. ইউনূসের গ্রামীণ কল্যাণকে ১১৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে
ড. ইউনূসের গ্রামীণ কল্যাণকে ১১৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে
ঢাকা: শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ কল্যাণকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দাবিকৃত ১১৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
এনবিআরের দাবির বিরুদ্ধে গ্রামীণ কল্যাণের রেফারেন্স মামলা খারিজ করে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সরদার মো. জিন্নাত আলী, ওমর আলী ও দেলোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আজকের এই রায়ের ফলে ২০১১-২০১২ থেকে ২০১৬-২০১৭ করবর্ষ পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দাবি করা অবশিষ্ট ১১৯ কোটি টাকা গ্রামীণ কল্যাণকে পরিশোধ করতে হবে
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সরকারের রাজস্ব বিভাগ (এনবিআর) ড. ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ কল্যাণের কাছে ৫৫৫ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৬২৪ টাকা কর দাবি করে। এই টাকার মধ্যে গত কয়েক বছরে ৪৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৪ টাকা পরিশোধ করেছে গ্রামীণ কল্যাণ। এখন গ্রামীণ কল্যাণকে অবশিষ্ট ১১৯ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ১৯০ টাকা (আয়কর, উৎসে কর বাবদ) পরিশোধ করতে হবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গ্রামীণ কল্যাণের ২০১১-১২ থেকে ২০১৬-১৭ করবর্ষের সাতটি আয়কর রিটার্নে আয়-ব্যয়, আয়কর, উৎসে কর নিয়ে যে হিসাব দেখানো হয় সে বিষয়ে উপ কর কমিশনার অ্যাসেসমেন্ট করে আপত্তি জানায়। এবং গ্রামীণ কল্যাণের এ সম্পর্কিত সাতটি আবেদন খারিজ করে দেন। কারণ আয়কর রিটার্নে যেসব খরচ বা ব্যয় দেখানো হয়েছে তার সমর্থনে প্রমাণিক বা দলিল দেখাতে না পারায় ওই রিটার্নে দেখানো খরচের হিসাব বাতিল করে তা আয়ের সঙ্গে যোগ করা হয়। এর ফলে গ্রামীণ কল্যাণের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর, উৎসে কর বাবদ অতিরিক্ত অর্থ দাবি করে।
উপ কর কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করে গ্রামীণ কল্যাণ। এর ধারাবাহিকতায় আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করে গ্রামীণ কল্যা
আপিল ট্রাইব্যুনাল গ্রামীণ কল্যাণের কাছে এনবিআরের দাবিকৃত ৫৫৫ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৬২৪ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে ২০১৬ সালে রায় দেন।
তবে আপিলের প্রতিটি স্তরে গ্রামীণ কল্যাণকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরকারের রাজস্ব বিভাগে জমা দিতে হয়েছে। এভাবে গ্রামীণ কল্যাণকে আপিলের বিভিন্ন ধাপে ৪৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৪ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। অর্থাৎ এনবিআরের দাবিকৃত টাকার মধ্যে পরিশোধের বাকি আছে ১১৯ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ১৯০ টাকা।
পরে আপিল ট্রাইব্যুনালের এই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর হাইকোর্টে সাতটি রেফারেন্স মামলা দায়ের করে গ্রামীণ কল্যাণ। আজ গ্রামীণ কল্যাণের রেফারেন্স মামলা খারিজ করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে অবশিষ্ট ১১৯ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ১৯০ টাকা (আয়কর, উৎসে কর বাবদ) গ্রামীণ কল্যাণকে পরিশোধ করতে হবে।
তবে গ্রামীণ কল্যাণের আইনজীবী সরদার জিন্নাত আলী সারাবাংলাকে বলেন, আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে সাতটি রেফারেন্স মামলা করেছিলাম। আজ আদালত আমাদের রেফারেন্স মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে গ্রামীণ কল্যাণের সঙ্গে আলোচনা করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গ্রামীণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনতে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা, তথ্য প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ এবং সারা দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন সেবা প্রদান করার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৯৬ সালের ৬ নভেম্বর গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ কল্যাণের সম্মানীত অবৈতনিক চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন।