বাংলাদেশে কাকে রেখে কার বিচার করব : সংসদে প্রধানমন্ত্রী
কাকে রেখে কার বিচার করব : সংসদে প্রধানমন্ত্রী
আজ বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘৭৫-এর পর স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়। জাতির পিতাকে হত্যাকারী ও ক্ষমতা দখলকারীরা এই বিকৃতি শুরু করে। ধারাবাহিকভাবে তা ২১ বছর চলতে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষকে সেই বিকৃত ইতিহাস থেকে মুক্তি দেয়। আজকে বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেবল উদ্ভাসিত নয়, দেশের মানুষ ও নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস জানার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এখন বিকৃত করার সুযোগ নেই। কেউ তা করতেও পারবে না। এটা সম্ভবও নয়।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইতিহাস যারা বিকৃতি করেছে, আমি যদি ঠিক ৯৬ এর আগে যাই, তাহলে কাকে রেখে কার বিচার করব? এটা হলো বাস্তবতা। আমি দেখি ’৭৫-এর পর যারাই ছিলেন, এমনকি যারা সত্য কথাটাও জানতেন তারাও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন। এটা হচ্ছে দুর্ভাগ্য। রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা—পুরোনো দিকটায় তাকালে কেউই বাদ যায়নি। খুব স্বল্পসংখ্যক মানুষ এর প্রতিবাদ করেছেন বা সঠিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতাটা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। এদের বিচার করতে গেলে তো কাকে রেখে কার বিচার করব সেটা একটা প্রশ্ন। আমি পরিষ্কার কথা বলি।’
তিনি বলেন, ‘আমার যেটা কাজ সেটা হলো মানুষের কাছে সত্য ইতিহাসকে তুলে ধরা। ইতিহাস আজকে মানুষের সামনে প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ তার চর্চা করছে। আজকের যুবসমাজ ইতিহাস জানতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী, এটাই বড় বিচার। যারা সত্যটা মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে চেয়েছিল তারাই আজকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। সত্য অনেক কঠিন। তবে এর জয় অবশ্যম্ভাবী। বিচার প্রাকৃতিকভাবেই তাদের হচ্ছে।’
আধুনিক, তথ্যনির্ভ সম্পৃক্ত এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা অনন্য বলে মন্তব্য করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জ্ঞান ও দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে আইন অনুযায়ী জেলা প্রশাসকদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।’
আজ বুধবার জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩’ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই সময় চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব ও স্পিকারের একান্ত সচিব এমএ কামাল বিল্লাহের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম। সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এবং বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান বক্তব্য দেন।
স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জেলা প্রশাসকরা যেভাবে করোনা অভিঘাত মোকাবিলা করেছেন, সরকারের নীতি ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও তারা নিবেদিত হলে দেশ সব প্রতিকূলতা দূর করে সামনে এগিয়ে যাবে। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসকরা মাদক সমস্যা রোধ, বাল্যবিবাহ দূরীকরণ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করলে দেশে অচিরেই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গতিশীলতা আসবে।
সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিভাগীয় কমিশনারগণ, জেলা প্রশাসক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় এক দশকের স্থবিরতার পর ২০২২ সালে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ রেকর্ড ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে আজ বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা কোরীয় দূতাবাস জানিয়েছে, এই উল্লম্ফনের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে কোরিয়া থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আমদানি।
মোট ৩০৩ কোটি ডলার বাণিজ্যের মধ্যে কোরিয়া থেকে বাংলাদেশে পণ্য এসেছে ২৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের; বিপরীতে কোরিয়ায় পণ্য গেছে ৬৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারের।
কোরীয় দূতাবাস জানিয়েছে, ২০২২ সালে দ্বিমুখী আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ২০২১ সালে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২১৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার।
কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ২২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালে যা ছিল ৫৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার।
কোরিয়ার রপ্তানি ২০২১ সালে ছিল ১৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের; সে তুলনায় ২০২২ সালে বেড়েছে ৪৪ দশমিক ১ শতাংশ।
কোরীয় দূতাবাস বলছে, ২০২১ এবং ২০২২ সালে বাংলাদেশে কোরিয়ার রপ্তানি বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল কোরিয়া থেকে বাংলাদেশের ডিজেল আমদানি বৃদ্ধি। ২০২২ সালে টাকার অঙ্কে এই জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ ৭০৩ দশকি ৮8 শতাংশ বেড়েছে।
