ইতালির নির্বাচন: কট্টর ডানপন্থী জর্জা মেলোনিক নিয়ে বিজয়।

ইতালির নির্বাচন: কট্টর ডানপন্থী জর্জা মেলোনিক নিয়ে  বিজয়।
ইতালির নির্বাচন: কট্টর ডানপন্থী জর্জা মেলোনিক নিয়ে  বিজয়।

সোহাগ সামী:

জর্জা মেলোনি (বামে) নির্বাচনে জয়ী হলেন সিলভিও বারলুসকোনি (মাঝে) এবং ম্যাটিও স্যালভিনির (ডানে) সঙ্গে একটি ডানপন্থী সরকার গঠনের আশা করেন।

ইতালির মানুষ আজ এমন এক নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে যার ফলাফল দেশটিতে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

এই ভোটের আগে পরিচালিত জনমত জরিপ বলছে, কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক জর্জা মেলোনি এবং তাঁর দল 'ব্রাদার্স অব ইতালি' বড় জয় পেতে পারে, এবং মিজ মেলোনি ইতালির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে এত কট্টর ডানপন্থী কোন দল এর আগে ক্ষমতার এত কাছাকাছি আসেনি।

'ব্রাদার্স অব ইতালি' খুবই ডানপন্থী এবং বিতর্কিত এক দল, যাদের সঙ্গে ইতালির নব্য নাৎসীবাদী আন্দোলনের সম্পর্ক রয়েছে।

প্রায় পাঁচ কোটি ভোটার নির্বাচনে ভোট দেয়ার উপযুক্ত। নির্বাচনের ভোট নেয়া হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত, তবে এই ভোটের চূড়ান্ত ফল জানতে বেশ সময় লাগবে, কারণ ইতালিতে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টনের পদ্ধতিটি বেশ জটিল

 জরিপে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে, বলা হচ্ছে দলটি প্রায় ২৫ শতাংশ ভোট পেতে পারে।

জর্জা মেলোনির বয়স ৪৫ বছর। মাত্র দশ বছর আগে ২০১২ সালে তিনি ব্রাদার্স অব ইতালি দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে তিনি সিলভিও বারলুসকোনির সরকারে সবচেয়ে কম বয়সে মন্ত্রী হয়েছিলেন।

তরুণ বয়সে তিনি ইতালির নব্য নাৎসীবাদী আন্দোলনের যুব শাখায় যোগ দেন। বেনিতো মুসোলিনির সমর্থকরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিল। গত বছর তিনি নিজের এক বইতে দাবি করেন, তিনি ফ্যাসিস্ট নন। তবে নিজেকে তিনি মুসোলিনির উত্তরসূরিদের সঙ্গেই চিহ্নিত করেছেন। তিনি বার বার ইতালিতে মুসলিম অভিবাসীদের আগমনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

জর্জা মেলোনি যে ডানপন্থী জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাতে আরও আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনির দল 'ফরজা ইতালিয়া' এবং আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাতিও সালভিনির দল 'লিগ পার্টি'।

মিজ মেলোনি সাম্প্রতিক সময়ে তার অনলবর্ষী কট্টর ডানপন্থী ভাবমূর্তি কিছুটা নরম করে এনেছেন। ইতালির ফ্যাসিবাদী অতীত ইতিহাসের সঙ্গে তার দলের সম্পর্ক নিয়ে ইঙ্গিত করা হলে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ হন

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, মিজ মেলোনি তা সমর্থন করেন। একই সঙ্গে ইউরোপের ব্যাপারে তার কড়া কথাবার্তা তিনি সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমিয়েছেন।

কিন্তু তিনি এরপরও এমন এক পুরোনো শ্লোগান বেছে নিয়েছেন, যা ছিল ফ্যাসিবাদীদের শ্লোগান- "ঈশ্বর, পিতৃভূমি এবং পরিবার।" তিনি 'এলজিবিটি লবি'র বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং লিবিয়ার বিরুদ্ধে এক নৌ-অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন যাতে সেই পথে ইউরোপে কোন অভিবাসী আসতে না পারে।

আরও পড়ুন:

ইতালির এই নির্বাচনের দিকে ইউরোপের অনেক দেশই শংকিত নজর রাখছে। অর্থ এবং শেয়ার বাজারেও বিরাজ করছে নানা ধরনের শংকা। ইতালি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। কিন্তু দেশটি ঋণের ভারে জর্জরিত।

ইউরোপীয় নেতারা এখনো পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে একটা ঐক্যবদ্ধ অবস্থান বজায় রাখতে পেরেছেন। কিন্তু নির্বাচনে যদি জর্জা মেলোনির দল জেতে, তাহলে ইতালি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে অনেকের মনে আশংকা আছে।

ভিক্টর ওবানের নেতৃত্বে হাঙ্গেরি যেভাবে কট্টর ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নানা বিষয়ে বিরোধপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে, ইতালি সেই পথে হাঁটতে পারে, এমন আশংকা করেন অনেকে