বাংলাদেশ ঋণের জন্য বারবার চীনের দ্বারস্থ হয় কেন?

বাংলাদেশ ঋণের জন্য বারবার চীনের দ্বারস্থ হয় কেন?

বাংলাদেশ ঋণের জন্য বারবার চীনের দ্বারস্থ হয় কেন?

চীন বাংলাদেশের জন্য একক বৃহত্তম ঋণদাতা দেশ। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে ২৩০ কোটি ডলার ঋণ কিংবা সহায়তা নিয়েছে চীনের কাছ থেকে। একটি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত চার বছরে বাংলাদেশে তিন বিলিয়ন ডলার সহায়তা এসেছে চীন থেকে। এদিকে, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে বেইজিং গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছেন, বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় পাঁচশ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বেইজিংয়ের দিক থেকে ঘোষণা আসতে পারে এবং এই ঋণ চীনা মুদ্রায় দেওয়ার ওপরই জোর দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন জেগেছে বাংলাদেশ ঋণের জন্য বারবার চীনের দ্বারস্থ হয় কেন? এর উত্তরও পাওয়া গেছে নানা সমীকরণ মিলিয়ে।

সাধারণত বড় বড় প্রকল্প কিংবা অর্থনৈতিক সংকটের সময় চীনের কাছ থেকেই গত দেড় দশক ধরে সহায়তা পেয়ে আসছে বাংলাদেশ এবং অধিকাংশ বড় প্রকল্পের অর্থ যোগানের ক্ষেত্রে এখন চীনকেই বিবেচনা করা হয়। চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রাম টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেছে চীনা কোম্পানি। প্রায় শেষ হয়েছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট' বা এইআই গত বছর যে ধারণা দিয়েছিল তাতে বাংলাদেশে মোট চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল সাত বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এছাড়া চীনের কয়েকটি কোম্পানি বিভিন্ন খাতে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের নির্মাণ কার্যাদেশ পেয়ে কাজ সম্পন্ন করেছে কিংবা এখনও করছে।

বাংলাদেশের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও এখন সংসদের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রধান আব্দুল মান্নান বলছেন, চীনের কাছ থেকে আর্থিক বা প্রকল্পগত সহায়তা চাওয়ার কারণ হলো চীন কখনও ‘অন্যের ওপর কিছু চাপিয়ে দেয় না’। চীন উদীয়মান বিশ্ব সেরা অর্থনীতি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত রাজনৈতিক যোগাযোগ, অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার কারণেই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে চীনা সহায়তা চেয়ে থাকে।

চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, সুদের হার, শর্ত, প্রযুক্তি এবং কম খরচ হবে - এসব চিন্তা করেই বাংলাদেশ প্রকল্পগুলোর জন্য চীনের সহায়তা প্রত্যাশা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইড ডাটার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এখন চীনই বাংলাদেশের জন্য একক বৃহত্তম ঋণদাতা দেশ।

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে ২৩০ কোটি ডলার ঋণ কিংবা সহায়তা নিয়েছে চীনের কাছ থেকে। একটি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত চার বছরে বাংলাদেশে তিন বিলিয়ন ডলার সহায়তা এসেছে চীন থেকে।

প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরেও একটি মেট্রোরেল রুট-সহ আরও কয়েকটি রেলওয়ে প্রকল্প এবং কয়েকটি সেতু নির্মাণ বা সংস্কারের বিষয়ে সমঝোতা হবে বলে বাংলাদেশ আশা করছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, চীন চাইলে আলোচনা হবে বহুল আলোচিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও