মেয়ের প্রতি মায়ের ভালবাসা শিখার শেষ বলে কিছুই নেই।
ইরানি বিশ্বাস
সন্তান লেখাপড়ায় ভাল করবে এটা সকল মা-বাবা চায়। কিন্তু ক্লাশ সেভেন পর্যন্ত আমার মেয়ে প্রত্যেক পরীক্ষায় অন্তত ২টি সাবজেক্টে ফেল করতো। আর প্রত্যেক পরীক্ষার রেজাল্ট আনতে আমাকেই যেতে হতো।ম্যাডামরা আমাকে বলতেন, ওকে বাসায় বিশেষ খেয়াল করবেন।আমি উল্টা বলতাম, ম্যাডাম আপনারা সারাজীবন চেষ্টা করেছেন ছাত্র-ছাত্রীরা পাশ করুক, ভাল রেজাল্ট করুক। আপনিও স্টুডেন্ট থাকতে তা-ই করেছেন। কখনো কি ফেল করেছেন? ফেল করার যে অনুভুতি এটা আপনার জানা নাই। আমি চাই আমার মেয়ে ফেল করে করে নিজেই একসময় পাশ করার মর্মার্থ বুঝতে পারবে। সেদিন আপনাকে বলতে হবে না। ও নিজেই পাশ করার জন্য চেষ্টা করবে। ম্যাডাম আমাকে বলতেন, জীবনে আপনার মতো মা দেখিনি।আমি বললাম আমি সবার থেকে সবসময় আলাদা হতে চেয়েছি। ফেল করা রেজাল্ট কার্ড নিয়ে মেয়েকে আইসক্রিম কিনে দিলাম। আমরা দুজনে রিক্সায় করে বাসায় আসতেছি। আমার মেয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে বলছে, মামনি, আমি কি ফেল করেছি? আমি আনন্দের সাথে বললাম হ্যা তুমি ফেল করেছো। আর বাকি সবাই পাশ করেছে। ওর মনের মধ্যে কোন পরিবর্তন আমি লক্ষ্য করিনি।তবে ক্লাশ এইটে ভর্তি করার পর বললাম, তোমার রেজাল্ট আনার জন্য তোমার মাকে ডেকে বকা দেয়। তখন আমার কিন্তু ভীষন কষ্ট হয়। মেয়ে তখন কিছু বলেনি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, তোমাকে আর ডাকবে না ম্যাডামরা। আমি বাড়তি কথা না বলে শুধু হেসেছিলাম। সত্যি আর কোন দিন ফেল করেনি। এবার আমার মেয়ে এইচএসসি অটো পাশ করেছে। রেজাল্টের পর সে অনেক কষ্ট পেয়েছে। কারন তার ইচছা ছিল গোল্ডেন জিপিএ পাবে। আমি কষ্ট পাইনি। তবে আামর মেয়ে আমাকে চমকে দিয়েছে, সে দিল্লী ইউনিভার্সিটিতে ব্যাচেলর অব জার্নালিজম এন্ড মাস কমনিকেশনে স্কলারশীপ পেয়েছে।আজ আমার মেয়ের জন্মদিন। সকলের প্রার্থনায় রাখবেন। সে যেন আগামী চলার পথে এগিয়ে যেতে পারে।