বড়লোকদের বাসায় বাসায় গিয়ে ৪ কেজির

বড়লোকদের বাসায় বাসায় গিয়ে ৪ কেজির

সোহাগ সামী::

‘বড়লোকেরা গোশত ফ্রিজে রাখে, আমাদের দেয় হাড্ডি-চর্বি’

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। মুসলমানদের জীবনে ঈদুল আজহা খুশির দিন হলেও নিম্নবিত্ত, দরিদ্রদের জন্য এটি আক্ষেপের, হতাশার। বিত্তবানরা একাধিক পশু কোরবানি দিতে পারলেও অনেকে শেষ কবে মাংস খেয়েছেন বলতে পারেন না। এমনই আপেক্ষের সুরে এক নারী বলেন, ‘গরীবদের কেউ ভালোবাসে না, কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না। শেষ কবে গোশত খেয়েছি মনে নেই।’

এই ঈদে একটু গোশত পাওয়ার আশায় জামালপুর থেকে থেকে ঢাকা এসেছেন ৬৫ বছর বয়সী ওই নারী সুফিয়া খাতুন। সারাদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে যে গোশত সংগ্রহ করেছেন তাতে তার আরও কষ্ট বেড়েছ

অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, ‘সবাই গোশত ফ্রিজে রাখে, আমাদের দেয় না। আমরা গোশত চাইলে হাড্ডি-চর্বি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।’

‘যে আশা নিয়ে এসেছি তা পূর্ণ হলো না। সারাদিনে দুই কেজি গোশতও পাইনি। যেখানে যাই তারা এক টুকরো, দুই টুকরো গোশত দেয়। আবার কেউ বলে গোশত শেষ, অন্য জায়গায় যান’, বলেন তিনি।

তেজগাঁও সাতরাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে সুফিয়া খাতুন আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘গতকাল রাত থেকে এখনও ভাত খাইনি। ভেবেছিলাম গোশত নিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে খাবো।’

তিনি বলেন, আমরা অনেকেই জামালপুর থেকে কষ্ট করে এসেছি। সবাই এখন খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছি। কারো আশাই পূরণ হয়নি আমাদের।

বড়লোকদের বাসায় বাসায় গিয়ে ৪ কেজির মাংস পেয়েছি। অর্ধেক ঘরে রেখে এসেছি। বাকি মাংস বিক্রির টাকায় তেল আর মসলা নেব। স্বামী-সন্তান নেই। নিজে কাজ করে খাই। গরুর মাংস খাওয়া হয় না মেলা দিন।আজকে দুই টুকরো খাব। কথাগুলো বলছিলেন মাসুদা নামে এক নারী। 

রাজধানীর মগবাজার ওয়ারলেস গেটে রেললাইনের ওপরে ঈদের দিন বিকেল থেকেই বসেছে মাংসের হাট। এই হাটে তিনি মাসুদার মতো অনেকেই এসেছিলেন মাংস বিক্রি করতে। এখানে কোনো পশু জবাই করা না হলেও সস্তা দরে মিলছে গরু-ছাগলের মাংস। চাটাইয়ের ওপর মাংস সাজিয়ে ক্রেতার জন্য হাকডাকও করছেন বিক্রেতারা। কেউ ওজন মাপার মেশিন দিয়ে কেজি দরে আবার কেউ ভাগা করে বিক্রি করছেন। হাটে কিছুক্ষণ পর পর গরু-ছাগলের মাংস নিয়ে আসছেন একের পর এক বিক্রেতা। আর এ মাংস কেনার জন্য বিকেল থেকেই জটলা করছেন সাধারণ ক্রেতারা

এই হাটের একজন বিক্রেতা বগুড়ার জহুরুল ইসলাম। মাংসের দোকানে তাদের কয়েকজনের শেয়ার। শেয়ারের অংশীদাররা কেউ ক্রেতার জন্য হাক ডাকছেন, কেউ বা ক্রেতার ব্যাগে মাংস ভরে দিচ্ছেন। আবার কেউ মাংস বিক্রির টাকা নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের মাংসের দোকানে ওজন মাপার মেশিন বা কোন বাটকারা নেই। ২৫০ টাকা ভাগায় বিক্রি করছেন এসব মাংস। 

জহুরুল ইসলাম পরথম সময়কে বলেন, ‘ঈদের আগের দিন আটজনসহ আমি ঢাকায় এসেছেন। এসে সারাদিন বিভিন্ন লোকের কোরবানির গরু-ছাগলের মাংস কেটেছি। দিনশেষে কোরবানির মাংস মিলেছে প্রায় ৩০ কেজি। এ মাংসের মধ্যে আবার ভালো মাংসের সঙ্গে আছে মাথা, লেজ আর চামড়ার মাংস। আজকেই বাড়ি যাব কিন্তু এসব মাংস সঙ্গে করে নিয়ে যেতে যেতে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ভাগা করে বিক্রি করছি।’ 

এই হাটে মাংস কিনতে এসেছেন রফিকুল মিয়া। তিনি বলেন, বড়োলোকেরা কোরবানি দিয়ে মাংস ঘরে ঢুকিয়েছে। বাড়ির গেট দিয়ে আবার কেউ কয় টুকরো করে মাংস দিচ্ছে। সারাদিন রিকশা চালিয়ে আর সেখানে যাইনি। এই হাটে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা দরের মাংস আছে। যেমন মাংস তেমন দাম। ৩৫০ টাকা কেজি করে ৩ কেজি মাংস নিয়েছি। পরিবারসহ খাব।’ 

সালাউদ্দিন নামে আরেকজন ভ্যানচালক হাতিরঝিল থেকে এসেছিলেন মাংস কিনতে। তিনি বলেন, এখানে প্রতিবছর কোরবানির দিন হাট বসে। এই হাটে কম দামে গোশত পাওয়া যায়। তাই এবারও এসেছি। 

জসিমউদদীন বলেন, ‘গরু কাটার কাজ করেছি। সেখানে মাথা, চামড়া আর লেজ থেকে কিছু মাংসের সঙ্গে ভালো মাংস পেয়েছি। মাথা ও লেজের মাংসের দাম ৩০০ টাকা কেজি আর ভালো মাংসের দাম ৬০০ টাকা কেজি। ছাগলের মাংস ৭০০ টাকা কেজি। যা আছে সবাই বিক্রি করে রাতেই বাড়ি চলে যাব