকার্যকর হতে শুরু করে।
এভাবে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
পরে বাংলাদেশ সময় আজ সকাল সাড়ে ছয়টার পর তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হয়।
গত ২০শে জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে কনসার্টে অংশ নিতে গিয়েছিলেন শাফিন আহমেদ।
শো’য়ের কিছুক্ষণ আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন শো বাতিল করে তাকে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে তার।
সঙ্গীত পরিবারে জন্ম, সঙ্গীতেই বসবাস
বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই ব্যান্ড সংগীত শিল্পীর জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। তার মা ছিলেন বাংলাদেশের প্রতিথযশা কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার কমল দাশগুপ্ত।
এ পরিবারে জন্ম নেয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই শাফিন আহমেদ সংগীতের আবহে বড় হয়েছেন। বাবার কাছ থেকে তিনি উচ্চাঙ্গ সংগীতে আর মায়ের কাছ থেকে নজরুল সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার সময় পাশ্চাত্য সংগীতের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। পরে দেশে ফিরে তিনি, তার বড় ভাই হামিন আহমেদ মিলে গড়ে তোলেন ব্যান্ড দল ‘মাইলস’।
যা গত ৪৫ বছর ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর একটি হয়ে আছে।
তিনি দীর্ঘদিন মাইলসের ভোকাল ছিলেন। শাফিন আহমেদ একইসাথে ব্যান্ডের বেজ গীটারও বাজাতেন।
এছাড়া ব্যান্ডটির বহু জনপ্রিয় গানের গীতিকার এবং সুরকারও ছিলেন তিনি।
শাফিন আহমেদের কণ্ঠে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘জ্বালা জ্বালা’ ‘চাঁদ তারা সূর্য’, 'নীলা' ‘প্রথম প্রেমের মতো’, ‘পিয়াসী মন’, ‘পাথুরে নদী জলে’ ‘আজ জন্মদিন তোমার’ সহ আরো অনেক গান ।
পপ গানের জন্যই দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয় হলেও, কয়েক বছর আগে তিনি নজরুল সঙ্গীতের একটি অ্যালবাম করেছিলেন। করুন
‘মাইলস’ এর জন্ম ১৯৭৯ সালে, ২০১৯ সালে বছরব্যাপী কর্মসূচি দিয়ে মাইলস তাদের প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে।
২০১০ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, পাশ্চাত্য সঙ্গীত শেখার কোন সুযোগ বাংলাদেশে নেই বলে, তাদেরকে নিজেদের চেষ্টায় এবং শুনে শুনেই নতুন ধারার এই সঙ্গীত শিখতে হয়েছে।
শুরুর দিকে শাফিন আহমেদ ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, পরে যেটি ঢাকা শেরাটন নামে পরিচিতি পায় সেখানে নিয়মিত পারফর্ম করতেন। শুরুতে কেবল ইংরেজি গানই কাভার করতেন তারা।
ব্যান্ড গঠনের পর তাদের প্রথম অ্যালবামটিও ছিল ইংরেজি গানের। পরে ১৯৮২ সাল থেকে তারা বাংলা গানের অ্যালবাম প্রকাশ করতে শুরু করেন।
সে সময় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে নিয়মিত গান করতেন তিনি।
বাংলাদেশে ব্যান্ডের গানের কপিরাইট এবং শিল্পীদের রয়্যালটি নিয়ে সোচ্চার শিল্পীদের অন্যতম ছিলেন তিনি।
সঙ্গীত পরিবারে জন্ম নেয়া এই শিল্পীর সঙ্গীতেই ছিল বসবাস, আর যুক্তরাষ্ট্রে একটি শো’য়ে অংশ নেয়ার কিছুক্ষণ আগেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এর কয়েকদিন পর হাসপাতালে তার মৃত্যু হল।
মাইলসের সাথে থাকা-না থাকা
মাইলসের শতকরা ৯০ ভাগ গানের কণ্ঠশিল্পী শাফিন আহমেদ।
তবে গত কয়েক বছরে একাধিকবার শাফিন আহমেদ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে মাইলস থেকে বেরিয়ে যান এবং পরে ফিরে আসেন।
সবশেষ ২০২১ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, মাইলসের অন্য সদস্যদের সাথে ব্যান্ডের ব্যবয়ায়িক ইস্যুতে বিবাদের জেরে শাফিন আহমেদ দল থেকে আলাদা ছিলেন।
পরে তিনি মাইলস থেকে বেরিয়ে প্রথমে 'রিদম অব লাইফ' এবং পরে 'ভয়েস অব মাইলস' নামে নতুন ব্যান্ডদল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
যদিও তাতে খুব একটা সফল হননি তিনি।
তবে একক ক্যারিয়ারেও বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন তিনি।
তার মৃত্যুতে মাইলসের ব্যান্ডমেট মানাম আহমেদ বিবিসিকে বলেছেন, “আফটার অল আমরা ভাই, ভাইয়ের চাইতেও বেশি কিছু। চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা একসাথে। এই বয়সে তার চলে যাওয়া কষ্টের।”
তিনি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে শাফিন আহমেদের মৃত্যু খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পথে রওনা দেয়ার প্রস্তুতির নিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে শাফিন আহমেদের একজন কাজিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। পরিবার তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবেন।
রাজনীতিতে পদচারণা
সঙ্গীতের মানুষ হলেও, রাজনীতির অঙ্গনে অল্প সময়ের জন্য পা দিয়েছিলেন শাফিন আহমেদ।
শুরুতে ২০১৭ সালে ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা এনডিএমে যোগ দেন। সেসময় তাকে দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়।
পরের বছর ২০১৮ সালে তিনি এনডিএম ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যুক্ত হন।
এরপর ২০১৯ সালে তিনি জাতীয় পার্টি থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
যদিও ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
এরপর তাকে আর সেভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় দেখা যায়নি