দ্রবমূল্য সাধারণ মানুষের ঘরের শান্তি কেড়ে নিয়েছে’

দ্রবমূল্য সাধারণ মানুষের ঘরের শান্তি কেড়ে নিয়েছে’
দ্রবমূল্য সাধারণ মানুষের ঘরের শান্তি কেড়ে নিয়েছে’

‘দ্রবমূল্য সাধারণ মানুষের ঘরের শান্তি কেড়ে নিয়েছে’

ঢাকা: দ্রবমূল্য সাধারণ মানুষের ঘরের শান্তি কেড়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার (০৩ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলাদল এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ১৫ বছর দানবের মতো শাসন দিয়ে আওয়ামী লীগ কেবল বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধবংস করেনি, অর্থনীতিকেও ধবংস করে ফেলেছে। আপনারা (মহিলাদল) আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবেন। জিনিসপত্রের দাম কেমন লাগে বলেন? ঘরে শান্তি আছে? নাই। গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম, সবজির দাম, চালের দাম অবিশ্বাস্য। খাওয়া-দাওয়া করা যায় না। বাচ্চাদেরকে ঠিক মতো ডিম দেওয়া যায় না, দুধ দেওয়া যায় না। গরুর মাংস ৮‘শ টাকা, লাউয়ের দাম ১২০ টাকা। এই তো অবস্থা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সিপিডির এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে- জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে যে, সেটা নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে কঠিন মনে হয়। গরুর গোস্ত কেনেন না, ইলিশ মাছের তো প্রশ্নই উঠতে পারে না। তাই না? এমনকি ভালো সবজিও কেউ কেনেন না। কারণ, দাম বেশি। সয়াবিন তেল, পামওয়েল- সব কিছুর দাম ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম থেকে বেশি। আমরা এক কঠিন সময় পার করছি। এটা তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। যারা গত ১৫ বছর ধরে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে, পুলিশ, বিজেবি, প্রশাসনসহ অন্যান্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে।’

মহিলা দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সকলকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনারা বের হলেই তো শুধু হবে না। সব মহিলাকে বের করে আনতে হবে। সব মানুষ যখন বেরিয়ে আসবে তখন বিপ্লব হবে। সেটা আমাদের করতে হবে। শুধু নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চলবে না।’

তিনি বলেন, ‘এখন সময় এসেছে নিজেদের সংগঠিত করার। আমরা চেষ্টা করছি, নির্যাতিত হচ্ছি, জেল খাটছি, আমাদের মা-বোনেরা বারবার জেলে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারিনি। এই চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য সংগঠনকে আরও দৃঢ় করতে হবে। নিজেদের মধ্যে ছোট-খাটো ভুল-ত্রুটি যেগুলো আছে সেগুলো দূর করে ফেলেন। সবাই মিলে এক সঙ্গে নামেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা বিএনপির সমস্যা না, এটা বাংলাদেশের সমস্যা, জাতির সমস্যা। এই জাতি ভবিষ্যতে টিকবে কী টিকবে না, আপনার ছেলে-মেয়েরা ভবিষ্যতে চাকরি পাবে কী পাবে না, স্বাধীনভাবে চলতে পারবে কী পারবে না, তার পুরোটা নির্ভর করছে এই সরকারকে আপনি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত করতে পারবেন কী পারবেন না, তার ওপর। নির্বাচন করতে হলে একটা নিরপেক্ষ সরকার লাগবে সেজন্যই আমরা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি।’

তিনি বলেন, ‘তারা (সরকার) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করছে। এই সরকার তার অধীনে তিনটা নির্বাচন পার করেছে। এই তিনটা নির্বাচনই প্রহসন হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে, এভাবে রৈবী রাজনৈতিক পরিবেশে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তাতে কোনো দলই তো নির্বাচনে আসে না। ৬৩টা রাজনৈতিক দল নির্বাচন যায়নি। তাহলে নির্বাচন হচ্ছে কোথায়? সে কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেনজীর সম্পর্কে বলা হচ্ছে নজিরবিহীন দুর্নীতি। একই সঙ্গে সাবেক সেনা প্রধানকে (আজিজ আহমেদ) স্যানশংন দিয়ে দিয়েছে। আরেকজন তথাকথিত এমপিকে কলকাতা নিয়ে টুকুরা টুকুরা করে বটি বটি করেছে। এই তো হচ্ছে চেহারা। এখন সেনা বাহিনীর অবস্থা কী? একটা ইন্সটিটিউশন হিসেবে তার সন্মান-ইজ্জত কোথায় থাকে যখন তার সাবকে প্রধানকে স্যাংশন দেয়, সেই পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা কোথায় থাকে যার সাবেক প্রধানকে পালিয়ে যেতে হয় দেশ থেকে। কার সন্মান কোথায় থাকে। আজকে এরা (সরকার) দেশটাকে এভাবে ধবংস করে দিয়েছে।’

মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক শাহিদা রফিক, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, পেয়ারা মোস্তফা, এলিজা জামান, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবা ইউসুফ, দক্ষিণের রুমা আখতার প্রমুখ।