ফেনীর গ্রামে অনন্য নির্মাণশৈলীর দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।

ফেনীর গ্রামে অনন্য নির্মাণশৈলীর দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।

আবু তাহেরফেনী

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর হরিপুর গ্রামের এই মসজিদটির নাম ‘কাবিল ভূঁইয়া জামে মসজিদ’ মসজিদটি একটি গ্রামকে তথা একটি এলাকাকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলছে। ওই মসজিদের নির্মাণশৈলীর কথা দূরদূরান্তের মানুষের কানে পৌঁছে গেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীরা আসছেন মসজিদটি দেখার জন্য। মসজিদটির নাম ‘কাবিল ভূঁইয়া জামে মসজিদ’। ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের উত্তর হরিপুর গ্রামে কাবিল ভূঁইয়া বাড়ির সামনে অবস্থান মসজিদটির। ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের বাংলাবাজার থেকে আঁকাবাঁকা পথে ওই মসজিদে যেতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। গত বুধবার মসজিদের সামনে পৌঁছাতেই এর অন্যন্য নির্মাণশৈলীতে মুগ্ধ হতে হলো। দূর থেকে মসজিদের সামনের অংশ দেখতে অনেকটা টেলিভিশন আকৃতির মনে হয়। মসজিদটি দুইতলাবিশিষ্ট ভবন। এর সুউচ্চ বিশেষ ধরনের মিনারটি মসজিদটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদের সামনে কথা হয় স্থানীয় সত্তোরোর্ধ ব্যক্তি এরশাদ উল্যাহ ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি কাবিল ভূঁইয়া বাড়িরই বাসিন্দা। তিনি শোনালেন মসজিদটির ইতিহাস। বললেন, মসজিদটি শতবর্ষী। ছোটবেলায় দেখেছেন, সেখানে গ্রামের একাধিক সমাজের লোকজন পবিত্র জুমার নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। একসময় টিনের ঘর করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর ছাদ ঢালাই করে একতলা মসজিদ ভবন নির্মাণ করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদ ভবনটি জরাজীর্ণ হতে থাকে। তখন মসজিদের সভাপতি মো. দিলদার হোসেন ভূঁইয়াসহ সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বৈঠকে মসজিদ ভবনটি দোতলা দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। প্রাথমিকভাবে মসজিদের নির্মাণের জন্য ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয় বলে জানালেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ বেলাল ভূঁইয়া। তিনি জানালেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় নতুন আঙ্গিকে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে কাজ করে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় নির্মাণকাজ শেষ হয়। গত ২১ জুলাই পবিত্র জুমার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান। মসজিদটির সামনে দিয়ে গেছে একটি গ্রামীণ পাকা সড়ক। তারপর মসজিদ বরাবর সোজা একটি পুকুর। মসজিদের ঠিক সামনেই পুকুরপাড়ে একটি ছোট আমগাছ। সড়ক থেকে সোজা মসজিদে প্রবেশপথে রেলিং দিয়ে বেষ্টনী করা হয়েছে। বেষ্টনীর দুই পাশ দিয়ে ৮টি সিঁড়ি পেরিয়ে মসজিদে ঢুকতে হয়। আরও পড়ুন স্বামীর স্মরণে স্ত্রীর গড়া মসজিদটি ২০০ বছর আগের মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. দিলদার হোসেন ভূঁইয়া জানালেন, চার শতক জায়গার ওপর এ দোতলা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। নিচতলা ও দোতলা মিলে এ মসজিদে একসঙ্গে ৫০০ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। তিনি জানালেন, এ মসজিদ স্থাপত্য নকশা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক স্থপতি মো. রাশিদুল হাসান। তাঁরই তত্ত্বাবধানে একজন উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়মিত তদারকি করেছেন নির্মাণকাজের। মসজিদ নির্মাণে এ যাবৎ প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। অনেকের অনুদানে নির্মিত মসজিদটিতে ইটের তেমন কোনো কাজ হয়নি। পাথরের ঢালাই ও কাচ দিয়েই কাজ শেষ করা হয়েছে। তিনি জানান, মসজিদ নির্মাণের আগে গ্রামীণ এ সড়কটি কাঁচা ছিল। মসজিদের কাজ শেষ হওয়ার পর সড়কটিও পাকা করা হয়েছে। এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন। কিছুদিন আগেও পরপর দুইবার ঢাকা থেকে ড্রোন ক্যামেরা নিয়ে বেশ কয়েকজন মসজিদ দেখতে আসেন। ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তাঁরা অনেক উঁচু থেকে ছবি তোলেন, ভিডিও করেন। স্থানীয় বাসিন্দা মো. শহীদুল্লাহ এসব কথা জানিয়ে বললেন, অনেক দর্শনার্থী আসেন, যাঁরা মসজিদের সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি নামাজ আদায় করেন এখানে। কীভাবে যেতে হয় ফেনী শহরের কলেজ রোড বা ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালের মোড় থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে ফেনী-ছাগলনাইয়া সড়ক হয়ে বাংলাবাজার। বাংলাবাজারের অদূরেই এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।