সাবরিনা আক্তার
ফ্রান্সের সংসদ নির্বাচনের প্রথম পর্বে মেরিন লে পেনের কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) জয়ী হয়ে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। আর এর মধ্য দিয়ে ফরাসি রাজনীতিতে প্রধান শক্তি হিসেবে অভিষেক ঘটেছে দলটির।
অভিবাসনবিরোধী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমালোচক হিসেবে বেশ পরিচিত আরএন দল। তবে নির্বাচনের দুই পর্ব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত আরএন জয় পাবে কিনা, তা আগামী সপ্তাহের রান-অফ ভোটের আগের দিনগুলোতে হতে যাওয়া রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু প্রথম রাউন্ডের ভোটের ফল থেকে যা দেখা যাচ্ছে, তাতে এ দলকে উল্টে দিতে অনেক বড় ব্যবধান লাগবে বলে বোঝা যাচ্ছে। এরই মধ্যে ফ্রান্সে লে পেনের আরএন দল প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। তা সত্ত্বেও আগামী সপ্তাহে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা এখন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ অতীতে আরএনকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে মধ্য-ডান ও মধ্য-বামপন্থি দলগুলো জোট বেঁধেছিল। সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা গেছে, রোববারের ভোটে আরএন ও এর মিত্ররা ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে, ২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তাদের পরেই আছে বামপন্থিদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) আর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর মধ্যপন্থি টুগেদার অ্যালায়েন্স পেয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ ভোট। এ ফলাফল মাখোঁর জন্য একটি বড় ধরনের বিপর্যয়। ফলাফল লে পেনের আরএনের সমর্থকদের মাঝে আনন্দের স্রোত বইয়ে দিয়েছে, তারা নেচেগেয়ে উল্লাস করছেন। ক্ষয়ক্ষতি সীমিত করতে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ এবং বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট জোট কৌশলগতভাবে ৭ জুলাই দ্বিতীয় রাউন্ডে ভোট দেওয়ার জন্য তাদের সমর্থকদের জোরালো আহ্বান জানাচ্ছে। এমনকি তাদের নিজস্ব প্রার্থী ছিটকে গেলেও ভোটাররা যেন তাদের নির্বাচনী এলাকায় পছন্দের মানুষকে বেছে নেন, সে বিষয়ে অনুরোধ করা হবে, যাতে ফলাফল আরএনের বিরুদ্ধে য়ায়। কিন্তু দলের তরফ থেকে এই ধরনের আহ্বানের সমস্যা হলো, কম লোকের উপস্থিতি হয় এবং দলের কথা খুব কম মানুষই শোনে। আগামী সপ্তাহে ভোটের মুখোমুখি হবেন তিনজন প্রার্থী। রোববারের রান-অফ ভোটের পর কট্টর ডানপন্থি আরএন ইউরোপপন্থি প্রেসিডেন্ট মাখোঁর সঙ্গে সহাবস্থান করে সরকার গঠনে সক্ষম হবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। চলতি মাসের প্রথম দিকে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁর মনোনীত প্রার্থীরা আরএনের প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর আগাম এ নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন মাখোঁ। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মে ২০২৭ সালের আগে ফ্রান্সে পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল না আর এ নিয়ে মিত্ররা মাখোঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। ফ্রান্সের অনেকের কাছে বহুদিন ধরে অচ্ছুত হয়ে থাকা আরএন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন ক্ষমতার সবচেয়ে কাছাকাছি আছে। যে দলটি বর্ণবাদ ও ইহুদি বিদ্বেষের জন্য পরিচিত, সেই আরএনের ভাবমূর্তি এখন স্বচ্ছ করার কথা বলছেন লে পেন। তাঁর এই কৌশল ব্যয়বহুল জীবনযাত্রা ও অভিবাসী নিয়ে মাখোঁর ওপর বিরক্ত ভোটারদের ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে।