দাগনভূঞায় হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর রসের ঐতিহ্য
দাগনভূঞা (ফেনী) প্রতিনিধি
দাগনভূঞায় হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর রসের ঐতিহ্য
ফেনীর দাগনভূঞায় সেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য সুস্বাদু খেজুরের রস এখন তেমন দেখাই যায় না। পৌষ আর মাঘ মাসে কনকনে শীত এমনি শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে সুস্বাদু খেজুরের রস খাওয়ার মজাই আলাদা।
সময়ের পরিক্রমায় আধুনিক নগরায়নের ফলে মানুষের দেন ধারণা বদলানোর কারণে দাগনভূঞায় হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস এবং খেজুর গাছ। গাছ বসানো গরিবের পেশা হলেও কিন্তু রস খাওয়া ধনীদের নেশা। শখের রস খোঁজে বেশিরভাগই ধনী।
দাগনভূঞায় অধিক দাম দিয়ে পার্শ্ববর্তী সোনাগাজী উপজেলা থেকে নিয়ে আসতে হচ্ছে খেজুরের রস। দাগনভূঞার প্রত্যন্ত অঞ্চলে খেজুর গাছ ও গাছীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় কমেছে রস। বৃক্ষ রোপণ অভিযানে খেজুর গাছের প্রকল্প না থাকায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ।
কয়েক বছর আগেও শীতের মৌসুমে দাগনভূঞায় গ্রামের কিছু লোকের জীবিকা চলতো গাছ চাটানো আর সুস্বাদু রস বিক্রি করে। যখন শীত বেশি পড়তো রসও বেশি পড়তো। সকাল বেলা রস কিনতে সবাই গাছতলায় চলে আসতো।
এখন শীতের মৌসুম আসলে দেখা যায় না দা-কাচি, এক গাছি দড়ি, এক দন্ড বাঁশ এবং কোমরে ঝোলানো হাড়ি ঝুলানো লোক।
যেমন কমেছে গাছ, তেমনই কমেছে গাছি। তাই সহজে মিলছে না সুস্বাদু খেজুরের রস। কয়েক বছর আগেও দেখা গেছে হেমন্তের শুরুতে প্রাথমিক গাছ চাটানোর হিড়িক। দাগনভূঞার গ্রামে গ্রামে, খাল পাড়, পুকুর পাড় কবর স্থানের চারপাশে, রাস্তার দুধারে বা খেতের আল ঘেঁষে বেড়ে উঠত খেজুর গাছ। শত শত গাছ কাটতেন গাছিরা। প্রতিটি গাছের ১২/১৫ টি পাতা রেখে গাছের উপরিভাগের বাকলসহ অপ্রয়োজনীয়তা অংশ পরিষ্কার করতেন গাছিরা। আড়াআড়িভাবে বেঁধে রাখতেন বাঁশ। বাঁশের ওপর দাঁড়িয়ে কোমর বেঁধে রশি পেঁচিয়ে ধারালো দা দিয়ে গাছিদের গাছ চাটানোর দারুণ দৃশ্য এখন দাগনভূঞায় তেমন দেখা যায় না।
ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোবারক হোসেন জানান, তিনি যখন ছোট ছিলেন তার দাদাসহ ১২-১৫ জন লোক শীতকাল আসলে রস সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত থাকতেন। নেই তাদের গোসল, নাই তো নির্দিষ্ট সময়ে ভাত খাওয়া। তখন প্রচুর রস পাওয়া যেত। যেমন ছিল ঘরে ঘরে রস, তেমন ছিল সস্তা। প্রতি কেজি রসের দাম ৩০/৪০ টাকা। প্রতি ঘরে ঘরে মৌ মৌ ঘ্রাণ পাওয়া যেত। কে কিনবে কার রস! পাওয়া যাইত প্রচুর পরিমাণে গুড়। আরও পাওয়া যেত রসের পায়েস। যা গ্রাম অঞ্চলে রসের শিন্নি নামে পরিচিত। কিন্তু বর্তমানে খেজুর গাছ নেই বললে চলে। নেই কোনো নতুন গাছ লাগানোর প্রকল্প। কমে যাচ্ছে খেজুরের গাছ আর রস।
গাছী রিপন চন্দ্র দাস জানান, আমাদের নিজের কোন গাছ নেই। আমার ভাই এ অঞ্চলের মানুষের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন পরবর্তীতে আমি সংগ্রহ করতাম। কিন্তু বর্তমানে পুরাতন গাছগুলো সব মরে গিয়েছে নতুন কোনো গাছ না থাকায় এখন আর রস সংগ্রহ হয় না। আগের দিনের মুরুব্বিরা খেজুর গাছ লাগাতেন কিন্তু এখনকার মুরুব্বিরা গাছ লাগায় না। যত দিন যাচ্ছে সবাই কেমন যেন অলস হয়ে যাচ্ছে।
প্রবীণ শিক্ষক রুহুল আমীন জানান, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ১০ পার্সেন্ট খেজুর গাছের চারা থাকলে ভালো হতো। আগের তুলনায় গাছ না থাকায় পার্শ্ববর্তী উপজেলা সোনাগাজী থেকে এনে শীতের মৌসুমে অধিক দামে বিক্রি হয় খেজুরের রস। প্রতি কেজি রসের দাম ৮০/১০০ টাকা। টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না সুস্বাদু খেজুরের রস