ইসরায়েলকে এখন কীভাবে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েলকে এখন কীভাবে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েলে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মিডল ইস্ট আই-এ গত ১৫ এপ্রিল লিখেছেন ডেভিড হার্স্ট। তিনি মিডল ইস্ট আইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক.
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন দুই সপ্তাহ আগে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলার নির্দেশ দিলেন, তখন তিনি ঠিকই জানতেন, তিনি কী করতে যাচ্ছেন। ওই হামলায় ইরানের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড করপসের (আইআরজিসি) কয়েকজন কমান্ডার নিহত হন।
ইসরায়েলের এ হামলার উদ্দেশ্য ছিল, লেবাননভিত্তিক সংগঠন হিজবুল্লাহর কাছে বিদ্যমান অস্ত্রের জোগান সীমিত করা অথবা উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে ইরান-সমর্থিত গ্রুপগুলোকে পিছু হটতে বাধ্য করা। এর মাধ্যমে সিরিয়ায় ইরানি নেতৃত্বকে মুছে দেওয়ার একটা চেষ্টাও ছিল ইসরায়েলের।
ইসরায়েলি হামলা শুরুর ছয় মাস পর গাজা যুদ্ধ খুবই খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। ইসরায়েলি স্থলবাহিনী দৃঢ়চেতা ফিলিস্তিনিদের তুমুল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। ইসরায়েল যতই নির্বিচার হামলা আর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাক, যতই ভোগান্তি বাড়ুক, ফিলিস্তিনিরা আত্মসমর্পণ করবে না বা পালিয়ে যাবে না।
যুদ্ধ যতই দীর্ঘ হচ্ছে, হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে মনোবল ততই দৃঢ় হচ্ছে। তারা মনে করছে, তারা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে টিকে গেছে। তাদের আর হারানোর কিছু নেই। গাজার মানুষ তাদের বিরুদ্ধে যাবে না। রাফা ইসরায়েলের দখলে গেলেও তাতে কোনো সমস্যা দেখা দেবে না। তারা ইসরায়েলের প্রতি গাজার মানুষের মনে ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে পেরেছে, যা হামাসের শক্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলের এমন নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের পর হামাসের বাহিনীতে জনবল নিয়োগ ও অস্ত্রের সরবরাহ বেশ বেড়েছে।
নানা বার্তা
গাজায় ইসরায়েলি হামলা থমকে গেছে, নেতানিয়াহুর প্রতি বিরোধীদের চাপ দিন দিন বাড়ছে। হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলিদের জীবিত ফিরিয়ে আনতে একটি চুক্তিতে যেতে তাঁর সরকারের ওপর প্রকৃত অর্থেই চাপ বাড়ছে।
নেতানিয়াহুর প্রধান সমর্থক ও সহযোগী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখন সবার কাছে অনেকটা দৃশ্যমান হয়ে গেছেন। বিশ্ব জনমত তাঁর বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। নেতানিয়াহুর গোঁয়ার্তুমির কারণে ইসরায়েলে অনেকটা বন্ধুহীন রাষ্ট্র হয়ে পড়ছে।
আবার ইসরায়েল তার নতুন খেলায় নেমেছে। বোঝাতে চাইছে, সে তার অস্তিত্বের জন্য লড়াই করছে। দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালানো নেতানিয়াহুর জন্য বেশ মোক্ষম সময় ছিল। তিনি ভালো করেই জানতেন, এই হামলার অর্থ কী দাঁড়াতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রও ভালো করেই জানত, নেতানিয়াহু কী করছেন। এর মাধ্যমে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে ১৪ বছরের মধ্যে তৃতীয় হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনতে চেয়েছিল। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে সরাসরি বলে দিয়েছে, এই হামলা নিয়ে তাদের করার কিছু নেই।
ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহর ড্রোন, আহত ১৮
ইরান অনেকটা সময় বরদাশত করেছে। নিরাপত্তা পরিষদে কী ঘটেছে, দেশটি সেটা দেখেছে। কনস্যুলেটে হামলার ঘটনায় রাশিয়ার তোলা নিন্দা প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ভেটো দিয়েছে। তারপর ইরান বলেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি বলবৎ করা হলে তারা ইসরায়েলে হামলা চালাবে না। এটাকেও অবজ্ঞা করা হলো। এরপর প্রতিটি পশ্চিমা দেশ ইরানকে ইসরায়েলে হামলা চালাতে নিষেধ করেছিল। বাইডেন তো এক শব্দে ইরানকে পরামর্শ দিয়ে বসলেন, ‘ডোন্ট’ (হামলা করবে না)।
যখন হামলার সময়, তখন ইরান এমনভাবে সবকিছু ঠিকঠাক করেছিল, যার বার্তা যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও আরব অঞ্চলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ইরানের হামলায় নতুন ‘জীবন’ পেয়েছেন নেতানিয়াহু
ইরান কেবল এই নজির স্থাপন করতে চেয়েছিল, পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ছাড়াই ইরান সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে। ইরান কেবল ইসরায়েলকে বলতে চেয়েছে, তারা ইসরায়েলে আঘাত হানতে পারে। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বলতে চেয়েছে, ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি শক্তি। তারা এখানে আছে এবং হরমুজ প্রণালি তারাই নিয়ন্ত্রণ করে এবং করবে। তারা প্রতিটি আরব শাসককে বলতে চেয়েছে, ইসরায়েলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করো না, তাদের প্রতিও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
হাতে গোনা কিছু রকেট জায়গামতো আঘাত হেনেছে, কিন্তু ইরানের প্রতিটি বার্তা পরিষ্কার। এই হামলায় কৌশলগতভাবে তারা সফল। এ অঞ্চলের ‘প্রধান ভাড়াটে গুন্ডা’ হিসেবে ইসরায়েলের যে একটা খ্যাতি ছিল, তাতে আঁচড় পড়ল।
ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড পর্তুগালের পতাকাবাহী জাহাজ এমএসসি অ্যারিসকে আটক করার মধ্য দিয়ে তাদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের বার্তা দেওয়ার শুরু হয়েছিল। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার মতে, জাহাজটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান ভাড়া করেছিল, যার চেয়ারম্যান ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত ধনকুবের আয়াল অফের।
এরপর ইরান ইসরায়েলের দিকে সস্তা ড্রোনের ঝাঁক পাঠিয়েছিল এবং সবাইকে বলেছিল, তাদের প্রস্তুত করতে আট ঘণ্টা লেগেছে।
ইসরায়েলের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রিম আমিনোয়াচ ওয়াইনেট নিউজকে বলেন, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করতে ইসরায়েলের প্রায় ১০০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে।
ইসরায়েলকে সমর্থন দিলেও ইরানের সঙ্গে সংঘাত চায় না যুক্তরাষ্ট্র
ইরানকে ঠেকাতে এটা তো তাদের বিলের সামান্য অংশ মনে হচ্ছে।
অন্তত চারটি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জর্ডান ইরানের ড্রোন ভূপাতিত করে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছিল। আর পঞ্চম দেশটি হচ্ছে সম্ভবত সৌদি আরব। ইরাকের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলের দিকে এই দেশটি হচ্ছে একমাত্র আকাশপথ। আর ষষ্ঠ দেশটি হতে পারে মিসর। এরাই আকাশপথে হামলা ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে।
জবাবে ইরান ১৭০টি সস্তা ড্রোন ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ২৫টি ইসরায়েল ধ্বংস করেছে। এগুলো ছিল ফাঁদ। আসল অস্ত্রের মধ্যে ছিল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং এর কিছুসংখ্যক ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাবূহ্যে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় নেভাটিম বিমানঘাঁটিতে গিয়ে সেসব পড়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘এসব ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। আমরা কখনো জানব না। তবে ইসরায়েলের কাছে একটি বার্তা চলে গেছে, এই দূরত্ব থেকে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা ইরানের রয়েছে। এ জন্য লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের আনসার আল্লাহ বা ইরাকে তাদের মিত্রদের ব্যবহার করতে হবে না।’
ইরানের হামলা কীভাবে কত খরচে ঠেকাল ইসরায়েল
ইসরায়েলে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র ইরানের আসল সমরাস্ত্র সক্ষমতার নমুনামাত্র। হামলার পর ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেছে, তাদের দয়ায় ইসরায়েল যদি জবাব দিতে যায়, তাহলে উপসাগরীয় অঞ্চল ও ইরাকজুড়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঘাঁটি বা স্থাপনা অক্ষত থাকবে না। ২০২০ সালের কুদস বাহিনীর প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর একইভাবে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল ইরান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইরানের দেওয়া বার্তা ছিল বেশ দৃঢ়: ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালাতে প্রস্তুত। বাইডেনকে সরাসরি সতর্ক করাসহ পশ্চিমা বিশ্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইরান এই বার্তা দিয়েছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো মিত্রের বিরুদ্ধে তারা এই কাজ করতে পারে। ইরান যুদ্ধ চায় না। তবে তারা জবাব দিতে সক্ষম।
ইরানের বার্তা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রও যদি যুদ্ধ না চায়, তাহলে তাদের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে। ইসরায়েলকে দীর্ঘদিন ধরে তারা যেভাবে আশকারা দিচ্ছে, সেই কাজ থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। ইসরায়েল মনে করে, এ অঞ্চলে তারা যা খুশি করতে পারবে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা
ভুল পররাষ্ট্রনীতি
নেতানিয়াহু এখন দোটানায় আছেন। তিনি এখন চরম উগ্রপন্থীদের খুশি করার পথ বেছে নিতে পারেন। এ জন্য তিনি ইরানের ওপর পাল্টা হামলা চালাতে পারেন। কিন্তু এ জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাবেন না।
নেতানিয়াহু যদি ইরানে হামলা চালান, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর বর্তমান টানাপোড়েনের সম্পর্কের আরও অবনতি হবে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বিভাগে যারা সত্যিকারের বেপরোয়া, তাদের নিয়েও তিনি হামলা বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে। তবে ২০১০ সালে এমন এক পরিস্থিতিতে তিনি শেষ পর্যন্ত আক্রমণাত্মক কিছু করতে পারেননি।
নেতানিয়াহু যদি কিছু করতে না পারেন, তাহলে তিনি আরও দুর্বল হয়ে পড়বেন। ইতিমধ্যে তিনি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। সে ক্ষেত্রে বিরোধী নেতা ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্টসের কাছে তাঁকে পরাজয় মেনে নিতে হবে। গত রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইরানের বিরুদ্ধে তিনি বেশ আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলেছিলেন। ইসরায়েলের কাছে হারের পর ঠিক এমনই আচরণ করেছিলেন আরব নেতারা।
যুক্তরাষ্ট্রও একইভাবে দেখছে, তিন দশকের মধ্যে পঞ্চমবারের মতো তাদের পররাষ্ট্রনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খাচ্ছে।
আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে উৎখাত, ইরাকে আক্রমণ, লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে উৎখাত, বাশার আল–আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা—এসব সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এখন পঞ্চমবারের মতো গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন তাদের জন্য আরও বড় বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে।
অবশ্য ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র কতটা ভুল করেছে, সেটা বুঝতে তাদের সময় লাগবে। একইভাবে ইরাকে হামলা তাদের কত বড় ভুল ছিল, সেটা বুঝতে তাদের সময় লেগেছিল।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েল যে গণহত্যা চালিয়েছে, তার কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেই। তাঁর এই বক্তব্যের সঙ্গে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়ালের বক্তব্যের ভয়াবহ মিল রয়েছে। পাওয়েল জাতিসংঘে বক্তৃতায় বলেছিলেন, ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেনের কাছে যে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে, সেই প্রমাণ তাঁর কাছে আছে। বাস্তব অর্থে ২০০৩ সালের তাঁর সেই বক্তৃতার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষয় হতে থাকে। এভাবে প্রতিবছরই দেশটি দ্রুতই তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।
পরে পাওয়েল তাঁর সেই বক্তব্যের জন্য অনুশোচনা করেছিলেন। অস্টিনও একসময় একইভাবে অনুশোচনা করবেন।
নরকের স্থান
ইসরায়েল এখন তার সহযোগীদের নরকের স্থানে টেনে আনতে চাইছে, যেখানে কোনো শান্তি নেই, কারও ভবিষ্যৎ নেই, হামাসের পরাজয় নেই, যুদ্ধ-পরবর্তী সরকারের কোনো রূপরেখা নেই। এ অঞ্চলের অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীকে প্রতিরোধের ক্ষমতা ক্ষয়ে আসছে এবং ইসরায়েলের প্রায় সব সীমানায় যুগপৎভাবে আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা জেগে উঠেছে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী সম্ভবত গত রোববার সবচেয়ে বেকুবি কাজটি করে বসেছে। তারা প্রকাশ্যে অহংকার করে বলেছে, জর্ডানের বিমানবাহিনী গুলি করে ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার মাধ্যমে তাদের সহায়তা করেছে।
ইসরায়েলের সূত্রগুলো গর্ব করে বলেছে, জেরুজালেমমুখী ক্ষেপণাস্ত্রগুলো জর্ডান উপত্যকায় জর্ডানের বাহিনী ভূপাতিত করেছে। বাকি যা ছিল, সেগুলো সিরিয়ার সীমান্তে শেষ করা হয়েছে।
এ কথার মাধ্যমে ইসরায়েলে বার্তা দিতে চেয়েছে, প্রকাশ্যে না হলেও এ অঞ্চলে ইসরায়েলের এমন মিত্র রয়েছে, যারা তাদের সুরক্ষায় প্রস্তুত।
কিন্তু এটি হচ্ছে ইসরায়েলের বোকামিপূর্ণ খেলা। তারা যদি চরম জন-অসন্তোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে জর্ডানের চরম দুর্বল রাজতন্ত্রকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে সীমান্তে সেই ঝড় আঘাত হানতে বাধ্য।
অতীতে জর্ডানের দুই চেহারা থাকতে পারে। প্রয়াত বাদশা হোসেন তাঁর ধূমপায়ী বন্ধু সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনকে গোয়েন্দা তথ্য পাচার করতেন।
তবে যত দূর মনে পড়ে, এবারই প্রথম ‘আরব আর্মি’ নামের জর্ডানের সেনাবাহিনী ইসরায়েলের সীমান্ত রক্ষায় সরাসরি যুদ্ধে নেমেছে। এমনটা আগে কখনো দেখা যায়নি।
বিরাট ভুল
জর্ডানের জনগণের বড় একটি অংশ ফিলিস্তিনি ও পশ্চিম তীরের বংশোদ্ভূত। সেই মানুষ যখন ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দেখে উল্লসিত, তখন জর্ডানের সেনাবাহিনী ইসরায়েলের হয়ে সেগুলো গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
ইসরায়েলের কেবল সম্পর্ক রয়েছে আরব নেতাদের সঙ্গে, যাঁদের কাছে জনগণের ইচ্ছার কোনো দাম নেই। তাদের দুর্নীতিপরায়ণ সরকার জনগণের ওপর চেপে বসে আছে। জর্ডান সরকারের পদক্ষেপ ইসরায়েলকে হয়তো স্বল্প মেয়াদে উদ্ধার করতে পেরেছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ইসরায়েলের সীমান্ত বড় ধরনের ঝামেলার মধ্যে পড়বে।
ইসরায়েল হয়তো খুশি হতে পারে এই ভেবে, তাদের প্রকৃত মিত্র রয়েছে। কিন্তু এটা করে তারা তাদের সেসব মিত্রের বৈধতাকে খাটো করছে।
ইরান এ হামলার মাধ্যমে বিষয়টি দেখিয়ে দিয়েছে। এতে ইসরায়েল আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এই প্রথম ইরান সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে বার্তা দিয়েছে, তারা যুদ্ধে আগ্রহী নয়। এটাও প্রথম, বাইডেন ইসরায়েলকে পাল্টা হামলা না চালাতে বলেছেন। এ ধরনের হামলার পর পরিস্থিতি এমন—নিজেকে রক্ষায় ইসরায়েলের অন্যদের সহায়তা দরকার এবং কীভাবে পাল্টা হামলা চালাবে, সেই সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে নেওয়ার ক্ষমতা নেই তাদের।
ইরানের হামলার পর ইসরায়েলের রক্ষাকারী যুক্তরাষ্ট্র সব বিকল্পের দিকে নজর রাখছে। এ মুহূর্তে তাদের জন্য কোনো কিছুই ভালো মনে হচ্ছে না