আইওয়া: ট্রাম্পের বড় বিজয় হোয়াইট হাউসের লড়াইয়ে কী বার্তা দেয়
আইওয়া: ট্রাম্পের বড় বিজয় হোয়াইট হাউসের লড়াইয়ে কী বার্তা দেয়
চলতি বছরের শেষ দিকে হবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আইওয়া অঙ্গরাজ্য থেকে। শুরুতেই প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আইওয়ায় বড় জয় পেয়েছেন তিনি।
আইওয়ায় যে ট্রাম্প জয় পেতে যাচ্ছেন, তাতে অবাক হওয়ার মতো অবশ্য কিছু ছিল না। কিছুদিন ধরে যেসব জরিপ হচ্ছে, তাতে রিপাবলিকানদের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ এগিয়েই ছিলেন ট্রাম্প।
তবে আইওয়ায় দেখা গেল রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হ্যালি বা রন ডি স্যান্টিসের কেউই তাঁর জন্য বড় বাধা হয়ে উঠতে পারেননি। এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে মতাদর্শিক মিল থাকা বিবেক রামাস্বামী প্রার্থী হওয়ার লড়াই থেকে সরে গেছেন। একই সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হতে ট্রাম্পের পক্ষেই সমর্থন থাকবে তাঁর।
পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য আইওয়ায় হওয়া রিপাবলিকানদের প্রার্থী বাছাইয়ের (ককাস) ফল অনেক কারণে গুরুত্ব বহন করে। কেন আইওয়ার এ ফল গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরা হলো—
এখনো দলটি ট্রাম্পেরই
আইওয়ায় ট্রাম্প যে শুধু জয়ী হলেন, তা কিন্তু নয়। বিপুল ব্যবধানে অন্যদের হারিয়েছেন তিনি। আইওয়ার ৯৯ কাউন্টির ৯৮টিতে জিতেছেন ট্রাম্প। একটিতে হেরেছেন মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে। মোট ভোট গণনায় ট্রাম্প ৫১ শতাংশ, ডি স্যান্টিস ২১ শতাংশ ও হ্যালি ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
আইওয়ায় রিপাবলিকান ভোটারদের নিয়ে গত সোমবার রাতের এক জরিপের ফলাফল দেখলে বোঝা যাবে ট্রাম্প কেন এ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেন, যেটা আইওয়ার ইতিহাসে আগে ঘটেনি।
জরিপে অংশ নেওয়া রিপাবলিকান ভোটার অর্থাৎ দলীয় সদস্যদের প্রায় অর্ধেকই জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ প্রচারণার অংশ মনে করেন।
ট্রাম্প যে একতরফা কোনো একটি অংশের ভোট পেয়েছেন, তা–ও কিন্তু নয়। তিনি তরুণদের ভোট যেমন পেয়েছেন, তেমনি প্রবীণেরাও তাঁকে ভোট দিয়েছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ভোট দিয়েছেন। ২০১৬ সালে ধর্মীয় রক্ষণশীল (ইভানজেলিক খ্রিষ্টান) ও কট্টরপন্থীদের ভোট পেতে যে বেগ পেতে হয়, এবার তা–ও হয়নি।
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ভোটারদের স্মৃতিতে ফিকে হয়ে আসেন। তাঁরা সেভাবে নাড়া দিতে পারেন না। তবে ট্রাম্প ব্যতিক্রম। তিনি রিপাবলিকানদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে সেটা এই আইওয়াতে এবং জাতীয়ভাবেও, তিনি হারেননি।
গত সোমবার আইওয়ায় রিপাবলিকানদের ককাসে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ বলেছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ‘প্রকৃত বিজয়ী’ ছিলেন ট্রাম্প। জরিপে দেখা যাচ্ছে যে ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে এখন ৯০ শতাংশই এমন ধারণা পোষণ করেন।
আইওয়া ককাসে বড় জয় ট্রাম্পের
রিপাবলিকান পার্টিতে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু আইওয়ার এমন ফলকে বড় পরিসরে বিবেচনায় নিলে সেটি আধুনিক আমেরিকার রাজনীতির জন্য বড় এক ঘটনা।
তিন বছর আগে বিতর্ক ও সমালোচনার মধ্য দিয়ে প্রথম দফায় প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেনের কাছে হারেননি—বারবার ট্রাম্পের করা এ অভিযোগ বিশ্বাস করে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে হামলা করেন তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। সেই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। যেসব মামলার বিচার এখনো চলমান।
আইওয়ায় বড় ব্যবধানে জয় পাওয়ার মধ্য দিয়ে সেই ট্রাম্পই এখন আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে গেলেন। তবে দলীয় প্রার্থী হতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে তাঁকে। আগামী সপ্তাহে নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যে ককাস হবে। সেখানে নিকি হ্যালির কাছে ট্রাম্পকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি হওয়া একাধিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, একসময় একাধিপত্য থাকলেও সেখানে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখন নিম্নগামী। যদিও এখনো রাজ্যটিতে জনপ্রিয়তায় অনেকটা এগিয়ে আছেন ট্রাম্প।
শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই
সোমবার আইওয়ায় হওয়া ককাসে ট্রাম্পের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কে হবে, তা নিয়ে নানান জল্পনাকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, ফ্লোরিডার গভর্নর ডি স্যান্টিস ‘রানার–আপ’ হয়েছেন।
আইওয়ায় ট্রাম্প যে পরিমাণ ভোট পেয়েছেন, তাঁর নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মিলে তার সমান ভোট পাননি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভোটের এই বড় ফারাক ট্রাম্পের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়াটা আরও অবশ্যাম্ভাবী করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে ট্রাম্পের ‘বিভাজন তৈরি করে জয়ী হও’ নীতি তো এখনো বেশ কার্যকর।
এদিকে রামাস্বামী প্রার্থী হওয়ার লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াটা ট্রাম্পের জন্য শাপে বর হয়ে এসেছে। মতাদর্শগত মিল থাকায় দুজনের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তবে রামাস্বামী সরে যাওয়ায় এখন সেই ঝামেলা নেই। এতে মাঠ পরিষ্কার হয়েছে।
জরিপেও দেখা যাচ্ছে, রামাস্বামীর সমর্থকেরা তাঁদের দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে ট্রাম্পের কথা বলেন। যদিও আইওয়ায় মাত্র ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন রামাস্বামী। এদিকে রামাস্বামী ট্রাম্পকে সমর্থনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে নিউ হ্যাম্পশায়ার ককাসে তাঁর ভোট ট্রাম্প পাবেন বলেই ধারণা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখন পর্যন্ত রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেউ গড়তে পারেননি। সেটি হোক মাঠে বা ভোটে। ট্রাম্প আইওয়ার মতো করে টানা আরও কয়েকটি রাজ্যে বড় ব্যবধানে জয় পেলে তাঁর প্রার্থী হওয়ার পথ সুগম হবে