গাজায় বিশ্বের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে

গাজায় বিশ্বের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে
গাজায় বিশ্বের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে

আলজাজিরা ডেস্ক
গাজায় বিশ্বের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে

গাজার ইজরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই যুদ্ধ যে নির্মম এবং বিশ্বে মানবিক ব্যর্থতার একটি উদাহরণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চলতি সপ্তাহে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কি এই যুদ্ধ নিয়ে কোনো কথা বলবেন? এই অসম যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তারা কি কোন পদক্ষেপ নেবেন? আজকে আমরা বিশ্বের যে নৈতিক পরাজয় দেখছি তাতে ভবিষ্যতের জন্যও আমি শঙ্কিত।

গত ১৩৮ দিনে গাজায় যা ঘটেছে এই বর্বরতা কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনাযোগ্য নয়। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে বহু মানুষ। সম্পূর্ণ একটি জনপদ যেন মাটিতে মিশে গেছে। কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তীব্র শীতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।

খাদ্যের জোগান নেই, প্রায় ৫ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে। খাবার, পানি, স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশনসহ মৌলিক চাহিদাগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে। একটি সমগ্র জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। গাজার জনগণের ওপর যে নৃশংসতা চলছে সাহসী প্যালেস্টাইনি সাংবাদিকরা তা বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন। আর এটি করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক হত্যার শিকারও হয়েছেন। অথচ এই সব কিছু দেখেও কোনো কিছু না দেখার ভান করে আছে সবাই।

অনেকে অন্ধত্বের ভান ধরে থাকলেও এই নৃশংসতা বন্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। গাজার উদ্ধাস্তুদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার সময় এখন পর্যন্ত ১৬০ জন মানবাধিকারকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তার পরেও আমাদের দলগুলো খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং নিরাপদ পানি পৌঁছে দিতে সংকল্পবদ্ধ। আমাদের নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে, প্রবেশের সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা সত্ত্বেও আমরা যা যা করতে পারি তার সবই করছি।

ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের বদনাম করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং জাতিসংঘের বৃহত্তম মানবিক সংস্থা থেকেও আমরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমি যে মানবাধিকার সংস্থায় কাজ করি আমাদের একমাত্র পরিকল্পনাসমগ্র গাজাজুড়ে সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সবকিছু করা। আমাদের সামনে অনেক বাধা রয়েছে, অনিরাপত্তা রয়েছে, তবুও আমরা বসে থাকতে পারি না। আমরা নৈতিকভাবে পরাজয় বরণ করতে চাই না।

ইসরায়েলের ওপর ৭ অক্টোবরে যে হামলা হয়েছিল তা অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু তা গাজার প্রতিটি শিশু, নারী ও পুরুষের সঙ্গে যা ঘটছে তাকে ন্যায্যতা দিতে পারে না। জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে আমার বার্তাটি পরিষ্কার। আমরা গাজায় দখলদার শক্তি ইসরায়েলের কাছে অনুরোধ করছি যে মানবাধিকার কর্মীরা গাজার অবরুদ্ধ মানুষদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে তাদের হামলার লক্ষবস্তু করা না হোক। আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বাধ্যবাধকতাগুলি সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।

সেইসব দেশ যারা জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে তাদের কাছে আমরা অনুরোধ করি যেন তারা তাদের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেয়। আমি জি-২০ এর আমন্ত্রিতদের কাছে আহ্বান জানাই আপনারা আপনাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং প্রভাব ব্যবহার করে এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং গাজার জনগণকে বাঁচাতে সাহায্য করুন। না হলে গাজায় বিশ্বের যে নৈতিক পরাজয় ঘটেছে তা ভাবষ্যৎ হবে আরও সংশয়ের।

মার্টিন গ্রিফিথস : জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটার

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, প্রথম সময়  কর্তৃপক্ষের নয়