চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের পোশাক বাবদ সরকারের বরাদ্দ দেওয়া টাকা সিআরবির বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) ডা. চিন্ময় বিশ্বাস এবং স্টেনোগ্রাফার মো. সোহেল এবং ঠিকাদার সুব্রত পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হতে লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে রেল শ্রমিক নেতা আলহাজ সিরাজুল ইসলাম এবং মিজানুর রহমান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক শুভকে অগ্রিম বিল পাইয়ে দিতে স্টেন সোহেল কূটকৌশল করে ডিএমওকে ম্যানেজ করা হয়েছে। তারা বলছেন, বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) ডা. চিন্ময় বিশ্বাস শ্রমিকদের পোশাক তৈরির আগেই ঠিকাদারকে বিল প্রদান করে রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
বিগত বছরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ অধিশাখার বরাদ্দর পরিপত্রর নথিতে দেখা যায়, পরিচ্ছন্নকর্মীদের পোশাক বাবদ জনপ্রতি ৭ হাজার ২৫০ টাকা করে অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে। একই শ্রমিককে পোশাক বাবদ চলতি বছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৯০০ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল অফিসার ডা চিন্ময় বিশ্বাস। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াস মাত্র।
তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড়ের পাশাপাশি কি রঙের পোশাক দেওয়া হবে সেটিও নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
চিন্ময় জানান, পোশাক বাবদ এ বছর ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু একই মন্ত্রণালয় গত বছর বরাদ্দ দিয়েছে ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৭৫০ টাকা। এখানে ডিএমও চিন্ময় বিশ্বাস ৪ লাখ ৭৫০ টাকা তথ্য গোপন করেছেন।
শ্রমিকদের পোশাক বাবদ টাকা কম দেওয়ার অভিযোগ ডিএমও স্বীকার না করলেও তিনি বলেন, লাকসাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর এবং পাহাড়তলীর কোনো শ্রমিক টাকার বিষয়ে অভিযোগ করেননি। শুধু সিআরবির কয়েকজন অভিযোগ তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘যা মনে চায় তাই লিখেন।’ চিন্ময় বিশ্বাস দাবি করেন এ বছর চাঁদা না দেওয়ায় নানা অভিযোগ তুলেছে শ্রমিক নেতারা। তিনি দাবি করেন বিগত সময়ের চেয়ে এ বছর সুসমবণ্টন হয়েছে।
বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ রয়েছে স্টেনোগ্রাফার মো. সোহেলের বিরুদ্ধে। মিডিয়ায় পাওয়া ভিডিও ফুটেজে সোহেলের বিরুদ্ধে এর প্রমাণও মিলেছে। রাতের আঁধারে চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে শ্রমিকদের পোশাক বাবদ সাড়ে তিন হাজার টাকা প্রদানের কথা স্বীকার করেন সোহেল। যার ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ রয়েছে। দুর্নীতির মূলহোতা স্টেনোগ্রাফার সোহেল দীর্ঘ বছর ধরে একই চেয়ারে অধিষ্ঠিত রয়েছে। তার দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের অপরাধ করতে উৎসাহ করেন তিনি।
গত নিয়োগে ৫ জন স্টেনোগ্রাফার নেওয়ার সার্কুলার দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সোহেল পরিবারের ভাই-ভাবিসহ চারজন নিয়োগ পান। এরপর সোহেলকে আর পেছনে ফিরে দেখতে হয় না। যত বড় কঠিন কাজই হোক সব যেন তার কাছে পানির মতো সহজ হয়ে যায়। এর আগের ডিএমও ফাতেমা সোহেলের বিরুদ্ধে পূর্বের জিএমের কাছে অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু অদৃশ্য হয়ে যায় সেই অভিযোগ।
ডিএমও বদলি হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন স্টেনোগ্রাফার সোহেল। শ্রমিক নেতা স্টুয়ার্ড মিজান বলেন, সোহেলকে বদলি করলে চট্টগ্রামে দুর্নীতি কমে যাবে। অপরাধের মূলহোতা স্টেনোগ্রাফার। অভিযোগের বিষয় জানতে সোহেলকে একাধিকবার ফোন এবং মেসেজ করা হয়। কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
সোহেল প্রতিবেদকের নম্বর ব্লাকলিস্ট করে রাখেন। মিডিয়াকর্মীর নাম শুনলে তার নম্বর ব্লাকলিস্ট করে রাখেন। ঠিকাদার শুব্রত চৌধুরী শুভর ব্যক্তিগত নাম্বারে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। পোশাক কেলেঙ্কারির অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে পূর্বের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার শ্বশুরের মৃত্যুর সংবাদ শুনে তাকে আর কোনো প্রশ্ন করা হয়নি।
রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার পোশাকের টাকা বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে বলেন, দুর্নীতির প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, অর্থ ছাড়ের শ্রমিক কমবেশি হলে টাকার পরিমাণও বেশিকম হবে। তবে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেবেন কিনা জানতে রেল সচিব মো. সেলিম রেজাকে এসএমএস করা হয় এবং ফোনে উত্তর চাওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি এবং এসএমএসের উত্তর ও দেননি