২০২২ সালে ৯৭ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের ডিজেল আমদানি করেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে কোরিয়ার বাংলাদেশে ডিজেল এসেছিল ১২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের। ২০২১ সালে ডিজেল আমদানি আগের বছরের তুলনায় ৪৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
বাংলাদেশে কোরিয়ার অন্যান্য প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে যন্ত্রপাতি, পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য, ইস্পাত এবং কীটনাশকের আমদানি ২০২২ সালে কমার কথা জানিয়ে দূতাবাস বলছে, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর প্রধানত দেশের বৈদেশিক রিজার্ভের পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আরোপিত আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বলে মনে করা হয়।’
কোরীয় দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটি ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো ১০ কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছিল এবং ২০১১ সালে ২০ কোটি মার্কিন ডলার এবং ২০১৩ সালে ৩০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। কিন্তু তারপর প্রায় এক দশক ধরে এটি স্থবির ছিল এবং ২০২০ সালে যা ২ দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল।
কোভিড-১৯ মহামারির বিরূপ প্রভাবের কারণে ৩৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার নেমেছিল। তবে, ২০২১ সাল ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫৫ কোটি ২ লাখ ডলারের বড় অর্জন প্রত্যক্ষ করেছে। যার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির পরিমাণ বছরে ছিল ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ।
কোরীয় দূতাবাস জানিয়েছে, কোরিয়াতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক, খেলাধুলা ও অবকাশ যাপনের সামগ্রী, ব্রোঞ্জ স্ক্র্যাপ রয়েছে। ২০২২ সালে কোরিয়ায় মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ২ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক। দেশটিতে গত বছর রেকর্ড ৫৩ কোটি ৬ লাখ ডলারের গার্মেন্টস পণ্য গেছে বাংলাদেশ থেকে। আগের বছরের তুলনায় এই খাতে বৃদ্ধির পরিমাণ ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
এ ছাড়া, কাগজ পণ্য এবং খাবারে আইটেম ১৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ১৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কাগজের পণ্য এবং খাবারে আইটেম যথাক্রমে ৩৬ লাখ ও ৩১ লাখ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রোঞ্জ স্ক্র্যাপের রপ্তানি ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার হয়েছে।
দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশে কোরিয়ার রপ্তানি ২০১১ সালে ছিল ১৬৩ কোটি ডলার। প্রায় এক দশক ধরে ১২০ কোটি ডলারে সীমাবদ্ধ ছিল। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন এটি ২০২০ সালে আরও নিম্নমুখী হয়ে ১০৩ কোটি ডলারে নেমে যায়। এক দশক স্থবিরতার পরে, এটি অবশেষে ২০২১ সালে আবার ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ডলারে এসে দাঁড়য়। যা আগের বছরের তুলনায় ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে রেকর্ডের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জাং কুন বলেন, ‘২০২৩ সাল কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী, যা কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে আসবে।
‘ব্যবসায়িক খাত বাংলাদেশের সঙ্গে কোরিয়ার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য নীতির সুবিধা নেবে, যা ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ৯৫ শতাংশ কোরিয়ার বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদান করে। কোরিয়াতে নন-ট্রেডিশনাল বাজারে রপ্তানি করলে বাংলাদেশ সরকার থেকে অন্তত ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনার প্রাপ্তির সুবিধা থাকে।’
এ সম্পর্কিত খবর
অর্থনৈতিক অঞ্চলে সাড়ে ৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে তিন প্রতিষ্ঠান
মানিকছড়িতে কার্পাস তুলার ফলন বেড়েছে
কৃষিঋণের সুদ মওকুফের পরিকল্পনা নেই সরকারের প্রতিবেদক
দেশে রিজার্ভ প্রায় সাড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলার
পদোন্নতি পেলেন ৪ অতিরিক্ত ডিআইজি
পুলিশে অতিরিক্ত ডিআইজি থেকে পদোন্নতি পেয়ে চার কর্মকর্তা অতিরিক্ত আইজি হয়েছেন। আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-১ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
পদোন্নতি পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন
পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত জামিল আহমদ, ঢাকার পুলিশ স্টাফ কলেজে কর্মরত মো. হুমায়ুন কবির, পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ওয়াই এম বেলালুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যোগদানপত্র প্রেরণ করবেন এবং পরবর্তী পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান দায়িত্ব পালন করে যাবেন।