১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেয়ে সামিয়ার পরিবার খুশি।
সাবরিনা আক্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের সামিয়া আক্তারের ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করে পরিবারের অস্বচ্ছলতা দূর করে পাশে দাঁড়ানো। সেই ইচ্ছা থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ১২০ টাকা জমা দিয়ে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে আবেদন করেন। তবে বিনা ঘুসে চাকরি হবে তিনি কখনো কল্পনাও করেননি। তার বাবা আবু কালাম পেশায় একজন খেলনা বিক্রেতা। মা লিপি আক্তার গৃহিণী। আভাব অনটনের সংসারে অভাব সব সময় থাকে। মেধাবী সামিয়া পরিবারের অভাব অনটন গোছাতে স্বপ্ন দেখেন পুলিশের চাকরি করবেন। সেই সুবাদে টিআরসি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন সামিয়া। পরে তাকেসহ ৭১ পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশের আয়োজনে পুলিশ লাইন্স মাল্টিপারপাস শেডে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান পুলিশ সুপার শুধু তিনি নন, তার মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার ৬০ জন পুরুষ ও ১১ জন নারীর সরকার নির্ধারিত ফি ১২০ টাকার বিনিময়ে চাকরি হয়েছে। বাঞ্ছারামপুর থেকে টিআরসি পদে সামিয়া বাদে আরও দুইজন চাকরি পেয়েছেন। তারা হলেন- পাহাড়িয়াকান্দি ইউনিয়নের ওলুকান্দি গ্রামের রহিস উদ্দিনের ছেলে আল সিফাত এবং সলিমাবাদ ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে আরিফুল ইসলাম। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলার টিআরসি পদে ১ হাজার ৭৩৮ জন আবেদন করেন। আবেদন যাচাই-বাছাই করে ৭১ জনের শূন্যপদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে ১ হাজার ২৩৮ জন প্রার্থী শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। এ পরীক্ষা শেষে ৪৬৩ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ৪৬১ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষার জন্য ২৮৯ জন উত্তীর্ণ হন। মৌখিক পরীক্ষায় ২৮৯ অংশ নেওয়াদের মধ্যে চূড়ান্তভাবে ৭১ জনকে (৬০ জন ছেলে ও ১১ জন মেয়ে) মনোনীত করে জেলা টিআরসি-২০২৪ নিয়োগ বোর্ড। কেন পুলিশের চাকরি নিয়েছেন জানতে চাইলে সামিয়া বলেন, আমার বাবা একজন খেলনা বিক্রেতা। ঠিকমতো আমার পড়াশোনার খরচও দিতে পারেন না। অনেক কষ্ট করে আমাদের পরিবারের দেখভাল করেন। আমি আমার বাবার কষ্ট লাঘব করতে চিন্তা করতাম- ভালো একটি চাকরি পেলে পরিবারের পাশে দাঁড়াব। আমি বিশ্বাসও করতে পারিনি মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পাব। আজ আমি আনন্দে আত্মহারা- আমি আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারব। আমি প্রধানমন্ত্রী এবং জেলা পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানাই ১২০ টাকায় আমি চাকরি পেয়েছি। কাউকে কোনো ঘুস দিতে হয়নি। এ ব্যাপারে সামিয়ার বাবা আবু কালাম বলেন, আমার মেয়ে মাত্র ১২০ টাকায় চাকরি পাবে কখনো চিন্তা করিনি। প্রধানমন্ত্রী ঘুস ছাড়া চাকরির সুযোগ করে দিয়েছেন বলেই আমার মেয়ে চাকরি পেয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ নেক হায়াত কামনা করি। সামিয়ার মা লিপি আক্তার আক্তার বলেন, আমার মেয়ে ১২০ টাকায় আবেদন করে পুলিশের চাকরি পেয়েছে। এতে আমি অনেক আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই ঘুসবিহীন আমার মেয়েকে চাকরির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।