দেশ কেন এখন। কেন সংবিধানের পথে
কেন সংবিধানের পথে
সরকার কেন সংবিধানের পথে হাঁটল, সে ব্যাপারেও ব্যাখ্যা দেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট তাঁকে সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ডাকা হয়। তিনি গিয়ে দেখেন, সেখানে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরাও সেখানে ছিলেন। সংবিধানের পথে যাত্রার সিদ্ধান্ত ছিল সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ৭ আগস্ট ছাত্র আন্দোলেনর নেতারা বসে উপদেষ্টা কারা হবেন, ঠিক করেছেন। কেউ তখন বিপ্লবী সরকার গঠনের কথা বলেননি। সাংবিধানিক পথে যাওয়াটা ভুল হয়ে থাকলে, এটি সবার ভুল।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন যে কেন শহীদ মিনারে শপথ নিলাম না, কেন বিপ্লবী সরকার হলো না, কেন সাংবিধানিক পথে গেলাম।... এখন আপনি দেখবেন, কোনো কোনো মানুষ, তাঁরা পৃথিবীর সবকিছু জানেন। তাঁদের একজন সম্পর্কে মনির হায়দার বললেন, ‘আসিফ ভাই, মনে হয় তাঁকে “জাতির পিতা” না বানিয়ে দেওয়া পর্যন্ত থামবে না। অথবা তাঁকে জাতির পিতা বানিয়ে দিলেও সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ সবাইকে ধৈর্য ধরার এবং সহিষ্ণু হওয়ার আহ্বানও জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ঐক্য না থাকলে সব শেষ হয়ে যাবে। ভিন্নমত থাকবে; কিন্তু অনৈক্য থাকলে হবে না। ঐক্য থাকলে বিজয়ী হওয়া যাবে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জাহেদ উর রহমান চৌধুরী বলেন, সংস্কার দরকার আছে; কিন্তু অল্প সময়ে সংস্কার করে দেশকে অসাধারণ করে ফেলা হবে, এটা হবে না। এ ধরনের কথা মাঠে এনে সংঘাত তৈরি করা হচ্ছে।
সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ছাত্ররা তাঁদের নিয়োগকর্তা। সরকারেও ছাত্রদের প্রতিনিধি আছেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা কার কাছে অভিযোগ করছেন? সাংবাদিক সাহেদ আলম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে একটি সেতু তৈরি করার আহ্বান জানান।
‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করলে তা প্রতারণা হবে’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ এবং বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করার দাবি জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী করার ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবী, আমলা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও গণমাধ্যমের একটা অংশ ভূমিকা রেখেছিল। সরকার পতনের পরও সেই শ্রেণি ক্ষমতায় রয়ে গেছে। তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেওয়াটা একটি ভুল।
সব জায়গা থেকে আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করতে হবে উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমা চাইতে হবে। তারপর তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য বিচার করতে হবে। এর আগে কোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করলে তা প্রতারণা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে দায়িত্ব নিয়েছি, এই দায়িত্ব সম্পন্ন না করা পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক চাপ, কোনো প্রশাসনিক চাপ, নতুন করে যদি কোনো ফ্যাসিবাদ শক্তি জেগে ওঠে—সেটার চাপ এবং আন্তর্জাতিক কোনো চাপ, এগুলোতে আমরা মাথা নত করব না।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, হাতবদল হয়ে পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। প্রতিটি জায়গায় সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেট এক হাত থেকে আরেক হাতে গেছে। আগের সিন্ডিকেটও এখনো কিছু ভাগ পায়। আবার মামলা বাণিজ্যও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিভাজন শুরু হয়েছে। যে দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করা হয়েছে, তার জন্য অপেক্ষা না করে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে।
দেশ খারাপ দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে। সব বাদ নিয়ে শুধু নির্বাচন দিলে হবে না। তিনি মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার দুর্বল অবস্থায় আছে। আন্দোলনে হতাহত ব্যক্তিদের প্রতিও অন্তর্বর্তী সরকার সঠিক দায়বদ্ধতা দেখাতে পারেনি। তিনি বলেন, আবার জাতীয় ঐক্য দরকার। নাহলে এর খেসারত দিতে হবে।
অন্যদের মধ্যে আইনজীবী সাইয়েদ আব্দুল্লাহ, আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহবুবুর রহমান, ব্রেইনের নির্বাহী সদস্য সাদিক মাহবুব বক্তব্য