সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে তিন শূন্যের ধারণা তুলে ধরলেন ড. ইউনূস জলবায়ু সম্মেলন 

সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে তিন শূন্যের ধারণা তুলে ধরলেন ড. ইউনূস জলবায়ু সম্মেলন 

প্রথম সময় ডেস্ক

সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে তিন শূন্যের ধারণা তুলে ধরলেন ড. ইউনূস

জলবায়ু সম্মেলন 

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে তিন শূন্যের ধারণা বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে হলে গ্রহণ করতে হবে ভিন্ন জীবনধারা। গড়ে তুলতে হবে ভিন্ন সংস্কৃতি। সেটা হতে পারে তার দীর্ঘদিনের লালিত ‘থ্রি জিরো’ বা ‘তিন শূন্য’ ধারণা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। বুধবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৯) বিশ্বনেতাদের সামনে এ ধারণা তুলে ধরেন তিনি। 

ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি তরুণ এই তিন শূন্যের নীতি নিয়ে বেড়ে উঠবে- শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, সম্পদের শূন্য পুঞ্জিভূতকরণ ও শূন্য বেকারত্ব। সেটা সম্ভব হবে কেবল সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে। প্রতিটি মানুষ এই তিন শূন্যের নীতি নিয়ে বেড়ে উঠবে। সেই পথ ধরেই নতুন সভ্যতা গড়ে উঠবে। 

তিনি বলেন, পরিবেশের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন নতুন একটি জীবনধারা যে জীবনধারা চাপিয়ে দেওয়া নয়। এ জীবনধারা মানুষকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেবে। সেজন্য মানুষকে যা করতে হবে, তা হলো এই পৃথিবী এবং এর সকল বাসিন্দার জন্য মঙ্গলজনক একটি জীবনধারা বেছে নেওয়া। শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য দারিদ্র্য আর শূন্য বেকারত্ব অর্জনের পথ ধরে মানুষ পৌঁছাতে পারে সেই নতুন জীবনধারায়, যা আত্মবিধ্বংসী নয় বরং নিজেই নিজের আবাসভূমিকে রক্ষা করবে।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা জেনেশুনে এই ধ্বংসপ্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। এমন এক জীবনধারা আমরা বেছে নিয়েছি যা পরিবেশের ক্ষতির কারণ। যে অর্থনৈতিক কাঠামো মানুষ গড়ে তুলেছে, তা কেবল সীমাহীন ভোগবাদে উৎসাহ দেয়। আপনি যত বেশি ভোগ করবেন, তত বেশি উৎপাদন আপনাকে করতে হবে। যত বেশি উৎপাদন করবেন, তত বেশি অর্থ উপার্জন করবেন। আমাদের সকল কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে সর্বোচ্চ লাভের ওই আকাঙ্ক্ষা যা কি না এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমস্ত কিছুকে আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী পরিচালিত করে। 

তিনি বলেন, শূন্য বর্জ্যের নীতি মানুষের ভোগে লাগাম দেবে। এতে কোনো বর্জ্য অবশিষ্ট থাকবে না। এটা সেই জীবনধারা যেখানে কার্বন নিঃসরণ নামবে শূন্যের ঘরে, কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি মানুষ ব্যবহার করবে না। মানুষের চাহিদা মেটাবে কেবল নবায়নযোগ্য জ্বালানি। নতুন এই অর্থনীতি গড়ে উঠবে প্রাথমিকভাবে শূন্য ব্যক্তিগত লাভের নীতিতে। সামাজিক ব্যবসা হবে এর ভিত্তি। এটা সেই ব্যবসা কাঠামো যার উদ্দেশ্য থাকবে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যার সমাধান করা, ব্যবসা থেকে লাভ করা নয়। সামাজিক ব্যবসার একটি বড় অংশ নজর দেবে পরিবেশ ও মানবজাতির সুরক্ষার দিকে।

অধ্যাপক ইউনূস জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে ৪ দিনের সফরে এখন বাকুতে রয়েছেন। ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি বিজয়ী, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত ২০ জন শীর্ষ নেতা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রফেসর ইউনূস কপ২৯ ভেন্যুতে বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও তুর্কি ফার্স্ট লেডির সাক্ষাৎ করেন।

বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টা এছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ও নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পোডেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও তাকে শুভেচ্ছা জানান। অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক ইউনূস বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী, ঘানার প্রেসিডেন্ট, বসনিয়া হার্জেগোভিনার প্রধানমন্ত্রী, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী, মন্টিনিগ্রোর প্রেসিডেন্ট, বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী, ব্রাজিল ও ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ফিফা সভাপতি ও আইওএম-এর মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া আল-আজহার আল শরীফের গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ আল তাইয়েব এদিন বাকুর রিৎজ কার্লটন হোটেলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন