শিক্ষার্থী আন্দোলন বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, লাঠিপেটা,আজ ও আটক
শিক্ষার্থী আন্দোলন
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, লাঠিপেটা,আজ ও আটক
রাজধানীসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার ঢাকাসহ কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে এবং পুলিশ লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় কিছু শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
চট্টগ্রামে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লায় আন্দোলনে যোগ দিতে যাওয়ার সময় এক শিক্ষার্থী পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কে বা কারা ওই ছাত্রকে গুলি করেছে, তা কেউ বলতে পারছে না।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের কাছ থেকে জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি আদায়, সারা দেশে বিনা বিচারে হত্যা, গুম-খুন, মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন মুক্ত থাকা কয়েকজন সমন্বয়ক। ঢাকাসহ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে বাধা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকায় লাঠিপেটা, আটক
বিক্ষোভ ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান। কিছু এলাকায় বিক্ষোভকারীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। একটি জায়গায় লাঠিপেটার ঘটনাও ঘটেছে।
গতকাল সকালে ঢাকার আটটি স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান সমন্বয়কেরা। এই স্থানগুলো হলো সায়েন্স ল্যাব, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেট, জাতীয় প্রেসক্লাব, উত্তরার বিএনএস সেন্টার, মিরপুর-১০, মিরপুরের ইসিবি চত্বর, রামপুরা ও মহাখালী।
উত্তরা থেকে প্রথম আলোর গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, সেখানে সকাল থেকেই বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন রাস্তা ও গলিতে কিছু মানুষকে দেখা যায়। তবে মূল সড়কে কাউকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নামতে দেখা যায়নি।
দুপুরে ইসিবি চত্বরে জড়ো হওয়া এক দল বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। সেখানে জড়ো হওয়া আরেক দল বিক্ষোভকারীকে পুলিশ লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়।
দুপুরে ইসিবি চত্বরে দায়িত্বরত পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েকজন বিক্ষোভকারী গলি থেকে ইটপাটকেল ছুড়ছিলেন। পরে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিয়েছে ও কয়েকজনকে আটক করেছে।
বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় মিরপুর ১০ নম্বরের গোলচত্বর থেকে ১০ জনকে আটক করা হয় বলে জানান মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি ছাব্বীর আহম্মেদ। জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে ১০ জনকে আটকের কথা জানান পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার মো. রেফাতুল ইসলাম। পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ করতে গেলে সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ।
প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন এক দল শিক্ষার্থী। খবর পেয়ে সকাল থেকেই পল্টন মোড় থেকে কদম ফোয়ারা মোড় পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে রাখে পুলিশ। পরে প্রেসক্লাবের পরিবর্তে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করেন।
বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সকাল থেকেই পুলিশের অবস্থান ছিল। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির সামনে থেকে তিন নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১২ জনকে পুলিশ আটক করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। আটককৃতদের মধ্যে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীও আছেন বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন স্থানে বাধা, হামলা
চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী মোড়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকেল চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে।
বেলা তিনটার দিকে নগরের জামালখানে প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি করার কথা বলেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে এর আগেই ওই এলাকায় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। ফলে সেখানে কোনো শিক্ষার্থী জড়ো হননি।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চেরাগী পাহাড় মোড়ে অবস্থান নেন ২০–৩০ জন আন্দোলনকারী। সেখানে তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় পুলিশ দুজনকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তুলতে চাইলে বিক্ষোভকারীরা বাধা দেন।
আটকের বিষয়টি স্বীকার করলেও কতজনকে নেওয়া হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) অতনু চক্রবর্তী।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গতকাল বেলা দুইটায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ব্যানারে রাজনীতি করেন, এমন শিক্ষার্থীরা লাঠি, রড, পাইপ নিয়ে এই হামলা চালান। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. ফারুক আহম্মেদ বলেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে ফেরত পাঠিয়েছেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বাধা ও মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বেলা তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে থেকে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল পর্যন্ত যান। এরপর আবার মূল ফটকের এসে তাঁরা বক্তব্য দেন।
এদিকে আন্দোলনে যোগ দিতে যাওয়ার সময় কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর বাঁ হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। এতে তাঁর পায়ের হাড় ভেঙে যায়। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কোটবাড়ী জাদুঘর সড়কের মাথায় এ ঘটনা ঘটে। আশরাফুল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার মহেশপুর গ্রামে। তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে চিকিৎসাধীন।
গোলাগুলির বিষয় নিয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান জানান, তিনি গুলিবিদ্ধ আশরাফুল ইসলামের ঘটনা জেনেছেন। তবে কে বা কারা গুলি করেছে, বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়।
এদিকে ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের নামতে দেওয়া হয়নি। পুরো শহর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও অবস্থান ছিল বিভিন্ন পয়েন্টে।
যশোরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। গতকাল বিকেলে যশোর শহরের কারবালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করলে এক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।
আরও কিছু স্থানে বিক্ষোভ
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার দাবিসহ আরও কয়েক দফা দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। নোয়াখালী শহরের মাইজদীতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বগুড়া, যশোর ও কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা