আগামী সোম-মঙ্গলবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল!
আগামী সোম-মঙ্গলবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল।
গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডেকেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৮টি দল অংশ নেয়নি সেই সংলাপে। যারা অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যেও বেশ কয়েকটি দল উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তবে সেই আপত্তি আমলে নিচ্ছে না ইসি। বরং তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এই তফসিল আগামী সপ্তাহেই ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন আগামী বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে। এরপরই নির্বাচন কমিশনের কমিশন সভায় তফসিল ঘোষণার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। সেক্ষেত্রে আগামী সোমবার অথবা মঙ্গলবার (১৩ বা ১৪ নভেম্বর) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী, সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হবে।
এই হিসাবে ৯০ দিনের নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়েছে গত ৩১ অক্টোবর থেকে। একই হিসাবে আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভেদ থাকলেও নির্বাচন কমিশন সেই বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। নির্বাচন আয়োজনের যাবতীয় প্রস্তুতিও তারা গুছিয়ে এনেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা শেষের পথে রয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনি উপকরণ মাঠপর্যায়ে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেছে ইসি। চলছে বিভিন্ন ধরনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি সরকারি মুদ্রণালয়কে ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য উপকরণ ছাপানোর নির্দেশনাও দিয়েছে কমিশন। নভেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল ঘোষণা করার সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে তারা।
এ পরিস্থিতিতে আগামী ১৩ অথবা ১৪ নভেম্বর নির্বা
চনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানা যাচ্ছে ইসির একাধিক সূত্র থেকে। সাধারণত তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত ৪৫ থেকে ৬০ দিন সময় হাতে রাখা হয়। সে হিসাবে ১৩ বা ১৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা হলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করার সম্ভাবনা বেশি।
সংসদ নির্বাচনে সামনে রেখে ‘স্পেস ও টাইম’ সীমিত উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিবদমান সংকট নিরসনে নির্বাচন কমিশনের কোনো ম্যান্ডেট নেই। দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকটের সমাধান করে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।
ভোট সামনে রেখে ‘সময় ফুরিয়ে আসছে’ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, আমাদের স্পেস ও টাইমটা সীমিত। আমরা কিন্তু অনেক বেশি স্পেস নিয়ে কাজ করতে পারি না। আমাদের জন্য সময়সীমা সংবিধানে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের নির্বাচন করতে হবে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্ধারিত পদ্ধতির মধ্যে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন হবে। আমরা সেই ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে অবস্থানে আছি।’
অন্যদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলেই মনে করছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হবে। এখন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণারা অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।’
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি সাত লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন, নারী ভোটার সংখ্যা পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। এ ছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২ জন। নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ১০৩টি। ভোটকক্ষ রয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজারের মতো।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর