জি হচ্ছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ‘শিক্ষকদের হাঁসের ডাকের ভিডিও নতুন শিক্ষাক্রমের কিছু নয়’
আজ রোববার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠাভ্যাস উন্নয়নে দেশের ১৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩১ লাখ নির্বাচিত বই (পাঠ্যপুস্তক ছাড়া) বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষাক্রমের নাম দিয়ে একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। একটি ভিডিওতে একাধিক শিক্ষককে হাঁসের ডাক নিয়ে অভিনয় করতে দেখা যায়। আরেকটি ভিডিওতে সাইকেল চালানোর অভিনয় দেখানো হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের বিভাগ বিভাজন কবে, কীভাবে হবে
জাতীয় শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম তারিক আহসান প্রথম আলোকে বলেন, এগুলো নতুন শিক্ষাক্রমের কোনো বিষয় নয় এবং নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণেও এমন কোনো বিষয় নেই। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে উদ্ধৃত্ত করে তিনি বলেন, হাঁসের প্যাক প্যাক ছড়ার মাধ্যমে শিশুদের ভগ্নাংশ শেখানোর একটি কৌশল, যা গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে ছিল। গণিত অলিম্পিয়াড নামে একটা প্রজেক্ট ছিল, যা এখন আর নেই। বর্তমানে এ প্রশিক্ষণও আর হচ্ছে না। অন্য ভিডিওর বিষয়গুলোও নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে নেই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানও দাবি করেন ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলো নতুন শিক্ষাক্রমের কিছু নয়।
ঢাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষকও জানালেন, ভিডিওর বিষয়গুলো নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণে নেই। তিনি মনে করেন এগুলো অপপ্রচার।
এদিকে আজকের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আরও বলেন, অতীতের কোনো প্রশিক্ষণে (যা মাধ্যমিকের নয়) প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনোদনের অংশ হিসেবে নিজেরা নিজেরা যে চর্চা করেছে, সেই রকম কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে এগুলো প্রশিক্ষণ। এমনকি নতুন ভিডিও তৈরি করেও ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ১৫ ‘ভুল তথ্য’–এর যে ব্যাখ্যা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পড়ুন
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন
সন্তানের নম্বরের চেয়ে, সে শিখল কি না, সেদিকে নজর দিন: অভিভাবকদের শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ভয়ানক রকম অপপ্রচার চলছে এবং সেটি হচ্ছে ব্যক্তিস্বার্থ বা গোষ্ঠীস্বার্থহানির ভয়ে। কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন। তার সঙ্গে এখন নির্বাচনের সময়, নির্বাচনের ক্ষেত্রে যাঁরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকেন, তাঁদের উসকানি যুক্ত হয়ে গেছে। অতি ডান, অতি বামের উসকানিও যুক্ত হয়ে গেছে।
শিক্ষাক্রম নিয়ে মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সন্তান কত নম্বর পেল; জিপিএ-৫ পেল কি না; প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হলো কি না; অন্যের সন্তানের চেয়ে নিজের সন্তান বেশি নম্বর পেল কি না—এই বিষয়গুলো নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত ছিলেন বাবা-মায়েরা। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরিতে বর্তমান শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বিষয়গুলোর জন্য মা–বাবার কিছু সংশয় তো কাজ করছেই। সেগুলোকে এই গোষ্ঠী (মিথ্যাচারকারী) কাজে লাগাচ্ছে।
দীপু মনি বলেন, ‘আমি অভিভাবকদের বলব, একটু দেখুন, আপনার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আপনার বাচ্চা যদি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে থাকে, তাহলে তার আচার-আচরণ পরিবর্তন হয়েছে কি না, সে কত নম্বর পেয়েছে, সেদিকে নজর না দিয়ে, সে শিখল কি না, সেদিকে নজর দিন। একটু ধৈর্য ধরুন।’
ভারতের কোচিং–রাজধানী কোটার অন্ধকার দিক
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, দেশের আট শতাধিক বিশেষজ্ঞ নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সবাইকে কোনোও না কোনোভাবে এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওয়েবসাইটে রেখে জনগণের মতামত, পরামর্শ নেওয়া হয়েছে, সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। সবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে, কিছু পরামর্শসহ তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। পরীক্ষামূলক করা হয়েছে। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়েছে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদস