স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
সোহাগ সামী:
স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
বৈষম্যবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে এ আহ্বান জানান ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
ড. ইউনূস বলেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এই দেশ আমাদের সকলের। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশ সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের ভাগ্য উন্নয়ন এবং সমান অধিকার সুনিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বাংলাদেশের সকল নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন
বেনামে অঢেল সম্পদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদের
স্বজন, এপিএস ও ব্যবসায়িক অংশীদারের নামে কিনে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তাঁর এমন বেনামে অঢেল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা ইউনিট ও দিনাজপুর জেলা কার্যালয়।
সূত্র জানায়, তিনি দিনাজপুর জেলা এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ক্ষমতার প্রভাবে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি এবং দলীয় পদ দেওয়ার নামে কামিয়েছেন এসব টাকা।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম জানান, ওই প্রতিমন্ত্রীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলমান আছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুদক জানতে পারে, প্রতিমন্ত্রী হাজার কোটি টাকা লন্ডনে পাচার করেছেন সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) বাশারের মালিকানায় নেওয়া এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার মাধ্যমে। প্রতিমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় বোচাগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ফেনসিডিল ও টাপেনটাডল নামের মাদক চোরাচালানের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী তুহিন।
গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের সঙ্গে আত্মগোপনে চলে যান খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তার সঙ্গে আত্মগোপনে গেছেন তার একান্ত অনুসারীরাও।
ঠাকুরগাঁয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা জানান, ৫ আগস্টের পর লাশের গাড়িতে করে উপজেলার বৈরচুনা ইউনিয়নে পৌঁছান। এর পর ভবানীপুরের সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
দুদক সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রী দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় এপিএস বাশারের মাধ্যমে টেনা গ্রামে নামে-বেনামে ৩০০ বিঘা জমি কেনেন। এ ছাড়া কালুপীর বাজারের পাশে মসলাবাটি নামক স্থানে ১৫০ বিঘার ওপর পুকুরের সঙ্গে করেছেন খামারবাড়ি। কালুপীর বাজারে কয়েক কোটি টাকার জমি, দোকান ও গোডাউন করেছেন। পার্শ্ববর্তী উপজেলা পীরগঞ্জের ৫ নম্বর সৈয়দপুর ইউনিয়নে ৯০ বিঘা জমির ওপর আমবাগান, পীরগঞ্জ উপজেলায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ৫৮ শতাংশ জমি, বোচাগঞ্জের সেতাবগঞ্জ বাজারে কয়েক কোটি টাকার ১ হাজার ৭৪১ শতাংশ জমি, বিরল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রমাকান্তের মাধ্যমে স্থলবন্দরের পাশেই ৩৮৬ শতাংশ জমিসহ শত শত কোটি টাকার বালুবাণিজ্য রয়েছে। দিনাজপুর শহরে ৫টি প্লট রয়েছে। জেলার পুনর্ভবা নদী থেকে প্রতিমন্ত্রীর অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণে ছিলেন রমাকান্ত। এ ছাড়া জোহুরা অটোরাইস মিলের মালিক আবদুল হান্নান তার একাধিক ম্যানেজারের নামে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শত শত বিঘা জমি কিনেছেন। ওইসব জমির কয়েক গুণ বেশি দাম দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে বন্ধক রেখে খালিদ মাহমুদের প্রভাবে শত কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন আবদুল হান্নান। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর বেনামে ঢাকার লালমাটিয়া, আদাবর, শেখেরটেক, মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি, বাবর রোড ও হুমায়ুন রোডে রয়েছে ১৩টি ফ্ল্যাট এবং বছিলা ও ঢাকা উদ্যানে ৫ শতাংশ করে কয়েকটি প্লট।
গত ২ সেপ্টেম্বর সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তার স্ত্রী, সন্তান ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
শারদীয় দুর্গোৎসব : সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১ মণ্ডপে প্রস্তুতি
দেবীর বোধন ও ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। তিথি অনুযায়ী আজ বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মন্দির ও মণ্ডপে বোধনের ঘট স্থাপন করা হবে। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে।
এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর কালের কণ্ঠকে জানান, গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আজ সকাল ৮টা ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ হবে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এবারের আয়োজনের মধ্য রয়েছে দেবীর বোধন (পঞ্জিকার লগ্ন অনুযায়ী প্রতিমা স্থাপনে বেদী প্রতিষ্ঠা), আমন্ত্রণ ও অধিবাস, সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক সংগীত পরিবেশনসহ নানা অনুষ্ঠান।
এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৫২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজা কমিটির সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জয়ন্ত কুমার দেব জানান, যেখানে খোলা জায়গায় অস্থায়ী প্যান্ডেলে দুর্গাপূজা করা হবে, সেখানে সরকার নির্দেশিত বিধি-বিধান মেনে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে পূজা আয়োজন করতে হবে। প্রতিমা নির্ধারিত দিনেই বিসর্জন দিতে হবে। বিসর্জনের দিন শোভাযাত্রায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।
সারা দেশে পূজামণ্ডপের সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা জানান, প্রস্তুতি নিয়ে অপারগ হওয়ায় এবং বন্যার কারণেও দুর্গত এলাকায় কোথাও কোথাও এবার পূজার আয়োজন করা হয়নি। তিনি বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন সেনাপ্রধান। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
পুলিশের পাশাপাশি মাঠে থাকবে র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী
বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থায় আসন্ন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এবার পূজামণ্ডপকে কেন্দ্র করে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। ফলে এবারের পূজা খুব ভালোভাবে হবে। কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না।
গতকাল সকালে গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন ও মতবিনিময়ের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাব্যবস্থায় প্রতিবার তো পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকে, এবার বাড়তি হিসেবে বিজিবি ও সেনাবাহিনী যুক্ত হয়েছে।
এদিকে আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় কোনো থ্রেট নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান। তিনি বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় মণ্ডপ এলাকা, বিসর্জন শোভাযাত্রা ও বিসর্জনের সময় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। তবে এ সময় সব ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে সব ধরনের পটকা ও আতশবাজি ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাহী আদেশে বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি
বিশেষ প্রতিনিধি জানান, আগামী ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে এবারের দুর্গাপূজায় টানা চার দিন ছুটি উপভোগের সুযোগ পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে পুজামণ্ডপ মনিটরিং হবে
হিন্দু সম্প্রদায় থেকে যে সিকিউরিটি কনসান্স দেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে সরকার বিশেষভাবে কাজ করছে। আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে পূজা মণ্ডপগুলো ইউএনও অফিস ও থানা মনিটরিং করবে।
গতকাল রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য জরুরি সেবা ৯৯৯ বিশেষ একটি টিম কাজ করবে। পুলিশ ও র্যাবের টহল থাকবে। গোয়েন্দা সংস্থার একটি বিশেষ টিম কাজ করবে।