রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৮১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রোডের বাসভবন ফিরোজায় নিয়ে আসা হয় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে।
গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার এই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল খালেদা জিয়াকে।
এর আগে সন্ধ্যার পর বারিধারার এই হাসপাতাল থেকে গুলশানে নিজের বাসভবনের উদ্দেশে যাত্রা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এসময় গাড়ির পেছনে অবস্থান নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা তার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। খালেদা জিয়া হাসপাতালে থেকে বাসা পৌঁছানো পর্যন্ত পুরো সময় নেতাকর্মীরা তার গাড়ির পেছনে অবস্থা নেন।
খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বর্তমানে খালেদা শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে। কিন্তু এভারকেয়ার হাসপাতালে ৩৮০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে খালেদা জিয়াও যদি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই তাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া নিরাপদ বোধ করছি।
এদিকে খালেদা জিয়াকে বাসায় আনার খবরে গুলশানে বাসভবন ফিরোজা সামনে জড়ো হয় বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বাসার সামনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতির কারণে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা কিছুটা বিরক্ত বোধ করেন। বারবার ফিরোজার সামনে থেকে নেতাকর্মীদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকে অনুরোধ জানায় পুলিশ। তারপরও নেতাকর্মীরা ফিরোজার সামনে অবস্থান নেন।
পুলিশের বলার পরও দলীয় নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিলে একপর্যায়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কিছুটা ধমকের সুরে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিতে দেখা যায়।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তিনি। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর তার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেয় সরকার। এরপর গুলশানের ভাড়া বাসায় ওঠেন তিনি।
গত বছর এপ্রিলে করোনা সংক্রমণ হলে এভারকেয়ার হাসপাতাল ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সে দফায় ৫৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফিরেছিলেন তিনি।
এরপর কয়েক মাস না যেতেই গত নভেম্বরে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তার চিকিৎসায় ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীর অন্তত দুটি বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তার চিকিৎসায় যুক্ত হন।
পরীক্ষা–নিরীক্ষায় খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস ধরা পড়েছিল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন। চিকিৎসায় শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গত ৯ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে কেবিনে নেওয়া হয়। ৮১ দিন পর আজ তিনি বাসায় ফিরেছেন তিনি