মেয়ের শেষ কথা ‘মা, ফোন বন্ধ থাকলে বুঝবা আমাকে মেরে ফেলেছে
মেয়ের শেষ কথা
‘মা, ফোন বন্ধ থাকলে বুঝবা আমাকে মেরে ফেলেছে’
‘মা, আমি তোমাদের মতের বাইরে গিয়ে বিয়ে করে ভুল করেছি। তোমাদের জামাই আমাকে খুব নির্যাতন করছে। মা, আমার ফোন বন্ধ থাকলে বুঝবা, তোমাদের জামাই আমাকে মেরে ফেলেছে।’
মা-মেয়ের এই কথা হয় গত মঙ্গলবার রাতে। এরপরই গতকাল বুধবার সকালে থানা থেকে আসা ফোনে মা জানতে পারেন যে মেয়ে খুন হয়েছেন। গতকাল রাতে ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানায় কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেন মা লিপি আক্তার। মেয়েকে খুনের খবর পেয়ে তিনি এসেছেন ঢাকা থেকে। তাঁর মেয়ে সিনথিয়া ইসলাম খুশবু (২৪) খুন হয়েছেন স্বামীর হাতে।
গতকাল সকালে পৌরসভার চর গণেশ এলাকার ভাড়া বাসায় পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী সিনথিয়া ইসলামকে বঁটি দিয়ে জবাই করে হত্যার পর লাশ বিছানায় ফেলে রেখে থানায় গিয়ে পুলিশে খবর দেন স্বামী আলী আক্কাস (২৬)। আলী আক্কাস ভোলার দৌলতখান থানার মধ্য জয়নগর এলাকার মো. রতনের ছেলে। বিয়ের পর এই দম্পতি ফেনীর সোনাগাজীতে বসবাস শুরু করেন।
সিনথিয়ার মা লিপি আক্তার বলেন, ‘পরিবারের অমতে সিনথিয়া আক্কাসকে বিয়ে করে। প্রথমে মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিল। কিছুদিন পর আমরা তাদের ঢাকার বাসায় আসতে বলি। যাবে যাবে বলে আর যাওয়া হয়নি। কিছুদিন ধরে আলী আক্কাস ব্যবসা করার জন্য সিনথিয়ার মাধ্যমে টাকা চাইতে থাকে। আমরা বলেছি, তোমরা ঢাকায় চলে আসো। এরপর টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু ঢাকায় না গিয়ে আক্কাস সিনথিয়াকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার পর সিনথিয়া আমাকে বারবার ফোন দিতে থাকে। ফোন ধরার পর সিনথিয়া জানায় যে আক্কাস তাকে টাকার জন্য প্রচণ্ড মারধর করছে। এরপর রাত সাড়ে তিনটার দিকে মেয়ে আবারও ফোন দিয়ে বলে, “মা, আমার ফোন বন্ধ থাকলে বুঝবা, তোমাদের জামাই আমারে মেরে ফেলেছে।” আর সকাল হতে না হতেই থানা-পুলিশ মুঠোফোনে জানায়, আমার মেয়েকে আক্কাস জবাই করে হত্যা করেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মেয়ের লাশ দাফনের জন্য ঢাকায় নিয়ে যায় সিনথিয়ার পরিবার। এ ঘটনায় সিনথিয়ার মা বাদী হয়ে আলী আক্কাসকে আসামি করে রাতেই থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
পুলিশ জানায়, সিনথিয়ার মুঠোফোন থেকে উদ্ধার হওয়া কাবিনে লেখা হয়েছে, ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর ১ লাখ টাকা দেনমোহরে আলী আক্কাসকে তিনি বিয়ে করেন। কিন্তু চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্কাসের কাছে চলে আসার পর মাকে জানান যে ওই দিনই তাঁরা বিয়ে করেছেন। আক্কাস মূলত ফেরি করে জিনিসপত্র বিক্রি করে সংসার চালাতেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপরিদর্শক (এসআই) শৈবাল বড়ুয়া প্রথম সময়কে বলেন, আজ দুপুরে সিনথিয়া হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আলী আক্কাসকে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ আশিকুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে আক্কাস হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে ফেনীর কারাগারে পাঠানো হয়।