বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

বাংলাদেশের  গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

বিগত সাড়ে ১৫ বছরে দেশে অসংখ্য গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সম্পৃক্ততা মিলেছে। শনিবার গুমের ঘটনা তদন্তে সরকারের কমিশন তাদের প্রথম প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। সেখানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। কমিশন গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুসহ র‌্যাব বিলুপ্তিরও সুপারিশ করেছে।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের গুম কমিশন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শীর্ষক প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে কমিশন সদস্যরা এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৭৬টির মধ্যে ৭৫৮টির অভিযোগ যাচাই-বাছাই করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

, গুমের নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এ ছাড়া তাঁর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও হারুন অর রশীদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন।

কমিশনপ্রধান বলেন, গুমের সঙ্গে জড়িতরা কাজটি এমনভাবে করেছেন, যাতে পরে শনাক্ত করা কঠিন হয়। বিভিন্ন ফোর্স নিজেদের মধ্যে ভিকটিম বিনিময় করেছে এবং পরিকল্পনা ভিন্ন ভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করেছে। গুমের শিকার অনেকে এখনও শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না। ভয়াবহ নির্যাতনের কারণে তারা ট্রমায় ভুগছেন।
বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টা গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও সঠিক বিচারের আশ্বাস দেওয়ার পরই রিপোর্টের সংখ্যা অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে কমিশনের সদস্যরা ড. ইউনূসকে আয়নাঘর পরিদর্শনের অনুরোধ জানান। তারা বলেন, আপনি (ড. ইউনূস) আয়নাঘর পরিদর্শন করলে ভিকটিমরা অভয় পেতে পারেন।

সম্মতি দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি আয়নাঘর নামে পরিচিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল দেখতে যাবেন। প্রতিবেদনের জন্য কমিশন সদস্যদের ধন্যবাদ এবং কাজটি এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

মইনুল চৌধুরী জানান, তিন মাস পর মার্চে তারা আরেকটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে এক বছর লাগবে।

এ সময় কমিশনের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ প্রমুখ।

আওয়ামী লীগের বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য ব্যক্তিকে গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠলেও তৎকালীন সরকার বারবার অস্বীকার করেছে। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতন হলে বেশ কয়েকজন আয়নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাশেম আরমান, দলটির সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী ও ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা।

২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও গুমের ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখতে ২৭ আগস্ট সরকার এক প্রজ্ঞাপনে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে